04/02/2023
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আজ ১৩ রযব ১৪৪৪ হিজরি:
খলিফাতুল মুসলিমীন আমিরুল মু’মিনিন আসাদুল্লাহিল গালীব হযরত আলী ইবনে আবি তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাররামাল্লাহু ওয়াজ হাহু’র শুভ জন্মদিন।
এ উপলক্ষে হযরত আবুল ফিদা হাফিজ ইবন কাসীর আদ-দামেশকী (রহ.) কৃত ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ হতে উপস্থাপন করছি-
খলিফাতুল মুসলিমীন আমিরুল মু’মিনিন আসাদুল্লাহিল গালীব হযরত আলী ইবনে আবি তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কাররামাল্লাহু ওয়াজ হাহু’র উত্তম বাণী:
আলী ইবন জাকির ওয়াররাক আমীরুল মু'মিনীন হযরত আলী (রা) সম্পর্কে নিম্নের কবিতাটি আবৃত্তি করেছেন:
“তুমি যখন কাপড় পরিধান করবে তখন ভাল কাপড় পরিধান করবে। কারণ জামা কাপড় হল পুরুষের অলংকার ও ভূষণ। জামা কাপড়ের কারণে তুমি সম্মানিত ও মর্যাদাবান হবে।''
"জামা কাপড় পরিধানে বিনয় বর্জন কর। কারণ তোমার ভেতরের খবর আল্লাহ্ তা'আলার জানা আছে।”
“তোমার জামার দৈন্য ও জীর্ণতা তোমাকে আল্লাহর নৈকট্য এনে দিবে না যদি তুমি মূলত দোষী ও অপরাধী হয়ে থাক।”
"তুমি যদি মহান আল্লাহকে ভয় কর এবং তিনি যা হারাম ও নিষিদ্ধ করেছেন, তা বর্জন কর তবে দামী ও মূল্যবান জামা-কাপড় পরিধানে তোমার কোন ক্ষতি হবে না।'
অবশ্য হাদীস শরীফেও এ মর্মে বর্ণনা রয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন-
মহান আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও মুখমণ্ডলের দিকে দেখেন না, তোমাদের জামা কাপড়ের দিকেও নয়। তিনি বরং দেখেন তোমাদের অন্তর ও তোমাদের কর্ম।'
সাওরী (রা) বলেছেন, দুনিয়াতে জুব্বা পরিধান ও আহারে কৃচ্ছ্রসাধন পরহেযগারী নয়। বরং পরহেযগারী দুনিয়াতে আশা-আকাঙ্ক্ষা সীমিত রাখা।
আবু আব্বাস মুহাম্মদ ইয়াযীদ ইবন আব্দুল আকবার মুবরাদ বলেছেন, হযরত আলী (রা)-এর তরবারিতে নিম্নের কবিতাটি লেখা ছিল:
‘দুনিয়ার প্রতি মানুষের রয়েছে লোভ-লালসা ও দুর্বার আকর্ষণ। লোভনীয় ও কামনার বস্তু অর্জনে তার রয়েছে চাতুর্যপূর্ণ কৌশল ও বুদ্ধিভিত্তিক প্রস্তুতি।
‘তারা যদি আপন প্রতিপালক মহান আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের দিকে আসে তবে এই আনুগত্যের তত্ত্ব ও হাকীকত অনুধাবনে তাদের বুদ্ধি ও বিবেক অক্ষম হয়ে পড়ে।
‘এ জন্যে এবং ঐ লোভ-লালসার জন্যে তাদের জীবনের স্বচ্ছতা ও উজ্জ্বলতা দুঃখ এবং অন্ধকারে পরিণত হয়।
“তারা জ্ঞান-বুদ্ধি ও চাতুর্যের ফলশ্রুতিতে দুনিয়ার সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করে তা কিন্তু নয়। কারণ ওগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে বণ্টন ও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। বস্তুত ওই তাকদীর বণ্টনের প্রেক্ষিতেই তারা সুখ-সমৃদ্ধি অর্জন করে।
‘বহু বিদগ্ধ প্রজ্ঞাবান রয়েছেন পার্থিব উন্নতি যাদের ভাগ্য জোটে না। পক্ষান্তরে বহু মূর্খ ও নির্বোধ ব্যক্তি রয়েছে যাদের নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতা সত্ত্বেও পার্থিব সাফল্য তাদের অনুকূলে থাকে।
‘পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধি এবং যশ-খ্যাতি যদি শক্তি ও দাপটের ফলশ্রুতিতে হত তাহলে চড়ুইগুলো না খেয়ে মারা যেত।'
