Monir Bro

Monir Bro প্রয়োজন আইনের তোয়াক্কা করে না।

বিয়েটা হয়েই গেলো।হুহ্  আমিও বিবাহিত। আমারো এখন আলাদা ছোট্ট একটা সংসার হতো কিন্তু এসে পড়লাম বড় বোনের সতীন হয়ে। হ্যাঁ! বিয়...
19/02/2025

বিয়েটা হয়েই গেলো।হুহ্ আমিও বিবাহিত। আমারো এখন আলাদা ছোট্ট একটা সংসার হতো কিন্তু এসে পড়লাম বড় বোনের সতীন হয়ে। হ্যাঁ! বিয়ে টা তো হলো আমার বোন জামাই সায়ান মাহমুদ এর সাথে। যার সাথে ঠিক ছয় মাস আগে আমার বড় বোন অনামিকা ইসলামের সাথে হয়েছিলো। না আপু মরেনি। বেঁচেই আছে তবুও আমাকে তার সতীন হয়েই আজ থেকে এই সংসারের দায়িত্ব নিতে হবে৷
পাঁচ মাস আগে যখন ভাইয়া - আপু ফ্যামিলি ট্রিপ থেকে ফিরছিলো তখন হঠাৎ এক্সিডেন্টে ভাইয়ার বাবা মা মারা যায়। আর আপু চলে যায় কোমায়। মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙেছে, মাথায় আঘাত লেগেছে।মা-বাবা কে হারিয়ে সায়ান ভাইয়ার পৃথিবীই তো অনামিকা আপু। সব ভালোই চলছিলো কিন্তু ওই যে কপালের লিখন। আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো আপুর জন্য রাখা নার্স আপুর টেককেয়ার করেনি সেই মূল্য আমাকে আমার জীবন দিয়ে দিতে হলো।
কোন কালেই আমি আমার বাবার প্রিয় ছিলাম না। আমার জায়গায় ছেলে আশা করেছিলো তো তাই হয়তো আমাকে মেনে নিতে পারেনি। সেদিকে আপু তার চোখের মণি বড় মেয়ে৷
আপুর দেখাশোনা করার জন্য আমাকে তার সতীন করার কোন প্রয়োজন ছিলো কি না আমি জানি না। তবে বিগত পনেরো মিনিটে যতটা আন্দাজ করেছি তা হলো
১- আমাকে বিয়ে দিলে বাবার ঘাড়ের বোঝা কমবে।
২-সংসার টা নিজের মনে করে আগলে রাখবো। যদিও আমাকে বলা হয়েছে আপুর আমানত এসব।
আচ্ছা? আমিও তো এখন সায়ানের স্ত্রী তাহলে কি করে এসব আপুর আমানত হলো?.
৩- মেয়ের জামাই যদি পর নারীতে আসক্ত হয়ে যায়? যদি আপুকে না রাখে তাই তার জন্য তার বেড পার্টনার দিয়ে গেলো।
আপু তো কোন একদিন সুস্থ হবে। সেদিন কি জবাব দিবে তারা? তার ভালোবাসার সংসারে কি আপু আমাকে মেনে নিবে?
ডায়েরি তে কথা গুলো লিখে আয়নার সামনে দাঁড়ালো অতসী। কিছুক্ষণ আগেই তার বিয়ে হয়েছে অথচ তার শরীরে নেই কোন হলুদের গন্ধ নেই কোন বিয়ের সাজ। চুপচাপ আয়নায় নিজেকে দেখছে সে।
গলার নিচে বেশ কালো হয়ে গেছে। কপালের বা পাশে ব্যান্ডেজ লাগানো৷ ঠোঁট কেটেছে।হাত, পায়ে কালশিটে।
ফোন টা নিয়ে গেছে ওর বাবা। তাইতো চাইলেও প্রিয় মানুষটা কে আর দেখতে পারবে না। তার ছবিও যে অতসীর জন্য অনেকটা সাহস জুগান দিতো।
এক হিসেবে ভালোই হয়েছে সে তো মুক্তি চেয়েছিলো আজ পেয়েও গেলো।
আচ্ছা সে কি জানে সে মুক্তি পেয়েছে?
