21/09/2021
বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড (কালেক্টর’স এডিশন) প্রসঙ্গে!
*
“নট ফর সেল ক্লাব” একটি অলাভজনক পাঠকের ক্লাব; ক্লাবের সকল সদস্যগণ নিজেরা একত্রিত হয়ে বিশ্ব-বিখ্যাত বইগুলো নিজেরা অনুবাদ করে এবং নিজেদের অংশীদারিত্বের খরচে নিজেদের জন্যই নির্মাণ করে। ক্লাবের “কালেক্টর’স এডিশন” বইগুলো সদস্য ছাড়া কারও কাছে বিক্রির জন্য তৈরি করা হয় না!
অতি সম্প্রতি ক্লাব তার সদস্যদের নিজস্ব সংগ্রহের জন্য Jane Hope রচিত Introducing Buddha বইটির সংগ্রহ ইচ্ছা প্রকাশ করে। বইটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৯৯ সালে এবং ১৫ লক্ষ কপি সারা বিশ্বে বিক্রি হয়। এখনো amazon, flipkart-এ এটি পাওয়া সম্ভব এবং বিভিন্ন ভাষায় এটির অনুবাদও হয়েছে। চীনে কিছু প্রতিষ্ঠানে এই বই পড়ানো হয়, এবং National Taiwan University Library of Buddhism অনলাইনেও বইটি সংগ্রহ আছে। ১৯৯৯ সাল থেকে মূল বইটি এখনও পর্যন্ত প্রকাশনায় বাধাপ্রাপ্ত হয়নি, এবং সম্মানিত Jane Hope আন্তর্জাতিক মহলে কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হননি।
ক্লাব সবকিছু দেখে বুঝে বইটির অনুবাদ এবং রং রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়, এবং এরই ধারাবাহিকতায় বইটির অনুবাদ প্রক্রিয়া ও সাদাকালো ছবিগুলোকে চারুকলা শিল্পীর সহায়তায় রঙ্গীন করা হয়। Not For Sale Club অর্থগত সংগতি রেখেই বইটির অনুবাদ ও সাদাকালো থেকে রঙ্গিন গ্রাফিক্স সম্পাদনা করেছে।
কেবলমাত্র সদস্যদের সংগ্রহের জন্য ১০০১ কপি নির্মিত হবার পরে ক্লাব সিদ্ধান্ত নেয় বইটির ১১টি কপি দেশের ১১টি বৌদ্ধ বিহারে পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানো হবে; এবং কমপক্ষে ৩টি বৌদ্ধ বিহার থেকে সর্তকতামূলক কোনো বার্তা পেলে বইটিকে আর সবার সামনে প্রকাশ করা হবে না! ১১টি বৌদ্ধ বিহারের তালিকা:
1/মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার।
2/বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহার।
3/মিরপুর ১৩ঃ শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার
৪/ কুমিল্লা শালবন বৌদ্ধ বিহার
৫/জয়পুরহাটঃ পাচবিবি
৬/চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার, নন্দনকানন।
৭/রাঙ্গামাটি: রাজবন বিহার
৮/রাজশাহী-নওগা পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
৯/কক্সবাজার, রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার
১০/খাগড়াছড়ি, ধর্মপুর আর্য বনবিহার
১১/রাঙ্গামাটি: বুদ্ধাংকুর বৌদ্ধ বিহার
প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারের কর্তাব্যক্তিদের একাধিকবার পাঠের পর “নট ফর সেল ক্লাব” প্রবল ভালোবাসার বার্তাসহ সবগুলো বিহারেই ২০ সেপ্টেম্বর মধু পূর্ণিমা উৎসবে “বুদ্ধ” বইটি আনবক্স করার সুখকর আহ্বানে সম্মানিত হয়। ক্লাব এই আহ্বানে বুঝতে সক্ষম হয় তাদের নির্মিত এই বইটিতে কোনোভাবেই মহামতি গৌতম বুদ্ধ এবং বৌদ্ধ ধর্মমত নিয়ে কোনো অপমানসূচক বক্তব্য নেই।
প্রসঙ্গত: বইটির কামনা ও যৌনতার রূপান্তর অধ্যায়ে প্রসঙ্গক্রমিকভাবে মূল ইংরেজী বইটির মূল ছবিগুলোকেই রং সম্পাদনা করে ব্যবহার করা হয়েছে; অধ্যায়ের ছবিগুলোকে অনেকটা “ত্রিপিটক পাবলিশিং এসোসিয়েশন” প্রকাশিত “সচিত্র ধর্মপদ” গ্রন্থের ছবির সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
ক্লাব ১১টি বৌদ্ধ বিহারের আহ্বান বার্তায় বুঝতে পারে এই বইটি মহামতি গৌতম বুদ্ধকে জানতে চাওয়া মানুষদের জন্য একটি ভূমিকা তৈরি করে দিতে পারে! তবে “নট ফর সেল ক্লাব” ব্যথিত হয়ে দেখতে পাচ্ছে, কিছু সংখ্যক বুদ্ধ অনুসারী বন্ধুগণ বইটি উপলব্ধির স্তর থেকে না নিয়ে আংশিক ছবি বা তথ্য নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছেন এবং বিভিন্ন পোস্ট কমেন্ট ও ইনবক্সে ঘৃণার বিস্তার করতে সচেষ্ট আছেন। তাদের এই কার্যক্রম আমাদের হৃদয়ে ব্যথার এবং সম্মানিত ১১টি বৌদ্ধ বিহারের জ্ঞানী কর্তাব্যক্তিদের বিব্রত হবার কারণ তৈরি করছে।
ক্লাব স্বীকার করে মূল ইংরেজী বইটিতে যদি কেনো তথ্যগত ভুল থাকে তবে আমাদের অনুবাদিত বইটিতেও সেটি থাকা অসম্ভব নয়। প্রায় ২৫০০ বছর পুরাতন একটি ধর্মে বহুমত থাকাটাও এর একটি কারণ হতে পারে। প্রায় প্রতিটি ধর্মে বহুমত বা ইখতেলাফ বিদ্যমান!
সর্বশেষে এটাই বলার: বুদ্ধকে ভালোবাসতে গিয়ে ক্লাবের সকল সদস্য এখন বিব্রত এবং ক্লাব উপলব্ধি করতে পারছে বুদ্ধকে বুঝতে সবারই আরও লম্বা পরিক্রমা পাড়ি দিতে হবে। আমরা আপাতত সদস্য ছাড়া কারও জন্য বইটির প্রাপ্তির পথ সীমাবদ্ধ করছি এবং অপেক্ষা করছি আপনাদের সবার বোধবুদ্ধির সাবলীলতার জন্য; সম্ভবত বুদ্ধ সবাইকে এই শিক্ষা দিতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন!
বিব্রত ধন্যবাদসহ
NFSC পরিচালনা পর্ষদ!