আলমুস্তাক্বীম

  • Home
  • আলমুস্তাক্বীম

আলমুস্তাক্বীম ইসলামী তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ, বিশুদ্ধ ইসলামী আক্বীদা বিষয়ক বার্ষিক পত্রিকা

14/07/2024
ওযূ করতে গিয়ে পা ধোয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েননি এরকম মানুষ পাওয়া কঠিন। আবার বয়স্কদের জন্য নীচে ঝুকে পা ধোয়াও বেশ কষ্টকর হয়। ...
12/09/2023

ওযূ করতে গিয়ে পা ধোয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েননি এরকম মানুষ পাওয়া কঠিন। আবার বয়স্কদের জন্য নীচে ঝুকে পা ধোয়াও বেশ কষ্টকর হয়। এমনি সমস্যার সমাধানে বগুড়ার সজল সিরামিকস একটি বেসিন তৈরী করেছে যাতে একইসাথে দাঁড়িয়ে হাত, মুখ ও পা ধোয়ার ব্যবস্থা আছে। কারণ সাধারণ বেসিনে হাত, মুখ ধোয়া যায় কিন্তু পা ধোয়ার ব্যবস্থা থাকে না। এটা মাথায় রেখেই এই সুন্দর বেসিনটি তৈরি করা হয়েছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার জন্য বেসিনটি হ’তে পারে একটি আদর্শ উপহার।

30/07/2023

বিবাহ-শাদীর প্রচলিত ভুলসমূহঃ
-- মুফতী মানসুরুল হক দাঃবাঃ

বিবাহ-শাদী মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে বিশেষ নে‘আমত হিসাবে দান করেছেন। বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিবাহ-শাদী দুনিয়াবী কাজ বা মুবাহ মনে হলেও যথা নিয়মে সুন্নাত তরীকায় যদি তা সম্পাদন করা হয় তাহলে সেটা বরকতপূর্ণ ইবাদত ও অনেকে সওয়াবের কাজ হয়। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার দাম্পত্য জীবন সুখময় হয়। কিন্তু বর্তমান সমাজে বিবাহ-শাদী সুন্নত তরীকায় তো হয়ই না। উপরন্তু এটা বিভিন্ন ধরনের কুপ্রথা এবং বড় বড় অনেক গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে পারিবারিক জীবনে অশান্তির ঝড় বয়ে চলছে। এজন্য নিম্নে বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত কিছু ভুল এবং কুপ্রথা তুলে ধারা হল। যাতে এগুলো থেকে বাঁচা হয়।

বিবাহের পূর্বের ভুলসমূহঃ
১. বিবাহ শাদী যেহেতু ইবাদত, সুতরাং এখানে দীনদারীকে প্রাধান্য দিতে হবে। দুনিয়াদারগণ সৌন্দর্য, মাল, দৌলত ও খান্দানকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এটা রাসূলের সুন্নাতের বিপরীত হওয়ায় শান্তি বয়ে আনে না।
২. কোন কোন জায়গায় অভিভাবক এবং সাক্ষী ছাড়া শুধু বর কনের পরস্পরের সন্তুষ্টিতেই বিবাহের প্রচলন আছে। অথচ এভাবে বিবাহ বিশুদ্ধ হয় না। বরং এটি যিনা-ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও যদি মেয়ে পক্ষের অভিভাবকের সম্মতি না থাকে, আর ছেলে সে মেয়ের “কুফু” তথা দীনদারী মালদারী ও পেশাগত দিক থেকে সামঞ্জস্যশীল না হয় তাহলে সে বিবাহও শুদ্ধ হয় না।
৩. কেউ কেউ ধারণা করে যে মাসিক চলাকালীন সময় বিবাহ শুদ্ধ হয় না। অথচ এ অবস্থায়ও বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। অবশ্য এ অবস্থায় সহবাস জায়িয নেই।
৪. কেউ কেউ ধারণা করে যে মুরীদনীর সাথে পীর সাহেবের বিবাহ জায়িয নেই। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ সকলেই তাঁর মুরীদনী ছিলেন।
৫. অনেকে অনেক বয়স হওয়ার পরও বিবাহ করে না কিংবা প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বা সে মৃত্যু বরণ করার পর আর ২য় বিবাহ করে না। অথচ শারীরিক বিবেচনায় তার বিবাহ করা জরুরী ছিল। এ অবস্থায় থাকা মানে যিনা-ব্যভিচারে জড়িত হওয়ার রাস্তা খুলে দেয়া।
৬. অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় (উদাহরণ স্বরূপ) ৬০ বছরের বয়স্ক লোক অল্প বয়সী যুবতী মেয়েকে বিবাহ করে বসে। ফলে ঐ মেয়ে নিশ্চিত জুলুমের শিকার হয়।
৭. অনেকে স্ত্রীর খেদমতে অক্ষম হওয়া সত্ত্বেও দুর্বলতা লুকিয়ে লোক দেখানোর জন্য বিয়ে করে স্ত্রীর জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। এটা মারাত্মক গুনাহের কাজ।
৮. কোন কোন আধুনিক শিক্ষিত লোক আধুনিক শিক্ষা তথা ডাক্তারি প্রফেসারি ইত্যাদি ডিগ্রি দেখে মেয়ে বিয়ে করে। তাদের ভাবা উচিৎ বিয়ের দ্বারা উদ্দেশ্য কী? যদি তার স্ত্রীর দ্বারা টাকা কামানো উদ্দেশ্য হয় তাহলে এটা তো বড় লজ্জাজনক কথা যে, পুরুষ হয়ে মহিলাদের কামাইয়ের আশায় বসে থাকবে। মনে রাখতে হবে এধরণের পরিবারে শান্তি আসে না।
৯. কেউ কেউ পালক পুত্রের তালাক দেয়া স্ত্রী বিবাহ করাকে না জায়িয মনে করে। এটা জাহিলী যুগের বদ-রসম।
১০. কেউ কেউ বিধবা মহিলাদের বিবাহ করাকে অপছন্দ করে। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধিকাংশ স্ত্রী বিধবা ছিলেন। (বুখারী হাঃ নং ৫০৭৭)