দরজায় নক পড়ছে। সায়ান ভিতরে এলো। কেনো যেনো অতসী কে তার সহ্য হচ্ছে না। সায়ান প্রচন্ড ভালোবাসে অনামিকা কে। তাই তো তার জন্য বাধ্য হয়েই তার সতীন আনলো। হাহ্ সতীন? এই মেয়েকে সায়ান চেয়েও দেখবে না। অনামিকা জীবন্ত লাশ হলেও ওকে নিয়ে সায়ান সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবে।
অতসী কে ডেকে সায়ান বললো
- দেখো অতসী! আমি জানি তুমি মেনে নিতে পারছো আমাকে কিন্তু আমি তোমাকে মানতে পারবো না। আমার কাছে কখনো কোন অধিকার চাইবে না। তোমাকে বিয়েটা শুধু মাত্র অনার জন্য করা । তুমি অনার খেয়াল রাখবে এতেই হবে। তাছাড়া আর কোন কিছুই আমার থেকে আশা করবা না। এই বাসায় যথেষ্ট শালীন হয়ে চলবে। যখন তখন যেনো ওড়না ছাড়া না দেখি। আর হুম! এবার ছেলেদের পিছন ছাড়বে। তুমি এখন মিসেস সায়ান মাহমুদ। আশা করছি মাথায় রাখবে।
-ভাইয়া! একটা কথা ছিলো
- বলো
-আসলে আমি টিউশনি করাতাম। মূলত আমার লেখাপড়া তাতেই চলতো৷
-তো?
-আমি আসলে একটু বের হতাম। সন্ধ্যের আগেই ফিরে আসবো।
সায়ান কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ফিরে এসে অতসীর সামনে না অতসীর গায়ে টাকা ছুড়ে মারলো আর বললো
- নার্স কে আমি ২৫ হাজার দিয়ে রেখেছিলাম। এখানে ত্রিশ আছে। প্রতি মাসের এক তারিখে পেয়ে যাবে। কিন্তু মাইন্ড ইট অনার যত্নে যেনো ক্ষতি না হয়।
ঠোঁটের পাশে লেগে আবার একটু রক্ত আসলো। কষ্ট লাগছিলো কিন্তু প্রকাশ করে কি লাভ? টাকাগুলো রেখে অনামিকার কাছে চলে এলো অতসী। আপুর সব টাইমটেবল কর‍তে হয়। লিকুইড খাবার দেওয়া হয়। অতসী খাবারের চার্ট দেখে খাবার বানিয়ে এনে খাইয়ে দিলো। হাত মুখ মুছিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে দিয়েছে।
অতসীর আপু খুব সুন্দরী তাই তো সায়ান ভাইয়াত মতো স্বামী পেয়েছে। দুজন দুজনের সমান সমান। রুপে, গুণে কিংবা শিক্ষায়।
আপুদের বিয়ে টা হলো ঘরোয়া ভাবেই। কথা ছিলো ট্রিপ থেকে ফিরে এসে বড় করে আয়োজন করবে কিন্তু তার আগেই সব ওলট পালট হয়ে গেছে।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে
অতসী ঘুমিয়ে গেছে তার খেয়াল নেই। কারণ সারাদিন না খাওয়া শরীরে টানছিলো না।
ঘুম যখন ভাঙলো তখন বুঝতে পারলো ও কোথাও থেকে পড়ে যাচ্ছে। কারো কথার শব্দ শুনতে পারছে।
-এই বেহায়া মেয়ে! এত সাহস কি করে হয় আমার অনার পাশে ঘুমানোর? অনার জায়গা নিতে চাও? এটা আমার আর অনার খাট। এই ঘরে তুমি আসবে কিন্তু অনার সংসারে ঢুকার চেষ্টা করবে না। সাহস কি করে হয় এই খাটে স্পর্শ করার? এখানে অনা ব্যতীত অন্য কোন মেয়ের জায়গা নেই।
কথাগুলো বলে সায়ান জোড়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। অতসীর হাত পা কাপছে। ঘুম ঘুম চোখে দরজার কাছে দু পা মুড়ে বসে অস্ফুটস্বরে ডেকে উঠলো
------মা!!!

