29/10/2023
পুলিশের যে ভাইটি আক্রমণের শিকার হয়ে রাস্তায় মারা গেলো কালকে, তার জন্য অত্যন্ত ব্যথিত। ব্যথিত তার পরিবারের প্রতিও। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নিন্দনীয়। অনেকে এই ধরনের মৃত্যুকে সেলিব্রেট করেন, দুঃখিত আমি এটা পারি না। এই পুলিশ ভাইটির করুণ মৃত্যু দেখে খুশি হওয়ার কোন উপলক্ষ আমি পাই না। আমার বরং করুণা হয় এটা ভেবে যে ছোট পদে চাকরি করা একটা পুলিশ ওপরের জোর-জবরদস্তিমূলক হুকুম পালন করতে গিয়ে এভাবে চিরতরে হারিয়ে গেলো। যাদের কাজ করতে গিয়ে সে মাঠে নেমেছিলো, তাদের কোনকিছুই হবে না, কিন্তু এই মানুষটার করুণ মৃত্যু তার পরিবারকে তছনছ করে ফেলবে!
অনেকে দেখি শুধুমাত্র পুলিশের এই মৃত্যুকেই সমালোচনা করছে এবং এরজন্য দায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চাপাচ্ছে।
কিন্তু কথাটা হল এই দেশটাকে জাহান্নাম বানানোর পেছনে পুলিশের অবদান নাই? গতকাল শুধু একজন পুলিশই না, বিরোধীদলের একজন কর্মীও ( যুবদল) মারা গেছে। তাদেরও বহু হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
তো যারা শুধুমাত্র ওই পুলিশের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করছেন, তারা যুবদলের ওই কর্মীর মৃত্যুর জন্য কেন শোক প্রকাশ করছেন না? কেন সেটার প্রতিবাদ করছেন না? নাকি যুবদলের ওই কর্মীর পরিবার নাই? তাদের শোক নাই?
পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের কেন এই তীব্র ক্ষোভ, সেটা বুঝবার চেষ্টা করেছেন কখনও?
বিগত ১০ বছরে ১০ কোটি মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পুলিশকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব জানেন না? কত কত মায়ের ছেলে, সন্তানের বাবা গুম, খুন, অত্যাচারের শিকার হইছে জানেন না? মিথ্যা মামলা দিয়ে, হেফাজতে নানাভাবে নির্যাতন কারা করেছে? দেশটাকে পুলিশি রাষ্ট্র কীভাবে বানিয়ে ফেলা হয়েছে, জানেন না? পুলিশের অপকর্মগুলোর জবাব কে দিবে?
ইভেন গতকালের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাস্তাঘাটের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে বসিয়ে অবৈধভাবে ফোনচেক কারা করেছে? শতশত মানুষকে আন্দোলনের আগেই ভুয়া মামলা দিয়ে কারা গ্রেফতার করেছে? এমনকি বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে কারা বাধাগ্রস্ত করে হার্ড লাইনে নিয়ে গিয়েছিলো? তাদের ওপর নির্বিচার গুলি কারা চালিয়েছিলো?
এইগুলো তারা কেন করে? কোন আইনে তারা এমন করতে পারে? এই সাহস কীভাবে পেয়েছে তারা বিগত ১৫ বছরে, এই প্রশ্নটাও করা জরুরি নয় কি?
এগুলো প্রশ্ন না করে শুধুমাত্র একজনের প্রতি শোক জানানোটা খুবই পক্ষপাতিত্ব হয়ে যায়। এটাও প্রশ্ন করেন বিরোধীদলের লোকদের রাস্তায় আন্দোলনেই বা নামতে হচ্ছে কেন? বারবার ভোটচুরি করে ক্ষমতার প্রদর্শন করে যারা গদিতে বসে আছে, তাদেরকে বলেন ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন আয়োজন করতে। তাহলেই তো কারোই মাঠে নামার দরকার হয়না, আন্দোলনের দরকার হয়না। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু আপনারা যখন এগুলোর কোনটা নিয়েই কোন প্রশ্ন তুলবেন না, কোন কনসার্ন দেখাবেন না, শুধুমাত্র একজন পুলিশের করুণ মৃত্যু নিয়ে কনসার্ন দেখাবেন, এইটারে বলে হিপোক্রেসি এবং সুবিধাবাদী বয়ান।
( পুনশ্চ:আমি এমন একটা দেশ চাই যেখানে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, পুলিশ কারো পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত হবে না, আইনের বাইরে গিয়ে তারা কোন কাজ করবে না, রাষ্ট্রের সেবক হবে এবং গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকেরাও কোন সার্ভিসম্যানের ওপর অসংগত আচরণ করবে না বা তাদেরকে আক্রমণ করবে না। ক্ষমতার পালাবদল হবে, কে জিতলো সেটা বড় কথা নয়, হোক সেটা লীগ, দল বা অন্যকেউ, কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটা হতে হবে অবশ্যই জনগণের ভোটে। )
©Saiyed Abdullah