বিবাহের সময়ের ভুলসমূহ–
বর পক্ষের ভুলসমূহ–
১. বিবাহ শাদী যেহেতু ইবাদত, সুতরাং বিবাহকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার গুনাহ না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে খায়ের বরকত লাভ হবে। যদি বিবাহকে গুনাহ মুক্ত করা না যায় তাহলে সেখানে অশান্তি হওয়া নিশ্চিত।
২. প্রথাগতভাবে অনেক লোকের বর যাত্রী হিসেবে যাওয়া।
৩. দাওয়াতকৃত সংখ্যার অধিক লোক নিয়ে যাওয়া।
৪. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কন্যার জন্য যৌতুক পাঠানো এবং এটাকে জরুরী মনে করা।
৫. গায়রে মাহরাম পুরুষ দ্বারা মেয়ের ইজন বা অনুমতি আনা।
৬. বেগানা পুরুষদের কন্যার মুখ দেখা এবং দেখানো।
৭. নাচ-গান, বাজনা ইত্যাদি করা।
৮. সালামী গ্রহণ করা।
৯. মোহরানা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পূর্বেই না করা, বরং করাকে দোষ মনে করা। অতঃপর বিবাহের সময় তর্ক-বিতর্ক করা।
১০. লোক দেখানোর জন্য বা গর্বের সাথে ওলীমা করা।
১১. মোহরানার বিষয়ে গুরুত্ব না দেয়া এবং মোহরানা আদায়ে গাফলতী করা।
১২. ইচ্ছাকৃত এমন কর্মকাণ্ড করা যে কারণে কোন পক্ষের অদূরদর্শিতা প্রমাণিত হয় অথবা তাদের অস্থিরতার কারণ হয়। আর নিজেদের সুনাম প্রকাশ পায়।
১৩. বিবাহ অনুষ্ঠানের কারণে ফরয ওয়াজিবসহ শরী‘আতের বিধানের ব্যাপারে উদাসীনতা এবং অনীহা প্রকাশ করা।

কন্যা পক্ষের ভুলসমূহ—
১. বর যাত্রার চাহিদা।
২. ছেলের জন্য উপঢৌকন/যৌতুক প্রকাশ্যে পাঠানো, পাঠানোকে পছন্দ করা এবং জরুরী মনে করা।
৩. আত্মীয়-স্বজন মহল্লাবাসীদের জন্য প্রথাগত দাওয়াত এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৪. বিবাহের সরঞ্জাম, অলংকারাদী প্রকাশ্যে দেখা এবং অন্যদেরকে দেখানো।
৫. বিবাহের পর রসম হিসাবে জামাতাকে শরবত পান করানো।
৬. বেগানা মহিলারা জামাতার সামনে আসা।
৭. সালামী গ্রহণ করা। এটাকে জরুরী মনে করা এবং নেয়া দেয়া।
৮. যাতে মহল্লায় খুব প্রসিদ্ধ হয় সে জন্যে ইচ্ছাকৃত কোন কিছু করা।
৯. ফরয-ওয়াজিব ইত্যাদি বিষয়ে উদাসীন হওয়া। এছাড়াও বিবাহ উপলক্ষে অনেক বেপর্দা, যুবক যুবতীদের অবাধ মেলা-মেশা, অপব্যয়, ছবি এবং ভিডিও ইত্যাদি করা হয়, যাতে বিবাহের সকল খায়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়।