চলবে

দায়িত্বের_সংসার
সৌরভে সুবাসিনী
পর্বঃ ১

রাগের মাথায় মিমের পেটে লাথি মেরে ছিলাম কিছু দিন আগে'ভেবেছিলাম আমি লাথি মারার আগেই মিম সড়ে যাবে। কিন্তু না মিম সড়েনি'লাথি...
18/02/2025

রাগের মাথায় মিমের পেটে লাথি মেরে ছিলাম কিছু দিন আগে'ভেবেছিলাম আমি লাথি মারার আগেই মিম সড়ে যাবে। কিন্তু না মিম সড়েনি'
লাথিটা ওর পেটের উপর গিয়ে লাগলো।মিম
আমার দিকে চেয়ে রইলো'কিছু বলতে সাহস হয়নি'আমাকে অনেক ভয় পায় সে।

ঐসময় মিম প্রেগন্যাট ছিলো।

আমি মনে মনে অনেকটা ভয় পেয়ে গেছিলাম'
আমার মাথায় চিন্তা ঢুকে গেলো।
এখন যদি মিমের কিছু হয়ে যায়'আমি অনেক ঘাবড়ে গিয়েছিলাম'মিমের গর্ভে আমার ছেলে বা মেয়ে সন্তানের কিছু হয়ে যায়।

মিম আমার দিকে তাকিয়ে কান্নার স্বরে বলে"তুমি আমায় লাথি মেরেছ না'একদিন আমার জন্য পস্তাবে।

আমি মিমকে কিছু বলিনি'শুধু ভাবতাম মেয়েটা এমন চুপচাপ কেন'অন্য মেয়েদের মত রেগে কিছু বলে না কেন।কিছুদিন আগে রাতে খাবার খাওয়ার মাঝে কষে একটা চড় মেরে ছিলাম।মেয়েটা ভাত না খেয়ে উঠে চলে গেলো।একটা কথা নিয়ে তর্ক করে ছিলো আর'যখন আমার মাথা ঠান্ডা হয়েছে।

আমি ভাতের প্ল্যাট নিয়ে ওর কাছে গেলাম।বললাম'ভাত না খেয়ে উঠে চলে আসলে কেন?মিম আমার কথার কোনো সাড়া শব্দ দিলো না'

আমি ওর পাশে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম'দেখ একটু একটু এমন হয়'তাই বলে যে ভাত খাবা না এটা কিন্তু আমার একদম পছন্দ না'
মিম আমার কথার উত্তরে বলে"বাবা মায়ের ঘর বাড়ি ছেড়ে তোমার বাড়ি এসেছি'তোমার সাথে সারাজীবন একসাথে বাঁচবো বলে'আর তুমি সেই কি না'কথায় কথায় আমাকে মারো'তাহলে আমি কার কাছে যাবো।

মিম মাঝে মধ্যে কিছু কথা বলে'আমার মন একদম ঘেমে যায়'আমি বললাম'ঠিক আছে আর মারবো না তোমাকে'এখন ভাত খেয়ে নাও?
মিম বলল'দেখ না রাগ করে আছি'তুমি আমাকে খাইয়ে দাও'ওর কথায় আমি হাসি দিয়ে বললাম'পাগলী মেয়ে একটা'মিমকে ভাত খাইয়ে দিলাম'

পরের দিন'সকালে আমার ছোট বোনের সাথে পাঁচ টাকা দামের একটা খোঁপা নিয়ে ঝগড়া হয় মিমের'
ছোট বোন বলতেছে খোঁপা টা নাকি মিমে হারিয়ে ফেলেছে'তার আমার ছোট বোন মিমের গায়ে হাত তুলে ফেলেছে।এই অপরাধের আমার ছোট বোনকে আমি কিছু বলতে পারিনি।

কারণ কি জানেন'

আমি বিয়ের আগে সংসারে মাসে টাকা দিতাম বিশ হাজার'আর এখন বিয়ের পড়ে সংসারে টাকা দেয় দশ হাজার'এই নিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে ঝগড়া হয়ে ছিলো আমার।

আমি সংসারে টাকা দেয় না'সব টাকা আমি আমার বউয়ের পিছনে খরচ করে ফেলি'বাবা মামাকে আমি এটা বোঝাতে পারিনি'বিয়ের পড় একটা ছেলে সংসারে টাকা দিবে কি ভাবে'এখন ছেলের বউ আছে ছেলের ভবিষ্যৎ আছে। আরো কি কত কি'ঐসব কথা আপনাদের নাই বলি।

