14/12/2022
মেয়েদের ফ্রিল্যান্সিং – মেয়েদেরও কী আসা উচিত এই ফ্রিল্যাসিং নাকি উচিত না।।।।।।।
বাংলাদেশের একদল ছেলেমেয়ে এখন প্রতিদিনই প্রায় এককোটি টাকা আয় করে ইন্টারনেটে ফ্রিল্যািন্সিং ও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে। কিন্তু এদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই ছেলে এবং বাকি মাত্র ৪ শতাংশ মেয়ে। এই হলো রেজিস্টার্ড ফ্রিল্যান্সারদের। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যারা কাজ করছেন, তাদের সংখ্যা ধরলে এই হার ১ শতাংশেরও কম
মেয়েদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং | আপনার নির্দিষ্ট কোন কাজে দক্ষতা আছে? ওয়েব ডেভেলপমেন্ট অথবা প্রোগ্রামিং কিংবা আপনি কি গ্রাফিক্স ডিজাইনার অথবা এনিমেশন নির্মাতা? নাকি এক্সপার্ট কনেন্ট রাইটার? অথবা অনলাইন কনসালটেলন্সি অথবা মার্কেটিংয়ে অভিজ্ঞতা আছে? আপনি যাই হোন না কেন, ইন্টারনেটে রয়েছে আপনার জন্য বিশাল এক কাজের বাজার। কেবল উপরের কোন কাজেই দক্ষ হতে হবে এমন নয়। বরং ফ্রিল্যান্সিং এর বিভিন্ন বিভাগে হাজারো কাজ অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং বর্তমান সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে এখন বেশ আলোচিত একটি বিষয়। বিশেষ করে তরুণ যুব সমাজের কাছে, যারা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থানের পথ গড়ে তুলতে চায়। ফ্রিল্যান্সিং এমনি একটি পেশা যেখানে যে কেউ তার মেধা দিয়ে শূন্য থেকে বেশ বড় সফলতা বয়ে আনতে পারে।
বাংলাদেশের একদল ছেলেমেয়ে এখন প্রতিদিনই প্রায় এককোটি টাকা আয় করে ইন্টারনেটে ফ্রিল্যািন্সিং ও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে। কিন্তু এদের মধ্যে ৯৬ শতাংশই ছেলে এবং বাকি মাত্র ৪ শতাংশ মেয়ে। এই হলো রেজিস্টার্ড ফ্রিল্যান্সারদের। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যারা কাজ করছেন, তাদের সংখ্যা ধরলে এই হার ১ শতাংশেরও কম।
কিন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই হার অনেক বেশি। কারণ ঘরে বসে নিজের সময় অনুসারে কাজ করার স্বাধীনতা আসলে মেয়েদের জন্য এক বড় দুনিয়ার উন্মোচনকারী সুযোগ। যদি তাই হবে, তাহলে বাংলাদেশের মেয়েরা কেন এই জগতে আসছে না? কেন অপার সম্ভাবনার এই ইন্টারনেট দুনিয়ায় মেয়েদের এত কম উপস্থিতী? আর কেনই বা ফ্রিল্যান্সিংএ মেয়েদের এত অনীহা? ইন্টারনেটে মেয়েদের এই পিছিয়ে থাকার কিছু লক্ষণীয় কারণ হচ্ছে:
১. মেয়েরা এই ব্যাপারে কম জানে
উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ অনেক কম। সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে মেয়েরা পড়াশোনা বেশিদূর চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না। যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রেই নারীরা অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়, সেখানে তারা প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পর্কেঅজ্ঞাত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
অথচ আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক মেধাবী। একটু সুযোগ পেলেই তারা পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় খাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। কিন্তু যথেষ্ট প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাবে আমাদের দেশের মেয়েরা ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে খুব কম জানে। যার ফলে প্রচণ্ড সম্ভাবনাময় এই খাতে তাদের উপস্থিতী তুলনামূলক কম। যা মোটেই কাম্য নয়।
২. তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক কম
“আমি কি পারবো?” বা “লোকে কি বলবে?” একবিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগে এসেও এই চিন্তুগুলো অধিকাংশ মেয়েদের মধ্যে রয়ে গেছে। ফলে যেকোন কাজ শুরুর পূর্বে এই নেতিবাচক ধারণাগুলো তাদের সফল হতে দেয় না। বর্তমানে অনেক মেয়ে সফল ফ্রিল্যান্সার আছে। আমাদের এই উপমহাদেশে বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানে প্রচুর পরিমাণে মেয়ে ফ্রিল্যান্সার রয়েছে, যার দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সাথে ফ্রিল্যান্সিং করছে।
তাই সবার আগে আত্মবিশ্বাস আনাটা জরুরী অন্য সবাই পারলে আপনিও পারবেন। তারা যেভাবে পারিবারিক অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এ বেশ ভালো সফলতা অর্জন করছে, ঠিক একই কাজ আপনার দ্বারাও সম্ভব।
৩. কীভাবে শুরু করবে তা জানে না
অনেক মেয়েদেরই ইন্টারনেট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা আছে অথবা অনেক মেয়েরাই কিছু কিছু কাজ জানে। কিন্তু তারা অনলাইনে এই কাজগুলো কীভাবে শুরু করবে তা জানে না। এটা একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা।