বিবাহের কিছু কুপ্রথা–
১. মেয়ের ইযিন আনার জন্য ছেলেপক্ষ স্বাক্ষী পাঠিয়ে থাকে, শরী‘আতের দৃষ্টিতে এর কোন প্রয়োজন নেই।
২. বিবাহের সময় অনেকে বর-কনের দ্বারা তিনবার করে ইজাব কবূল পাঠ করিয়ে থাকে এবং পরে তাদের দ্বারা আমীন বলানো হয়। শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।
৩. ইজাব কবূলের মাধ্যমে আকদ সম্পাদন হওয়ার পর মজলিসে উপস্থিত সকলকে লক্ষ্য করে সামনে দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে বর যে সালাম করে থাকে তারও কোন ভিত্তি নেই।
৪. ঝগড়া-ফাসাদের আশংকা থাকা সত্ত্বেও খেজুর ছিটানোকে জরুরী মনে করা হয়। অথচ এ সম্পর্কিত হাদীসকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম যঈফ বলেছেন।

বিবাহ শাদীর আরো কতিপয় কুসংস্কার–
১. অনেক জায়গায় বিবাহ রওয়ানা হওয়ার আগে এলাকার প্রসিদ্ধ মাযার যিয়ারত করে তারপর রওয়ানা হয়। শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই।
২. বরের নিকট কনে পক্ষের লোকেরা হাত ধোয়ানোর টাকা, পান পাত্রের পানের সাথে টাকা দিয়ে তার থেকে কয়েকগুণ বেশী টাকা জোর যবরদস্তী করে আদায় করে থাকে। এটা না জায়িয।
৩. অনেক জায়গায় গেট সাজিয়ে সেখানে বরকে আটকে দেয়া হয় এবং টাকা না দেয়া পর্যন্ত ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এটাও একটা গর্হিত কাজ।
৪. খাওয়া দাওয়া শেষে কনে পক্ষের লোকেরা বরের হাত ধোয়ায়। পরে হাত ধোয়ানো বাবদ টাকা দাবী করে। অনেক জায়গায় এ নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এটা একেবারেই অনুচিত। মূলতঃ এসব হিন্দুয়ানী প্রথা। দীর্ঘ দিন যাবত হিন্দুদের সাথে বসবাস করার কারণে আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারগুলি অনুপ্রবেশ করেছে।
৫. বিবাহ পড়ানোর আগে বা পরে যৌতুকের বিভিন্ন জিনিস-পত্র প্রকাশ্য মজলিসে সকলের সামনে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এটাও অন্যায় ও নির্লজ্জতার কাজ।
৬. বিবাহের পরে নারী-পুরুষ সকলের সামনে কনের পিতা বা মাতা জামাই-মেয়ের হাত একসাথে করে তাদেরকে দু‘আ দেয়। কনের পিতা জামাইকে বলে “আমার মেয়েকে তোমার হাতে সঁপে দিলাম, তুমি এক দেখে শুনে রেখ” এর কোন ভিত্তি শরী‘আতে নেই।
৭. বিবাহ করে আনার পর শ্বশুর বাড়ীতে নববধূকে বিভিন্ন কায়দায় বরণ করা হয়। কোথাও ধান, দুবলা ঘাস, দুধের স্বর ইত্যাদি দিয়ে বরণ করা হয় এবং নববধূর চেহারা সকলকে দেখানো হয়; এসবই হিন্দুয়ানী প্রথা। কোন মুসলমানের জন্য এসব করা জায়িয নেই।
৮. অনেক জায়গায় মেয়ের বিয়ের আগের দিন আর কোথাও মেয়ে শ্বশুর বাড়ী যাওয়ার পরের দিন মেয়ের বাড়ী থেকে ছেলের বাড়ীতে মাছ-মিষ্টি ইত্যাদি পাঠানো হয়ে থাকে। কোথাও এটাকে চৌথি বলা হয়। এটাও বিজাতীয় নাজায়িয প্রথা।
৯. বর বা কনেকে কোলে করে গাড়ী বা পালকী থেকে নামিয়ে ঘরে তোলাও চরম অভদ্রতা বৈই কিছু নয়।
১০. ঈদের সময় বা অন্য কোন মৌসুমে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে চাল, আটা, ময়দা, পিঠা ইত্যাদি পাঠানো এবং এ প্রচলনকে জরুরী মনে করার প্রথা অনেক জায়গায় চালু আছে। আবার অনেক জায়গায় আনুষ্ঠানিকভাবে জামাইকে এবং তার ভাই-বোনদেরকে কাপড়-চোপড় দেয়ার প্রথা আছে। এমনকি এটাকে এতটাই জরুরী মনে করা হয় যে, ঋণ করে হলেও তা দিতে হয়। এটা শরী‘আতের সীমালঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়।
১১. আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠানে বেগানা মহিলাদের সাজ-সজ্জা করে নিজেকে বিকশিত করে একত্রিত হতে দেখা যায় এবং যুবক যুবতীদের অবাধ মেলা-মেশা করতেও দেখা যায়। এধরনের বেপর্দা আর বেহায়াপনার কারণে উক্ত মজলিসে উপস্থিত নারী পুরুষ সকলেই গুনাহগার হবে।
১২. বিবাহ উপলক্ষে গান-বাজনা, ভিডিও, ভিসিআর ইত্যাদি মহামারী আকার ধারণ করেছে। আর কোন কোন এলাকায় তো যুবতী তরুণী মেয়েরা একত্রিত হয়ে নাচ গানও করে থাকে। শরী‘আতের দৃষ্টিতে এসব হারাম ও নাজায়িয।
১৩. আজকাল বিবাহ অনুষ্ঠান মানেই গুনাহের ছড়াছড়ি। এমন এমন গুনাহ সেখানে সংঘটিত হয় যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ছবি তোলা ও ভিডিও করা। শরী‘আতের দৃষ্টিতে কোন প্রাণীর ছবি তোলা চাই ক্যামেরার মাধ্যমে হোক কিংবা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক বা অংকন করা হোক সবই হারাম।
১৪. বিবাহের পরে মেয়েকে উঠিয়ে দেয়ার আগ মুহূর্তে মেয়ের বাড়ীতে পাড়া-প্রতিবেশী মেয়েরা একত্রিত হয়, আর বরকে অন্দর মহলে এনে সকলে মিলে হৈ হুল্লা করে তার মুখ দর্শন করে। মেয়েরা হাসি মজাক করে বিভিন্ন উপায়ে নতুন দুলাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আর নির্লজ্জ হাসি তামাশায় মেতে উঠে। এধরনের বেপর্দেগী শরী‘আতের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
১৫. অনেক জায়গায় প্রথা চালু আছে যে, নববধূকে বর নিজে বা তার ভগ্নীপতি অথবা তার ছোট ভাই পালকী বা গাড়ী থেকে নামিয়ে কোলে করে ঘরে নেয়। তারপর উপস্থিত মহল্লাবাসীর সামনে নববধূর মুখ খুলে দেখানো হয়। এ সকল কাজ হারাম এবং নাজায়েয।