মিম আমার কাছে এসে বলে"দেখ আজ তোমার ছোট বোন আমার গায়ে হাত তুলে ফেলেছে'তাও তুমি কিছু বলছ না'চুপচাপ রুমে চলে আসলে'

আমি মিমকে বুঝিয়ে ব্যপার টা আর বড় করলাম না'এখানেই শেষ করে দিলাম'

মিম মেয়েটা বুঝের মানুষ'হয়তো আমার কথা সে বুঝে।তার জন্য সে আর দ্বিতীয় বার প্রতিবাদ করে না।

কিছু দিন এভাবে চলে গেলো।একদিন মিম আমার কাছে পাঁচশো টাকা চেয়ে ছিলো'বলে ছিলাম'এখন আমার কাছে টাকা নেই'পরে কোনো একসময় দিব'মেয়েটা দ্বিতীয় বার টাকা চাইলো না'বলল"ঠিক আছে আছে লাগবে না'

ভাবলাম মেয়েটা কোনোদিন আমার কাছে পাঁচশো টাকা আবদার করেনি'আজ করছে কেন'আমি মনে মনে মিমকে সন্দেহ করে ছিলাম'

অফিস থেকে বাসায় এসে মিমকে বললাম'খাবার দাও?মিম বললো বেড়ে নাও না আমি উঠতে পারছি না'নোড়া চড়া করলে অনেক ব্যথা পায়'আমি রাগি স্বরে বললাম'বেড়ে দিবা নাকি উঠে চলে যাবো?মিম বলল'আচ্ছা উঠতেছি তুমি ওখানে বস।

মেয়েটা কিছুক্ষণ পড় তরকারি গরম করে আমায় ভাত বেড়ে দিলো।

খাবার খেয়ে দুজনে ঘুমিয়ে গেলাম' মধ্যে রাতে ব্যথায় মিমের ঘুম ভেঙে যায়'মিম আমাকে বলল"
ঐ উঠো না'পাশের রুম থেকে একটা ব্যথার ঔষধ নিয়ে আসো?আমি বিরক্ত হয়ে বললাম'তুমি আনতে পারো না'আমাকে ডাকছো কেন।দ্বিতীয় বার মিম আমাকে কিছু বললো না'ও নিজে উঠেই ঔষধ খেয়ে নিলো।মিম আমাকে বলল'তুমি আমার জন্য একদিন খুব পস্তাবে মনে রেখ।
আমি কিছু বললাম'মিম ঘুমি গেলো।

কয়েন দিন যাবার পড় কন্যা সন্তানের বাবা হলাম'নিজের স্ত্রীকে আর ফিরে পেলাম না'চলে গেলো না ফেরার দেশে।আজ বড্ড একাবোধ হয়'মিম কে ছাড়া এক রাতও ঘুমাতে পারিনি'বাম পাশের বিছানা টা খালি খালি লাগে'আজ আমি খুব পস্তাচ্ছি মিমের জন্য'ও বলে ছিলো'আমি খুব পস্তাব'ওর কথাটাই রয়ে গেলো' মধ্য রাতে আমার ঘুম ভেঙে যায়'নিজেকে অনেক অসহায় মনে হয়।

মিমকে আমি ফিরে পেতে চাই'চাইলেও আর ফিরে পাবো না'সে আজ আমার কাছ থেকে অনেক অনেক দূরে চলে গেছে।

------------------------*সমাপ্ত*-----------------------------

অনুগল্প
গল্পঃতোমার মায়া
Md Mazharul Haque Himu

খাবার টেবিলের ডানপাশে দাঁড়িয়ে আছে মা আর বামপাশে দাঁড়িয়ে আছে আমার স্ত্রী শ্রাবণী। আমি মাঝখানে বসা। আমার সামনে দুটো বাটিতে...
18/02/2025

