09/11/2025
সৌদির ১২৫ কিলো সোনার খনির কারণে সোনার দাম ১ লাখের নিচে আসতে যাচ্ছে 😍
সৌদিতে ১২৫ কিলো লম্বা সোনার খনি পাওয়া গেছে কিছুদিন আগে । গতকাল খবরে এলো পাকিস্তানে একটা খনি পাওয়া গেছে যেখানে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের সোনা রয়েছে । বিশ্বব্যাপী একের পর এক সোনার খনি পাওয়া যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে । অনেকেই বলছেন সোনার দাম অনেক কমে যাবে । আসলে কি ঘটবে জানা যাক -
একটা সোনার খনি আবিষ্কারের পর সোনা তোলা পর্যন্ত অনেকগুলি ধাপ রয়েছে । প্রথমে সার্ভে করা হয়, সোনা উত্তোলন করলে সেটা লাভজনক হবে কিনা সেটা যাচাই করা হয়, এরপর রয়েছে পরিবেশগত সমস্যা । এই ধাপগুলি অতিক্রম করতে কমপক্ষে ৪-৫ বছর সময় লাগে । এক বছর পরেই সোনা তোলার কাজ শুরু করার উদাহরণ আছে কেবল দক্ষিণ আফ্রিকাতে । উইট ওয়াটারস্যান্ড খনিতে ১৮৮৬ সালে খনি আবিষ্কারের পরের বছরেই উত্তোলন করা শুরু হয়েছিল । কারণ এটা ছিল পরিবেশগত দিক থেকে সবচেয়ে দারুণ একটা জায়গা । সব কাজ দ্রুত সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছিল । এই খনি থেকে এখনো সোনা বের হচ্ছে । এছাড়াও বিভিন্ন দেশ তাদের লজিস্টিক সাপোর্ট সহকারে ৭-১০ বছর পার করে দেয় মাইনিং শুরু করতে । ২০০০ সালের পর এই সময় আরো বেড়েছে । কারণ পরিবেশের ব্যাপারে পৃথিবী অনেক শক্ত । তাই ১৫-২০ বছর চলে যায় সরকারের অনুমতি, আদালত, পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থা, এদের থেকে অনুমতি পেতে ।
যারা মনে করছেন সৌদিতে খনি আবিষ্কার হয়েছে বিধায় এবার দাম কমে ১ লাখের নিচে চলে যাবে তাহলে জেনে রাখুন এই মুহূর্তে দুনিয়াতে ১৩৫২ টি ছোট বড় খনি থেকে সোনা উত্তোলন করা হচ্ছে ।
এক টন আকরিক থেকে সর্বোচ্চ মাত্র ১৫-২০ গ্রাম সোনা বের হতো । কিন্তু বর্তমানে বহু খনির “অরে গ্রেড” কমতে কমতে ২-৩ গ্রামে নেমে এসেছে । মানে পাথরের তুলনায় সোনার পরিমাণ কমে যাচ্ছে ।
তারপর ফুয়েল, লেবার কস্ট, অন্যান্য সরঞ্জামের খরচ বেড়ে যাওয়ায় সোনা উত্তোলন দিন দিন কমে যাচ্ছে ।
পরিবেশগত সমস্যাটা ব্যাপক । কারণ এই কারণে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাতেই ৬০০০ এর বেশী খনি বন্ধ করে দিতে হয়েছে । কারণ ১ গ্রাম সোনা ওয়াশ করতে ২-৩ হাজার লিটার পানি দরকার হয় । পরিমাণ বুঝতে পারছেন ? অন্যদিকে আকরিক থেকে সোনা বের করতে সায়ানাইড ব্যবহার করা হয় । এটা খুব বিষাক্ত । এতে মাটি, পানি, মাছ, গবাদি পশু, নদীর স্তর দুষিত হয় । ২০০০ সালে রোমানিয়াতে ১ লাখ কেজি মাছ মারা যায় । ৫ দেশের নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পরেছিল । তারপর খনির ভেতর সালফাইড পাথর পানির সাথে মিশে এসিড তৈরি করে । আসিড মাইন ড্রেনেজ একবার শুরু হলে ১০০ বছরেও বন্ধ হয় না । খনি বন্ধ করে দিলেও পরিবেশের বারোটা বাজাতে থাকে । নদীর মাছ অম্লীয় হয়, জমি নষ্ট হয়, মাছ মারা যায় । তারপর সোনা তোলার পর টেইলিং পুকুর তৈরি হয় যেখানে সিসা, পারদ, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম । ২০১৪ সালে কানাডার মাউন্ট পলি মাইন ডিজাস্টারে ২৫ মিলিয়ন ঘনমিটার বিষাক্ত বর্জ্য পানিতে গিয়ে পরেছিল । আর সোনার খনি বেশিরভাগ পাওয়া যায় পাহাড়ি ও মরু অঞ্চলে । এসব জায়গায় সোনা ওয়াশ করতে গিয়েই পানির সংকট তৈরি হয় । এসব কারণে এখন নিরাপদ পজিশন ছাড়া সোনার খনি খুঁজে পাওয়া গেলেও উত্তোলনের অনুমতি মেলে না । আপনি নিজেই চিন্তা করেন, আমাদের ঘনবসতির দেশে যদি সোনার খনি পাওয়া যায় সেটা উত্তোলন করতে গিয়ে কি পরিমাণ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি সৃষ্টি হবে চিন্তা করা যায় ?