(মাসিক আদর্শ নারী)

07/07/2023

যেসব পুরস্কার নিয়ে ফেরেন হাজিরা👇

পবিত্র হজব্রত পালন শেষে দেশে ফিরছেন হাজিরা। অশ্রুসিক্ত নয়নে দেশে ফিরলেও পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনায় পড়ে থাকছে তাঁদের মন।হজ পালনে তাঁদের অর্থ ব্যয়, পরিশ্রম, দীর্ঘ সফর ও মক্কা-মদিনার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসার কারণে আল্লাহ তাঁদের খালি হাতে ফেরাবেন না। ঈমান, নিয়ত ও নিষ্ঠার কারণে যাঁদের হজ কবুল হয়েছে, আল্লাহ তাঁদের অসংখ্য পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।ফলে তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বহুবিদ পুরস্কার নিয়ে আপন ঘরে ফিরছেন।যেসব পুরস্কার নিয়ে ফেরেনসম্মানিত হাজিরা আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব পুরস্কার নিয়ে দেশে ফিরছেন, তার কয়েকটি হলো—
১. পাপমুক্তি : হজ মানুষকে পাপমুক্ত করে। যদিও ব্যক্তির পাপের পরিমাণ অনেক বেশি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করল এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে সেদিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিল।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫২১)
২. বিপুল পুণ্য : আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করাকে সর্বোত্তম আমল মনে করি, তবে কি আমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করব না? আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জন্য উত্তম সংগ্রাম হচ্ছে কবুল হজ। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৮৪) হাদিস বিশারদরা বলেন, এর দ্বারা হজের বিনিময়ে বিপুল পরিমাণ পুণ্য অর্জন করা উদ্দেশ্য।
৩. জান্নাতের ঘোষণা : মহানবী (সা.) হজ পালনকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ওমরাহর পর আরেক ওমরাহ—উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের (গুনাহের) জন্য কাফফারা। আর জান্নাতই হলো কবুল হজের প্রতিদান। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩)
৪. প্রাচুর্য : হজ ও ওমরাহ মুমিনের জীবনে প্রাচুর্য বয়ে আনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরাহ আদায় কোরো। কেননা এ দুটি ধারাবাহিকভাবে আদায় করলে তা দারিদ্র্য ও গুনাহ দূরীভূত করে, যেমন হাঁপর লোহার মরিচা দূর করে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৮৭)
৫. দোয়া কবুলের ঘোষণা : আল্লাহ হজ ও ওমরাহ পালনকারীর দোয়া কবুল করেন। এটা তাঁদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরাহর যাত্রীরা আল্লাহর প্রতিনিধিদল। তারা তাঁর কাছে দোয়া করলে তিনি তাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁর কাছে মাফ চাইলে তিনি তাদের ক্ষমা করেন। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯২)
৬. আল্লাহর নিরাপত্তা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় (নিরাপত্তায়) থাকে : এক. যে ব্যক্তি কোনো মসজিদের উদ্দেশে বের হয়, দুই. যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে বের হয়, তিন. যে ব্যক্তি হজ করতে বের হয়। ’ (মুসনাদে হুমাইদি, হাদিস : ১০৯০)
৭. সর্বোত্তম আমল : রাসুলুল্লাহ (সা.) হজকে পৃথিবীর সর্বোত্তম আমলগুলোর অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সর্বোত্তম আমল হলো, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা, অতঃপর আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা, এরপর কবুল হজ। এগুলো পৃথিবীর সমস্ত আমলের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। ’ (সহিহুল জামে, হাদিস : ১০৯২)
৮. উচ্চ মর্যাদা : আল্লাহ হজ আদায়কারীকে উচ্চ মর্যাদা দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হাজির উট পা উঠালে বা নামালে বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য পুণ্য লেখেন বা তার পাপ মোচন করেন অথবা মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। ’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৪১১৬)
৯. সুস্থতা : হজে গিয়ে হাজিরা জমজমের পানি পান করেন। আর এ পানিতে আল্লাহ বহু রোগের আরোগ্য রেখেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে সর্বোত্তম পানি জমজম কূপের পানি। তাতে আছে তৃষ্ণার তৃপ্তি ও রোগের আরোগ্য। ’ (সহিহুত তারগিব, হাদিস : ১১৬১)
১০. আল্লাহর প্রশংসা : জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং হাজিদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করে বলেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকাও, তারা আমার কাছে আসছে এলোমেলো চুলে, ধুলাবালি গায়ে, আহাজারি করতে করতে দূর-দূরান্ত থেকে উপস্থিত হয়েছে। আমি তোমাদের সাক্ষী করে বলছি, আমি তাদের মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলে, হে প্রতিপালক, অমুক বান্দাকে তো বড় গুনাহগার বলে অভিহিত করা হয় এবং অমুক পুরুষ ও নারীকেও। তিনি (সা.) বলেন, আল্লাহ তখন বলেন, আমি তাদেরও ক্ষমা করে দিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনের চেয়ে এত বেশি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়ার মতো আর কোনো দিন নেই। ’ (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২৬০১)