আসমাঈ সালামা ইবন বিলাল মুজাহিদ সূত্রে শা’বি (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, হযরত আলী (রা) এক ব্যক্তিকে উপদেশ সূত্রে বলেছিলেন, বস্তুত ওই লোকটি অন্য এক লোকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুক তা তিনি পছন্দ করতেন না। হযরত আলী (রা) বলেছেন,
তুমি কখনো মুর্খ ও অশিক্ষিত লোকের সাথে বন্ধুত্ব করে না। মূর্খ লোকের সংস্পর্শ থেকে তুমি নিজেকে সরিয়ে রাখবে। কারণ এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যে, সখ্যতা স্থাপনের পর মূর্খ লোকটি তার জ্ঞানী বন্ধুকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
‘দু'জন মানুষ যখন এক সাথে চলে তখন একজনকে অন্যজনের পর্যায়ভূক্ত বলে গণ্য করা হয়। আর একটি বস্তুকে অন্য বস্তুর সাথে তুলনা ও সাদৃশ্যের ধারণা করা হয়।'
‘পরস্পর সাক্ষাত ও পরিচিত হবার পর এক অন্তরের উপর অন্য অন্তরের প্রভাৰ ও প্রতিক্রিয়া কার্যকর হয়।’
আমর ইব্ন ‘আলা তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আলী (রা) তাঁর সহধর্মিনী হযরত ফাতিমা যাহরা (রা)-এর কবরে দাঁড়িয়ে নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন:
‘আমি আবু আরওয়াকে স্মরণ করেছিলাম। ফলে আমার রাত কেটেছে এভাবে যে, আমি আমার অতীত দুঃখ-বেদনাকে প্রতিহত করতে চেয়েছি।
‘দু'জন বন্ধুর মিলনের পর বিচ্ছেদ আসবেই। আর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যত কিছুই ঘটুক মূলত তা খুবই কম।
‘আমি যে একের পর এক বন্ধু ও সাথীকে হারাচ্ছি তাতে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, কোন বন্ধুই চিরস্থায়ী নয়।
‘এমন হতেই থাকবে যে, আমার বন্ধু আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে যাবে আর আমার বন্ধুত্বের কথা ভুলে যাবে। আমার পর আমার বন্ধুর জন্যে নতুন বন্ধু জুটে যাবে।'
‘আমার জীবনের কিছু অংশ অতিবাহিত হবার পরই বন্ধুত্বের সমাপ্তি ঘটবে। কারণ পেশাদার ক্রন্দনকারিনী মহিলাদের বিলাপ ও শোকগীতি ক্ষণস্থায়ী। কেউ কেউ হযরত আলী (রা) সম্পর্কে নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেছেনঃ
‘মৃত্যু যার অনিবার্য তার তো বিনয়ীই হওয়া উচিত। আর দুনিয়ার সম্পদের মধ্যে সামান্য খাবারই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট।
‘মানুষ দুখ ভারাক্রান্ত এবং লোভী হবে কেন? মানুষ প্রশংসিত হবে না কেন?
'আমাদের মালিক মহামহিম আল্লাহর সকল কর্মই চমৎকার, সুন্দর ও প্রশংসাযোগ্য। তাঁর নির্ধারিত রিযিক ও জীবিকা তো আমাদেরকে বঞ্চিত করবে না।'
‘ওহে বন্ধু! এই দুনিয়ার সমান্য কিছু ভোগ করার পরই তোমাকে চলে যেতে হবে। তোমার পৌঁছতে হবে এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট, চুপ থাকাই যাদের কথা বলা। (অর্থাৎ কবরের অধিবাসীগণ)।
আমরা যদি এই বিষয়ে আরো লিখতে যাই তবে তা হয়ে পড়বে সুদীর্ঘ। অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তির জন্যে এতটুকুই যথেষ্ট। সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা মহান আল্লাহর।
হাম্মাদ ইবন সালামা বলেছেন যে, আইয়ুব সাখতিয়ানী বলেছেন, 'যে ব্যক্তি হযরত আবু বকর (রা)-কে ভালবেসেছে সে দীন প্রতিষ্ঠা করেছে। যে উমর (রা)-কে ভালবেসেছে সে তার চলার পথ উজ্জ্বল করেছে। যে ব্যক্তি উসমান (রা)-কে ভালবেসেছে সে নিজেকে আল্লাহ’র জ্যোতিতে জ্যোতির্ময় করে তুলেছে। আর যে ব্যক্তি হযরত আলী (রা)-কে ভালবেসেছে সে মজবুত ও সুদৃঢ় রজ্জু ধারণ করেছে। যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সাহাবীদের সুনাম ও প্রশংসা করেছে, সে মুনাফিকী থেকে নিজেকে মুক্ত করেছে।(কপিপেস্ট)