আমাদের দেশে কিছু শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখানোর চেয়ে নিজেদের জাহির করতে বেশি পছন্দ করে এবং করেও থাকে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের জ্ঞানটা ঠিকই জাহির হয়, পক্ষান্তর শিক্ষার্থীদের শেখা হয় না কিছুই। ভালো মেন্টর বা শিক্ষকের অভাবে অনেক মেয়েরা আগ্রহ থাকা সত্বেও এই পেশায় আসতে পারছে না।
৪. সঠিক গাইড লাইনের অভাব
অনেকেই মনে করে থাকে যে, “ফ্রিল্যান্সিং মানেই ওয়েব ডিজাইন কিংবা গ্রাফিক ডিজাইন। আমি তো এগুলোর কিছুই পারি না। তাহলে আমি কিভাবে কাজ করবো?” কিন্তু তাদের এই ধারণা আদৌ সঠিক নয়। ফ্রিল্যান্সিং মানেই শুধুমাত্র ওয়েব ডিজাইন কিংবা গ্রাফিক ডিজাইন নয়। এই দুইটি ফ্রিল্যান্সিং এর দুইটি কাজের নাম মাত্র।
বস্তুত, ফ্রিল্যান্সিং অনেক বৃহৎ একটি ধারণা। আপনি যেকোন কাজেই দক্ষ হোন না কেন, ফ্রিল্যান্সিং দুনিয়া আপনার জন্য উন্মুক্ত। আপনি ভালো লিখতে জানেন? তাহলে এখানে আপনি আর্টিকেল লেখার কাজ পাবেন। আপনি ভালো ছবি আঁকতে জানেন? তাহলে এখানে আপনি আর্টিস্টের কাজ পাবেন। আবার আপনার ভয়েস অনেক সুন্দর? তাহলে বিভিন্ন ভিডিওতে আপনি আপনার কণ্ঠ ব্যবহার করেও উপার্জন করতে পারবেন।
মোট কথা, ফ্রিল্যান্সিং এক অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে। এখানে সকল মেধা ও প্রতিভারই মূল্য দেয়া হয়। যার ফলে আপনার যেকোন বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি সেই মোতাবেক কোন না কোন কাজ ঠিকই পেয়ে যাবেন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন দিক চিন্তার করলে মেয়েদের জন্য বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং শেখার পথ অতটা মসৃণ নয়। অনেক নারীই নানা কারণে পরিবার ছেড়ে বের হতে পারেন না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ভেঙে না পরে ঘরে বসেই নিজের বিকাশ ঘটিয়েছেন এমন নারীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়।
সুতরাং আইসিটি এমন একটি সেক্টর, যেখানে কাজ জানা থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে থেকেও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া যায়। তাই দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সময়ে মেয়েদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্ভবনাময় সুযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেয়েরা কেন ফ্রিল্যান্সিং করবেন?
আপনি যদি যথেষ্ট ধনী হয়ে থাকেন, তাও আপনার জন্য ফ্রিল্যান্সিং শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হতে পারে আপনি যথেষ্ট স্বচ্ছল। কিন্তু আপনাকেও কাজ করতে হবে। যারা জীবনে বড় কিছু করতে পেরেছে, অবশ্যই কাজের মাধ্যমেই করেছে। চলুন, এক নজরে জেনে নেই ফ্রিল্যান্সিং মেয়েদের জন্য কেনো গুরুত্বপূর্ণ?
১. আমাদের দেশে ধর্ষণ এর সংখ্যা এখন অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। এর ফলে ঘরের বাইরে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি দুরহ ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ষণের পরিমাণ এখন এতটাই বেড়েছে যে, নারীদের জন্য বাইরে কাজ করা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঘরে বসে নিরাপদে কাজ করবেন, এমন একটা পথই খোলা আছে এবং তা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সি।
২. আমাদের পুরুষত্রান্ত্রিক সমাজে নিয়ম হচ্ছে ছেলেরা বাইরে কাজ করবে আর মেয়েরা বাসায় থাকবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ধারণাটা অনেক বদলে গেছে। এখন অনেক স্বামীই তার স্ত্রীকে বাইরে কাজ করার জন্য আগ্রহ প্রদান করছেন। কিন্তু আপনি যদি একান্তুই বাইরে যেতে না না চান, তাহলে ফ্রিল্যান্সিংই হতে পারে আপনার উপার্জনের একমাত্র হাতিয়ার। এর ফলে স্বামীর পাশাপাশি আপনিও পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারেন।
৩. আমাদের দেশের মেয়েরা সবাই পর্দা করে না। কিন্তু তার মধ্যেও অনেকেই আছেন, যারা পর্দা করেন। আর তাদের জন্য বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করাটা অসম্ভব। তাই ফ্রিল্যান্সিং শিখলে ঘরে বসেই কাজ করতে পারবেন। এর ফলে আপনার পর্দা ভঙ্গ করা হবে না।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ২০০ প্রকারেরও বেশি কাজ রয়েছে। আপনি যেকোনো একটি কাজ শিখে আপনার ফ্রিল্যান্সার লাইফ শুরু করতে পারেন। অনলাইনে কাজ শিখে নিলে তারপর খুবই সিম্পল। আপনাকে সারাদিন মোবাইল বা কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকতে হবে না। যখন কোনো একটা কাজ পাবেন, তখন শুধু কাজ টা করবেন। অনলাইনে অনেক সফল মেয়ে ফ্রিল্যান্সার আছে। তাঁদের অনুসরণ করে দেখুন।
►►
শেষ কথা
ফ্রিল্যান্সিং এ হাজারও কাজ রয়েছে, এ কথা যেমন সত্য, তেমনি একটি কঠিন সত্য হচ্ছে- ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে হলে আপনাকে দক্ষ হতেই হবে। কোন কাজের দক্ষতা ছাড়া আপনি মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে পারবেন না। ফ্রিল্যান্সিং শুরুর জন্য তাই আপনাকে নির্দিষ্ট বিষয় নির্বাচন করতে হবে এরপর উক্ত বিষয়ে আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
Happy Freelencing ✌️✌️✌️✌️