28/01/2025
‘মেয়ে কোথায় যায়, কার সাথে ঘোরে, কোনো খবর রাখেন?’
মিলি, দিলরুবার কথার কিছুই বুঝলেন না। পালটা প্রশ্ন করলেন, ‘আপা, আপনি কি আমাকে বলছেন?’
‘আমার ছেলের নামের আংটি হাতে পরে মিত্রা বেলাল্লাপনা করে বেড়াচ্ছে, সেটা আপনি দেখেন না? আপনার মেয়ে ফেসবুকে ছবি দিয়ে দুনিয়ার মানুষকে দেখাচ্ছে আর আপনি না জানার ভান করে বসে আছেন?’
মিলি দিলরুবার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারলেন না৷ তিনি বললেন, ‘আপা আমি আপনাকে পরে ফোন করছি৷ এখন আমি ব্যস্ত আছি।’
মিলি লাইন কেটে দেওয়ার সময় শুনতে পেলেন, ‘শোনেন, শোনেন, ফোন রাখবেন না, শোনেন….’
মিলি, মিত্রার রুমে এসে বললেন, ‘মিত্রা লেখাটা বন্ধ করো। তুমি কী আজকে কোনো ছবি পোস্ট করেছ?’
মিত্রা কথার উত্তর না দিয়ে কেঁদে ফেলল। মিলি অবাক হয়ে বললেন, ‘কাঁদছ কেন! কী হয়েছে মিত্রা?’
মিত্রা চোখ মুছে, ফেসবুকে ঢুকে পোস্ট করা ছবিগুলো দেখিয়ে বলল, ‘এই ছবিগুলো পোস্ট করেছি দেখে তুষার আমাকে ভীষণ নোংরা কথা বলেছে।’
এরপর মিত্রা, তুষারের বলা সব কথা তার মাকে বলল। সব শুনে মিলি বললেন, ‘তুষার সত্যিই বলেছে এই কথা?’
‘হ্যাঁ, মা।’
মিলি সবগুলো ছবি দেখলেন৷ তাঁর কাছে কোনো ছবিকেই অশালীন বা নোংরা মনে হলো না। একদল ছেলেমেয়ে মিলে আনন্দ করছে আর সেই মুহূর্তগুলোই ক্যামেরা বন্দি করা হয়েছে৷ এই ছবি দেখে তুষার এত অসভ্যতা করেছে তাঁর মেয়ের সঙ্গে!
তিনি বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি পড়ো৷ মন খারাপ করো না। আমি ওদের সাথে কথা বলব৷’
নিজের রুমে ফিরে এসে মিলি, দিলরুবাকে ফোন দিলেন৷ দিলরুবা ফোন ধরেই তেজের সাথে বললেন, ‘আপনি কলটা এভাবে রেখে দিলেন কেন?’
মিলি শান্ত গলায় বললেন, ‘আপনি যেন মিত্রার সম্পর্কে কী বলতে চেয়েছিলেন? এখন বলেন।’
দিলরুবা এবার কিছুটা নরম সুরে বললেন, ‘মেয়ে কোথায় যায়, কী করে, এসবের কী খোঁজখবর রাখেন আপনারা?’
‘আমার মেয়ে কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে, আমি তার সমস্ত খোঁজ রাখি। আপনি যে ছবির কথা বললেন, আমি সেগুলো দেখলাম৷ মিত্রা ওর বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলেছে। নাহিদের জন্মদিন ওরা আনন্দ করে উদযাপন করছিল। আপনারা এই বিষয়টাকে এত নোংরাভাবে কেন দেখছেন, আমার মাথায় আসছে না! সেখানে মিত্রা একা ছিল না। আরও দশ-বারোজন ছেলেমেয়ে ছিল ওখানে। আপা, আপনি কী জানেন, তুষার, মিত্রার সাথে কী ধরণের নোংরা ভাষায় কথা বলেছে?’
‘শোনেন আপা, যার সাথে দুদিন পর বিয়ে হবে, সেই মেয়ে যদি এভাবে ছেলেদের সাথে ঘুরে বেড়ায়, যে কোনো ছেলের মাথা গরম হবেই। তুষারেরও মাথা গরম হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। আপনি মিত্রাকে বলেন, এরপর সে যেন এই ধরণের ভুল আর না করে। আমি তুষারকে বলব, এবারের মতো মিত্রাকে মাফ করে দিতে।’
মিলির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছিল; কিন্তু নিজেকে সংযত রেখে তিনি বললেন, ‘আপা একটা কথা বলব?’
দিলরুবা বুঝতে পারলেন, মিলি ভয় পেয়েছে। বিষয়টা তিনি এনজয় করলেন। ভাব দেখিয়ে বললেন, ‘বলেন দেখি, কী বলতে চান আপনি৷’
‘আপনারা যে ছবিগুলো দেখেছেন, এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। আপনারা ছবিগুলো না দেখলে, হয়তো এই পরিস্থিতির জন্ম হতো না।’
‘সেটাই। মিত্রাকে সাবধান করে দেবেন, ভবিষ্যতে যেন আর কখনও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।’
‘অবশ্যই বলব আর আপনাকে ধন্যবাদ, সময় থাকতেই নিজেদের আসল চেহারাটা দেখানোর জন্য।’
দিলরুবা বললেন, ‘আসল চেহারা মানে?’
‘আপনার ভাগ্য ভালো যে, আপনার ছেলে দেশের বাইরে আছে৷ তুষার যদি দেশে থাকত, মাহবুব ওকে এই বেয়াদবির জন্য উচিত শিক্ষা দিত৷’
‘আপনি কী বলছেন এইসব! আপনি জানেন, আপনি একজন ছেলের মার সঙ্গে কথা বলছেন? আমি যদি এখন বিয়েটা ভেঙে দিই, আপনার মেয়ের কী হবে, সেটা আপনার জানা আছে?’
মিলি হেসে বললেন, ‘ছেলের মা! আপা, আপনার কথাগুলো বাংলা সিনেমার ডায়ালগের মতো শোনালো। থাক আপনার আর রাগ করতে হবে না। আমি নিজেই এই বিয়ে ভেঙে দিচ্ছি৷ কালকে ড্রাইভারকে দিয়ে আপনাদের আংটি পাঠিয়ে দেবো।’ দিলরুবাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, মিলি ফোন রেখে দিলেন৷
#হৃদয়েরপোস্টমর্টেম
৪০% ছাড়ে অর্ডার করার সুযোগ আছে ২-রা ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্তই।