হজ-পরবর্তী জীবন যেমন হবেপ্রাজ্ঞ আলেমরা হজের পর হাজিদের জীবন কেমন হবে তা বর্ণনার সময় বলেন, হাজিরা নিম্নোক্ত সংকল্পগুলো করবেন। যেমন—
১. যে চোখ দিয়ে আল্লাহ কাবা দর্শনের তাওফিক দিয়েছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা দেখিয়েছেন সে চোখ দিয়ে গুনাহ করব না।
২. আল্লাহর রহমতের প্রতি আশা রেখে বলা যায়, তিনি আমার হজ কবুল করেছেন এবং এর বদৌলতে আমাকে নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ করেছেন। ইনশাআল্লাহ! আমি পাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করব। কোনো গুনাহ হয়ে গেলেও তাৎক্ষণিক তাওবা-ইস্তিগফার করে নেব।
৩. বিদায় হজের বিভিন্ন স্থানে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে যেসব গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন তার সব কিছু মনে-প্রাণে মানব এবং তার ওপর অটল থাকব।
৪. আমার হজটি কবুল হলো কি না—এটা তো কেবল আল্লাহই জানেন। তবে এর একটি বাহ্যিক নিদর্শন হলো, হজের পর দ্বিনদারি ও ঈমানি অবস্থার উন্নতি হওয়া। সুতরাং নিজের দ্বিনদারির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং তা উন্নতির চেষ্টা করা।৫. মহান আল্লাহ যখন তাঁর ঘর দেখা ও জিয়ারত করার তাওফিক দিয়েছেন, তখন এই নেয়ামতের মর্যাদা রক্ষা করা। আল্লাহর অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ পর্যন্ত তাঁর শোকর আদায় করতে থাকা।আল্লাহ সবার হজ কবুল করুন। আমিন

দূরের রওজা পাকে পাঠানো হয়আমার চুপিচুপি পঠিত সালাম;তাই খুব নির্জনেও লব জপে—‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’।আনিসুর_রহমান_...
09/10/2022

দূরের রওজা পাকে পাঠানো হয়
আমার চুপিচুপি পঠিত সালাম;
তাই খুব নির্জনেও লব জপে—
‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’।

আনিসুর_রহমান_হাসান

মানুষের দুটি হাতেই রয়েছে আল্লাহর নামজীবনে হাতের ব্যবহার খুব বেশি। যার হাত নেই কেবল সে-ই বুঝেন হাত যে কী অমূল্য সম্পদ। হা...
03/06/2022