খাবার টেবিলের ডানপাশে দাঁড়িয়ে আছে মা আর বামপাশে দাঁড়িয়ে আছে আমার স্ত্রী শ্রাবণী। আমি মাঝখানে বসা। আমার সামনে দুটো বাটিতে একটার মধ্যে শোল মাছের তরকারি রাখা, আরেকটার মধ্যে বোয়াল মাছের তরকারি রাখা। আমি বুঝতে পারছি না কে কোন তরকারিটা রান্না করেছে। বোয়াল মাছের তরকারির দিকে চোখ যেতেই শ্রাবণী হালকা কাশির শব্দ করলো। শোল মাছের তরকারির দিকে যখন হাত বাড়ালাম তখন মা বললো,
- “ এই দিনটা দেখার জন্য তোকে জন্ম দিয়েছিলাম? যে মা এত কষ্ট করে বোয়ালমাছের তরকারি রান্না করলো তুই সেই মায়ের রান্না করা তরকারি না খেয়ে বউয়ের শোল মাছের তরকারির দিকে হাত বাড়ালি। আল্লাহ এই দিন দেখার জন্য তুমি আমায় বাঁচিয়ে রেখেছিলে "

এইকথা শুনে আমি যখন বোয়াল মাছের তরকারির দিকে হাত বাড়ালাম তখন শ্রাবণী বললো,
- “এইদিনটা দেখার জন্য পরিবারের সবার মুখে চুনকালি মেখে তোমার হাত ধরে পালিয়ে এসেছিলাম? যে আমি কোনদিন একগ্লাস পানি পর্যন্ত নিজে নিয়ে খাই নি সেই আমি নিজের হাত পুড়িয়ে রান্না করেছি। এখন তুমি আমার রান্না করা তরকারি না খেয়ে তোমার মায়ের বোয়াল মাছের তরকারির দিকে হাত বাড়ালে?”

অসহায় হয়ে আমি যখন শোল মাছের তরকারির বাটিটা হাতে নিলাম তখন মা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- “ আজ থেকে ২০বছর আগে তোর বাবা যখন আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলো তখন একা হাতে তোকে মানুষ করেছি। তোর কথা ভেবে আমি আর নতুন করে বিয়ে করি নি। সেই তুই আমাকে এই প্রতিদান দিলি?

অবাক হয়ে মাকে বললাম,
-বাবা আবার কবে আমাদের ছেড়ে চলে গেলো? বাবা তো বেঁচে আছে। পাশের রুমেই বাবা টিভি দেখছে।

মা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
- “আবেগে ভুল ডায়লগ বলে ফেলেছি। তুই বোয়াল মাছের তরকারি দিয়ে আগে ভাত খা”

আমি শোল মাছের তারকারি রেখে যখন বোয়ালমাছের তরকারির বাটিটা হাতে নিলাম তখন শ্রাবণী চিৎকার করে বললো,
- “না না না, এটা হতে পারে না। আমার সিঁথির সিঁদুরের দিব্যি লাগে তুমি বোয়াল মাছের তরকারি দিয়ে ভাত খেও না”

আমি অবাক হয়ে শ্রাবণীকে বললাম,
-ইসলামিক শরিয়ত মতে ৩ কবুল বলে আমি তোমায় বিয়ে করেছি। তুমি সিঁথির সিঁদুর পেলে কোথা থেকে?

শ্রাবণী বললো,
- “ বেশি ইমোশনাল হয়ে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের ডায়লগ মেরে দিয়েছি। তুমি শোল মাছের তরকারি দিয়ে আগে ভাত খাও”

এর মাঝে বাবা আমার কাছে এসে বললো,
- “ বন্ধুদের সামনে আমাকে তোর বাবা বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করে তাই না? তাই তো বাবাকে চাকর বলে পরিচয় দিলি। ঠেলাগাড়ি চালিয়ে নিজের রক্ত পানি করে তোকে মানুষ করেছি। আজ তুই এই প্রতিদান দিলি। নিজের বাবাকে সবার সামনে চাকর বলে পরিচয় দিলি”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-তুমি কবে ঠেলাগাড়ি চালিয়েছো? তুমি তো ব্যাংকে চাকরি করতে। আর কোন কালে তোমাকে আমি বন্ধুদের সামনে চাকর বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি?