এবার চলুন জানা যাক সোনা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান, সংগঠনগুলি একে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ?
এতক্ষনে আপনি বুঝে গেছেন সোনার খনি যতোই পাওয়া যাক না কেন এখান থেকে উত্তোলিত সোনার পরিমাণ খুব কম । ২০০৫ সালে ২৪০০ টন সোনা উত্তোলন করা হয় । এরপর ২০২৪ সালে সেটা বেড়ে ৩১০০ হয় হয়েছে । ২০ বছরে মাত্র ৫০০ টন বেড়েছে । তার মানে ধরে নিতে পারি সোনা তোলার পরিমাণ প্রায় স্থির । বছরে ১-২ শতাংশের বেশী এটা বাড়ে না । এটা খুব ধীরে যোগান দিলেও মানুষের মাঝে সোনার প্রতি আকর্ষণ ধীরে নয় দ্রুত বাড়ছে । বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জুয়েলারি, বিনিয়োগকারী, ETF - এরা বছরের পর বছর সোনা ধরে রাখে । টেকনিক্যালি বাজারে সোনার সাপ্লাই কমই থাকে । এটা কখনোই বাড়ে না । কারণ বিভিন্ন দেশ সোনা কিনতে থাকে । খনি থেকে যা আসে তার বড় অংশ রিজার্ভে চলে যায় । এরপর শিল্পে ব্যবহার হয়, জুয়েলারি, এদের পকেটে চলে যায় বড় অংশ । লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট এসোসিয়েশন সোনার আন্তর্জাতিক স্পট রেট নিয়ন্ত্রণ করে । বিভিন্ন ব্যাংক সোনা কিনে বাজারে ঘাটতি তৈরি করে । ব্ল্যাকরক, ভ্যানগার্ড, জেপি মরগ্যানের মত ব্র্যান্ড গোল্ড ইটিএফ দিয়ে সোনার দাম আপ-ডাউন করিয়ে থাকে । মূলত বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি প্রচুর পরিমাণ সোনার বার কিনতেই থাকে । কেউ ইচ্ছা করলেই বাজারে সোনার প্রচুর ফ্লো করে দিতে পারবে না ।
ধরুন এক টন আকরিক থেকে ১৫ গ্রামের পরিবর্তে ১৫ কেজি সোনা বের হচ্ছে । লন্ডন বুলিয়ন এটা আটকে দিবে । বাজারে ১-২% এর বেশী সোনা আসতে দিবে না । তবে সত্যি কথা হচ্ছে তারা চাইলেও সোনা এরচেয়ে বেশী আনা সম্ভব না । কারণ পৃথিবীতে একমাত্র সোনা সবচেয়ে কম মজুদ রয়েছে । তারপর পরিবেশগত বাঁধা অতিক্রম করে সোনা তুলতে গেলে যে পরিমাণ খরচ এখন হচ্ছে তাতে অনেক কোম্পানি সোনা তোলা বন্ধ করে দিয়েছে । কারণ দিন দিন সোনা উত্তোলন খুব ঝুঁকি ও ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে । তাই সৌদি আরবের বালির নিচ দিয়ে যদি গলিত সোনার নদীও বের হয়ে আসে তবুও সোনার বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হবে যেভাবে ডাইমন্ডকে কন্ট্রোল করে একে দামী পাথর বানিয়ে রাখা হয়েছে । তাই পাকিস্থান বা সৌদিতে সোনার ১২৫ কিলো খনি পাওয়া গেছে দেখে খুশিতে চিন্তা ভাবনা করা দরকার নাই যে, “এইবার আর রক্ষা নাই, সোনার দাম ৫০ টাকা ভরিতে নেমে যাবে” । বরং এতো সীমাবদ্ধতার কারণে সাম্নের দিনে আরো নানান বাঁধার মুখে সোনা উত্তোলন কমে যাবে এবং সোনার দাম দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে । আশা করি, সোনার দাম কোথায় যাবে জবাব পেয়ে গেছেন ।
একটা শেয়ার দিয়েন ।
ধন্যবাদ ।