মানুষের দুটি হাতেই রয়েছে আল্লাহর নাম

জীবনে হাতের ব্যবহার খুব বেশি। যার হাত নেই কেবল সে-ই বুঝেন হাত যে কী অমূল্য সম্পদ। হাত নিয়ে অনেক বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন আমরা পড়েছি। যেমন- ডান হাতের কাজ/ বাম হাতের কাজ, ডান দল/ বাম দল, উপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম, হাত টান ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, তোমাদের উপর যে বিপদ-মুসিবত আসে তা তোমাদের দুই হাতের অর্জন।’ বাংলা কবিতাতেও পাওয়া যায় হাতের ব্যবহার। যেমন, কবি সুফিয়া কামাল প্রার্থনা কবিতায় লিখেন, তুলি দুই হাত/ করি মুনাজাত/ হে রহিম, রহমান। এমনকি চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হাতের তালুতে রয়েছে মানবদেহের সুইচবোর্ড। যা আকু পাংচার বা আকু প্রেসার পদ্ধতি থেকে জানা যায়। হাতের এত এত ব্যবহার দেখেছি কিন্তু খোঁজিনি তাতে আল্লাহর নিদর্শন। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, এখন আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে। (সূরা হামিম সেজদা : ৫৩)। তিনি আরও বলেন, বিশ্বাসীদের জন্যে পৃথিবীতে রয়েছে নিদর্শন এবং তোমাদের নিজেদের মধ্যেও তোমরা কি অনুধাবন করবে না। (সূরা যারিয়াত : ২০, ২১)। আর এজন্যেই বোধয় সস্প্রতি মানুষের শ্বাসনালী (ট্রাকিয়া) ও ডান ফুসফুস নালীর (ব্রংকাস) সিটি স্ক্যান (কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি স্ক্যান) করে দেখা গেছে তাতে আরবি হরফে লেখা রয়েছে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহুম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.। এ সত্য আবিস্কার করেন একজন জার্মান ডাক্তার। পরে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। (মাসিক পৃথিবী, ডিসেম্বর ১৯৯০, পৃ. ৪৯)। মানবদেহ নিয়ে গবেষণা চলবে অনন্তকাল। সত্যিকারের ঈমানি অনুভূতি নিয়ে মানবদেহে গবেষণা চালালে আরও নিদর্শন হয়তো বেরিয়ে আসবে। হাদিসে এসেছে, যে নিজেকে চিনতে পেরেছে, সে তার রবকে চিনতে পেরেছে।

আজ আমি শুধু দুটি হাত নিয়েই কথা বলব। ডান হাতের কনিষ্ঠা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগ একত্র করে তর্জনী, মধ্যমা ও অনামিকা আঙ্গুলিত্রয় সোজা দাঁড় করিয়ে রাখলে চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে উঠবে আরবি হরফে লেখা আল্লাহু শব্দটি। খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন (চিত্র : ১)। আবার ডান হাতের পাঁচটি আঙুল সোজা রেখে পিঠের অংশ চোখের সামনে মেলে ধরলে দেখা যাবে স্পষ্ট আরবিতে আল্লাহু শব্দটি লিখা রয়েছে (চিত্র : ২)। কয়েকবার চেষ্টা করুন। আসলেই খুব মজার বিষয়। তা থেকে অনুমিত হয় সত্যিই এতে রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার স্পষ্ট নিদর্শন? এরপর ডান হাতটা চোখের সামনে মেলে ধরুন। আপনি অবশ্যই লক্ষ্য করবেন হাতের তালুতে বিশেষ রেখার মাধ্যমে আরবি ১৮ সংখ্যাটি রয়েছে (চিত্র : ৩)। এবার বাম হাতটা মেলে ধরুন। দেখতে পাবেন আরবিতে ৮১ সংখ্যাটি লিখা রয়েছে (চিত্র : ৪)। দুটি সংখ্যার যোগফল নির্ণয় করলে যে সংখ্যাটি পাওয়া যায় তাহলো ৯৯। আমরা সবাই জানি মহান আল্লাহ পাকের ৯৯ টি সুন্দর নাম রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে বক্তি এ নামগুলো মুখস্থ করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (বুখারী)।