বাবা কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই শুনি পাশের রুম থেকে একটা গান শুনা যাচ্ছে, "আমার মতো এতো সুখী নয়তো কারো জীবন”

তারমানে আমার বাপজান "বাবা কেন চাকর" মুভি দেখে আবেগে এই ডায়লগ মেরে দিয়েছে। কয়েকদিন আগেও আমার পরিবারটা ঠিকঠাক ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই আমার পরিবারের সবাই মুভি কিংবা সিরিয়ালের একেকজন একেকটা ক্যারেক্টার হয়ে গেছে।

নিজের কষ্টের কথাগুলো যখন আমার বন্ধু মামুনের কাছে শেয়ার করলাম তখন সবটা শুনে মামুন বললো,
-“ আংকেল চাকরি থেকে অবসর নিয়েছে কবে রে?”
আমি বললাম,
-বছর খানিক হবে।
“আংকেল কী বাসা থেকে বের হয় পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে?"
-বাবার তেমন বন্ধু বান্ধব নেই। আর যারা ছিলো তারা একেকজন একেক জায়গায়।

মামুন সি*গারেট ধরাতে ধরাতে বললো,
- “ তোর বউ তো শিক্ষিত। তাহলে ওকে চাকরি করতে বলছিস না কেন?”
আমি বললাম,
-চাকরি করার কি দরকার? বাবার পেনশনের টাকা আর আমার বেতনের টাকা দিয়েই তো সব হয়ে যায়।

মামুন মুচকি হেসে বললো,
- “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা এইকথাটা মানিস? ৪ জনের সংসার তোদের। তুই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাহিরে থাকিস । যার জন্য পরিবারকে সময় দিতে পারিস না। আংকেলও সারাদিন বাসায় থাকে। বউ শ্বাশুড়ি মিলে ৪জনের রান্না রেধে সিরিয়াল দেখে সময় পার করে। কোন কিছু নিয়ে তাদের চিন্তা নেই বলেই সিরিয়ালের ক্যারেক্টার গুলো ওদের মাথায় সারাদিন ঘুরে। যদি পারিস ৩ জনকেই কোন না কোন ভাবে ব্যস্ত রাখ। তোর সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”

মামুনের কথাগুলো শুনে বাসায় এসে দেখি সবাই একসাথে বসে টিভি দেখছে। আমি টিভিটা অফ করে দিলাম। প্রথমে সবাই বিরক্ত হয়েছিলো কিন্তু আমার রাগী চেহারা দেখে কেউ কিছু বলার সাহস পায় নি। বাবাকে বললাম,
-বাবা তুমি মাকে নিয়ে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সাজেক কোথাও ঘুরতে গেছো?
বাবা বললো,
“আমি নিজেই কখনো যাই নি তোর মাকে নিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা”

ব্যাংকের কার্ডটা বাবার হাতে তুলে দিয়ে বললাম,
-তুমি মাকে নিয়ে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সাজেক সব ঘুরে আসবে। আর আমার ক্যামেরাটা সাথে নিয়ে যাবে। যখন যেখানে যাবে সেটার ভিডিও করবে। তোমরা ঘুরে আসার পর আমি শ্রাবণীকে নিয়ে যাবো।

বাবা আমতা আমতা করে বললো, “কিন্তু এই বয়সে—
আমি বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
-তুমি এখনো যথেষ্ট ইয়ং আছো। ঘরে বসে ২১ইঞ্চির টেলিভিশনে দুনিয়া না দেখে নিজ চোখে একটু দেখে আসো। তোমাদের পুরনো প্রেমটাও জাগবে আবার হানিমুনটাও হয়ে যাবে।

আমার কথা শুনে বাবা মা কিছুটা লজ্জা পেলেও তাদের চোখে মুখে অন্যরকম আনন্দ দেখতে পাচ্ছিলাম।

শ্রাবণীর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম,
- এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করেছো কি হিন্দি সিরিয়াল দেখে জামাই নিয়ে টানাটানি করার জন্য? ডিমের হালি যে ৬০ টাকা এই খেয়াল আছে? কোথায় চাকরি-বাকরি করে স্বামীকে একটু সাহায্য করবে তা না, বসে বসে স্বামীর অন্ন ধ্বংস করছে।

আমার কথা শুনে শ্রাবণীর ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেলো। ঠোঁট বাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। মা বাবা কিছুটা রেগে বললো,
- “মেয়েটাকে কাঁদালি কেন?”
আমি হেসে বললাম,
-ওর পুরনো জেদটা জাগানোর জন্য। দেখে নিও এই জেদের জন্যই কয়েকদিনের মধ্যেই একটা চাকরি খুঁজে নিবে।