কুরআন-সুন্নাহর প্রতি বিশ্বাস নেই এমন কেউ যদি প্রশ্ন করেন, মহান আল্লাহ যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা তা কোথায় লেখা আছে? এর জবাবে আমরা এই মার্কসগুলো প্রদর্শন করতে পারি। এই পৃথিবীতে গুণগত মান সম্পন্ন যতো পণ্য রয়েছে, তার সব কটিতে সারিবদ্ধ অনেকগুলো লম্বালম্বি সরলরেখা লক্ষ্য করা যায়। এগুলিকে বলা হয় বারকোড নম্বর। খালি চোখে দেখা গেলেও তার মিনিংস অনুধাবন করা অসম্ভব। কম্পিউটারের একটি ডিভাইস রয়েছে যার নাম বারকোড রিডার। এই বারকোড রিডার পণ্যের গায়ে শো করলে এর প্রস্তুতকারক, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, মূল্যসহ সব কিছু প্রদর্শন করে। ঠিক তদ্রুপ আমরা ধরে নিলাম মানুষের শরীরে এই বিশেষ চি‎হ্নগুলি বারকোড নম্বরের মতো। তাই, আল্লাহকে চেনার জন্যে মানুষের দুটি হাতই যথেষ্ট নয় কী? চক্ষুস্মানগণ, একটু ভাবুনত। আমরা কিভাবে এই হাত দিয়ে পাপকার্য সম্পন্ন করি? আর কিভাবে মানুষ মানুষের ক্ষতি করে? অথচ হাদিস শরিফে এসেছে, হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, সেই ব্যক্তি মুসলিম, যার জিহবা এবং হাত থেকে অপর ব্যক্তি নিরাপদ। (তিরমিযি ও নাসায়ি)। মহান আল্লাহ পাক তার নিদর্শন গুলিকে চেনার তাওফিক দিন।

লেখক : ইসমাইল হোসেন মুফিজী
প্রভাষক (আরবি), মাথিয়া ই. ইউ. ফাযিল মাদ্রাসা, কিশোরগঞ্জ।

02/04/2022

দেশের আকাশে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। আজ থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু...

09/02/2022

এক নির্ভীক স্কুল ছাত্রীর পর্দার বিধান পালনের গল্প৷

স্কুল থেকে ফিরে ফারীহার মন ভীষণ খারাপ। মায়াবী দু’চোখ জুড়ে দুশ্চিন্তার ছাপ। পেলবতায় ভরা মুখটাও কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। ফারীহার মা হৃদয়ের দর্পণে মেয়ের চেহারা দেখে নিলেন। তিনি মন খারাপের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। ফারীহা বলল, ‘আম্মু! তানযীলা ম্যাডাম বোরক্বা পরার কারণে প্রতিদিন আমাকে বকা দেয়, আমাকে বোরক্বা খুলে ক্লাস করতে বলে। আর আজ বলে দিয়েছেন, আগামীকাল থেকে যদি আবার বোরক্বা পরে স্কুলে যাই, তাহ’লে আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিবেন।

সব শুনে কিছুটা থমকে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত গলায় মা বললেন, ‘আম্মু! যে আল্লাহ তোমাকে সুন্দররূপে সৃষ্টি করেছেন, সেই আল্লাহই তোমার জন্য পর্দা ফরয করেছেন, তোমাকে বোরক্বা পরতে বলেছেন। তাই তুমি তাঁর ইচ্ছাতেই বোরক্বা পরেছ। তোমার ম্যাডামের ইচ্ছাতে নয়। তোমার ম্যাডাম তো তোমার মতই আল্লাহর সৃষ্টি, যিনি তোমার কোন উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখেন না। এখন তুমিই সিদ্ধান্ত নাও যে, তুমি আল্লাহর আনুগত্য করবে নাকি তোমার ম্যাডামের আনুগত্য করবে? ফারীহা নির্ভীকভাবে বলে ওঠে, অবশ্যই আমি আল্লাহর আনুগত্য করব মা!

পরের দিন ফজরের আযান শুনে ঘুম ভাঙ্গল ফারীহার। প্রতিদিনের মত আজকেও মায়ের সাথে ফজরের ছালাত শেষে কিছুক্ষণ কুরআন তেলাওয়াত করে পড়তে বসল। তারপর পড়াশোনা শেষ করে বোরক্বা পরেই স্কুলে গেল এবং ক্লাস শুরু করল।

নির্দিষ্ট সময়ে তানযীলা ম্যাডাম ক্লাস রুমে প্রবেশ করলেন। আজও দেখলেন বোরক্বা পরিহিত ফারীহাকে। রেগে অগ্নীশর্মা হয়ে গেলেন। বোরক্বাকে ভৎর্সনা করে এত কঠিন ভাষায় বকা-ঝকা করলেন যে, ফারীহা তা সহ্য করতে পারল না। দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। কিছুটা শান্ত হওয়ার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘ম্যাডাম! আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন আমাকে ও আপনাকে পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন, আর আপনি আমাকে তা থেকে নিষেধ করছেন! এখন আমাকে বলুন, আমি আল্লাহর আনুগত্য করব নাকি আপনার আনুগত্য করব?