রুমে এসে দেখি শ্রাবণী ল্যাপটপ টিপছে আর কার সাথে যেন ফোনে চাকরির বিষয়ে কথা বলছে। কথাটা মনে হয় খুব গায়ে লেগেছে। তাই এখনো কান্না থামছে না। কেন জানি শ্রাবণী কাঁদলে ওর সৌন্দর্য্যটা বহুগুণ বেড়ে যায়। আমি আরেকটু কাঁদানোর জন্য বললাম,
-বেগুন ৮০টাকা কেজি ভাবা যায়! আমি একা আর কত করবো? অনেকেই আছে শুধু পায়ের উপর পা তুলে খাবে আর সিরিয়াল দেখবে।

শ্রাবণী কান্না গতি বাড়িয়ে দিয়ে কাকে যেন ফোনে বলতে লাগলো, “ যে কোন চাকরি হলেই চলবে। দরকার পড়লে রাস্তাঘাটে ঝাড়ু দিবো তারপরেও কারো অপমান সহ্য করতে পারবো না”

৩ মাস পর—

মামুন মুচকি হেসে আমায় বললো,
- “আংকেলের ব্লগগুলো সত্যি অনেক সুন্দর হয় রে। আসলে কার ভিতরে কি প্রতিভা আছে আমরা কেউ জানি না”
আমি হেসে বললাম,
-বাবার এখন ব্যস্ততা হলো মাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করা আর সেগুলো ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড করা।

মামুন সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো,
- “শ্রাবণীর কি খবর?”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
-গার্লস স্কুলের টিচার। এখন মেয়েদের শিখায় সবসময় স্বামীর উপর নির্ভরশীল হবে না। তোমরা নিজেরাও কিছু করার চেষ্টা করবে।

মামুন হেসে বললো,
- “তা তোর কি খবর?”
আমি মামুনের হাত থেকে সি*গারেটটা নিয়ে ফেলে দিয়ে বললাম,
-এখন শান্তিতে ভাত খেতে পারি। আর একটা কথা মনে রাখিস। যে ধুমপান করে না তার সামনে ধুমপান করাটা উচিত না।

জলসা পরিবারের পরিবর্তন
আবুল.বাশার পিয়াস

লক্ষ্য করলাম ছেলের বউ আমায় ভিষণ ভয় পায়।অথচ আমি তাকে সবসময় মা সম্বোধনে কথা বলি।একদিন... " মা,চা করতে পারবে?মাথাটা ধরেছে "...
18/02/2025

লক্ষ্য করলাম ছেলের বউ আমায় ভিষণ ভয় পায়।অথচ আমি তাকে সবসময় মা সম্বোধনে কথা বলি।একদিন...

" মা,চা করতে পারবে?মাথাটা ধরেছে "

বউমা ঘড় ঝাড়ু দিচ্ছিলো।আমায় কথায় ঝাড়ু রেখে সঙ্গে সঙ্গে বললো " হ্যা বাবা এক্ষুণি দিচ্ছি "

" ঘর ঝাড়ু দিচ্ছো তো,শেষ করে দাও।এতো তাড়াহুড়ো করতে হবে না "

" চা করে ঝাড়ু দিবোনি।আপনি বসেন "

আমি বেশ চিন্তিত হয়ে পরলাম।কি মুশকিলের বিষয়!মেয়েটা আমায় এতো ভয় পায় কেনো!

বিয়ের শুরুতে ভেবেছিলাম নতুন নতুন তাই ভয় পাচ্ছে।ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।বিয়ের ২ মাস পরও তার ভয় আরো বেড়েছে।ভয় কাটানো আর ভাব জমানোর জন্য দু'একটা ফরমায়েশ দেই।যেমন " মা,মাথায় একটু তেল দিয়ে দিবে? "

ভেবেছিলাম এভাবে ওর ভয় কিছুটা হলেও কাটবে।সেই তেল দেওয়াতেও তার হাত কাঁপতে লাগলো।বোতলের মুখ খুলতে গিয়ে অসাবধানতায় অর্ধেক বোতল তেল ঢাললো আমার মাথায়।তেলে চপচপে শরীর হয়ে গেলো।

বুঝলাম মেয়েটা বাবা মায়ের খুব আদরের।হয়তো তার পরিবারে কেউ তার সাথে রেগে কথা বলে না,বা রাগী কারো সাথে তার পরিচিতি খুবই কম।

কিন্তু আমার পরিবারে আমায় সবাই অকারণে ভয় পায়।ছেলে নিশ্চয়ই বউকে বলেছে আমি রাগী।সেজন্যই বউ এতো ভয় পায় আমায়।কিন্তু বউকে আমি মন থেকে মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছি।অথচ সেই মেয়ে কিনা আমায় দেখে এতো ভয় পায়!