ম্যাডাম! শিক্ষিকা ও গুরুজন হিসাবে আপনাকে আমি সম্মান করি। তাই বলে আল্লাহর অবাধ্যতা করে আপনি আপনার আদেশ মানতে কি আমাকে বাধ্য করবেন? দয়া করে আমাকে আল্লাহর অবাধ্যতা করতে বলবেন না। আপনি নির্দেশ দিলে আমি এ স্কুল ত্যাগ করতে পারি। কিন্তু আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এ ফরয বিধান পরিত্যাগ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

আল্লাহর ওয়াস্তে আপনার প্রতি আমার অনুরোধ- আল্লাহকে ভয় করুন! কেবল আমার জন্য নয়, আল্লাহ আপনার প্রতিও পর্দা ফরয করেছেন। আপনিও বোরক্বা পরে ক্লাসে আসা শুরু করুন। এতে আল্লাহ আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় আল্লাহর অবাধ্যতা করে চিরস্থায়ী আখেরাতকে ধ্বংস করবেন না।

ক্লাসের সবাই ফারীহার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কিন্তু নির্ভীক চিত্তে বিরতিহীনভাবে কথাগুলো বলে ফেলল ফারীহা।

সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া মেয়েটির আল্লাহভীরুতা, দ্বীনের প্রতি অবিচলতা ও বলিষ্ঠ বাক্যবাণে তানযীলা ম্যাডাম একদম চুপসে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ কোন কথাই বলতে পারলেন না। কেবল মাথা নীচু করে রইলেন। কিছুক্ষণ পর ফারীহাকে বললেন, আগামীকাল তোমার আম্মুকে আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে বলবে। তারপর আর কিছু না বলে কপালে ভাবনার ছাপ নিয়ে শ্রেণী কক্ষ থেকে বের হয়ে গেলেন।

পরদিন ফারীহার মা মেয়েকে সাথে নিয়ে স্কুলে আসলেন এবং অফিসে গিয়ে তানযীলা ম্যাডামের সাথে সাক্ষাৎ করলেন। ফারীহার মাকে দেখে ম্যাডাম দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, ‘গতকাল আপনার মেয়ে আমাকে যে শিক্ষা দিয়েছে, এ জীবনে কারও কাছে আমি এমন শিক্ষা পাইনি। আপনি আপনার মেয়েকে কতই না উত্তমরূপে গড়ে তুলেছেন। এই বয়সে আল্লাহর বিধান মানার ব্যাপারে তার দৃঢ়তা, অবিচলতা ও নির্ভীকতা দেখে আমি যার পর নেই বিস্মিত হয়েছি। আপনার মেয়ের প্রত্যেকটি কথা আমার হৃদয়ে গেঁথে গেছে। সে আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে, আমি স্কুল থেকে ফিরে এক মুহূর্তের জন্য স্থির হ’তে পারিনি। নিজের পাপের কথা চিন্তা করে ভীত-কম্পিত হয়েছি। নিজেকে মহা অপরাধী মনে হচ্ছে। ছালাত শেষে আমি তওবা-ইস্তেগফার পাঠ করে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছি। প্রতিজ্ঞা করেছি যে, আমি এখন থেকে শরী‘আতের সকল বিধি-বিধান ও আদেশ-নিষেধ পরিপূর্ণভাবে মেনে চলব। সাথে সাথে আপনার সন্তানের মত অন্যকেও মেনে চলার পরামর্শ দিব। কথাগুলো বলতে বলতে তানযীলা ম্যাডামের চোখ দু’টো অশ্রুসজল হয়ে গেল। ফারীহার চোখেও আনন্দাশ্রু চিক চিক করতে লাগল।

এরপর থেকে তানযীলা ম্যাডাম যেন ভিন্ন মানুষে পরিণত হ’লেন। নিজে পূর্ণ পর্দার সাথে বোরক্বা পরে স্কুলে আসেন। অন্য ছাত্রীদেরকেও উৎসাহিত করেন। দ্বীনের বিধি-বিধান পালনে সবসময় সবার চেয়ে যেন একধাপ এগিয়ে থাকেন।

শিক্ষা :

১. পরিবারই সন্তানদের সুশিক্ষার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় এবং পিতা-মাতা সন্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাই শৈশব থেকেই সন্তানের মধ্যে তাক্বওয়া ও দ্বীনী জ্ঞানের বীজ বপন করা আবশ্যক। তাহ’লে ভবিষ্যতে সেই বীজের চারা অঙ্কুরোদগম হয়ে এমন বৃক্ষে পরিণত হবে, যার শীতল ছায়ায় পরিবার, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে।

২. দ্বীনদার সন্তান গড়ে তোলার জন্য পিতা-মাতাকেও দ্বীনদার হওয়া যরূরী।

৩. দ্বীনের বিধান পালনে সকল বাধাকে সাহসের সাথে মোকাবেলা করতে হবে এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। জীবনের বাঁক-বাঁকে সবসময় দাওয়াতী মেজায নিয়ে চলতে হবে। দ্বীনের বিধান জানানোর ক্ষেত্রে নির্ভীক হ’তে হবে। সামান্য একটু হেদায়াতের বাণীই হয়তো কারো জান্নাতের পথ সুগম করে দিতে পারে। জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচাতে পারে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!

Address


Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আলমুস্তাক্বীম posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to আলমুস্তাক্বীম:

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share