বাজারে গিয়েছিলাম।ঝালমুড়ির দোকান দেখে দাঁড়ালাম।বাচ্চা মেয়েরা খুব ঝালমুড়ি খেতে পছন্দ করে।বিশ টাকার ঝালমুড়ি কিনে বউমার হাতে দিলাম।তার চোখ চকচক করে উঠলো,মিষ্টি হেসে বললো " আমার বাবাও ঝালমুড়ির দোকান দেখলে কিনে আনতো "

মেয়ের আনন্দ দেখে মন ভরে গেলো।এরপর থেকে বাজারে গেলে টুকটাক খাওয়ার জিনিস কিনে আনি।মেয়েটা প্রতিবারই বড্ড খুশি হয়।একদিন আমায় অবাক করে দিয়ে বউমা বললো " বাবা আমার আচার খেতে ইচ্ছে করছে।বাজার গেলে আমার জন্য আচার নিয়ে আসিয়েন "

মেয়ের আবদারে কি যে ভালোলাগা তৈরী হলো!পায়ে ব্যথার জন্য সারাদিন শুয়ে ছিলাম।মেয়ের আবদার শুনে পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে গেলাম দোকানে।মেয়ের আবদার শুনেও কোনো বাবা শুয়ে থাকতে পারে?পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাজার থেকে আচার কিনে নিয়ে গেলাম।এভাবেই ওর ভয় ভাঙ্গাবো।

গল্প : ভয়_ভাঙ্গানো
লেখক : জয়ন্ত_কুমার_জয়

আনারকলি পর্ব-৪৮Mahra Imrozহঠাৎ কোথ থেকে গাছের মালিক এসে দেখে ফেললো এবং চেঁচাতে লাগলো। রস খাওয়া বাদ দিয়ে আচমকা আশফাকের হা...
18/02/2025

আনারকলি
পর্ব-৪৮
Mahra Imroz

হঠাৎ কোথ থেকে গাছের মালিক এসে দেখে ফেললো এবং চেঁচাতে লাগলো। রস খাওয়া বাদ দিয়ে আচমকা আশফাকের হাত ধরে নাকে-মুখে ভোঁ দৌড় লাগালো অনামিকা।

"তাড়াতাড়ি দৌঁড়ান,নয়তো ধরা পড়বো! তাড়াতাড়ি! তাড়াতাড়ি!"

"রসচোরনি একটা।"

"আপনি রসচোর একটা।"

"আমি না তুমি।"

"আমি না আপনি বুঝলেন!"

হায় হায় করে লোকটা ওদের বকতে লাগলো সমানে। পিছু ফিরে লোকটার দিকে তাকিয়ে দৌঁড়াতে লাগলো অনামিকা আর তার দিকে তাকিয়ে দৌঁড়াচ্ছে আশফাক।

"জোরে দৌঁড়াও বউ!"

"পারবো না কোলে তুলে নিন।"

"আসো।"

"ইশ! কি মজা!"

"মেয়ে মানুষ ঢং তো করবেই!"

আচমকা হুমড়ি খেয়ে পড়লো কারো গায়ের উপর। ভেজা চুলগুলো পড়লো মানুষটার চোখে-মুখে। হতভম্ব হলো তিনজন।

"ওরে মা-রে গেলাম রে! আমার কোমড় ভেঙে গেল রে!"

"মেয়েরা জন্মগত ঢংগী হয় এটা না দেখলে বিশ্বাসই হতো না।"

"আউচ! আউচ!"

চট করে উঠে ঘোমটা দিয়ে হাত-পা আড়াল করে ফেললো অনামিকা। আশফাক উঠে। লক্ষ্য করলো নিচে পড়ে আছে ইউসুফ। চমকায় দু'জন।

"আরে ইউসুফ তুমি!"

হাত ধরে তাকে উঠালো। পাঞ্জাবিতে লাগা ধুলো-ময়লা ঝাড়তে লাগলো ইউসুফ।

"জ্বী ভাই আমি। কিন্তু হঠাৎ কী হলো!"

"আর বলো না।"

লক্ষ্য করলো একপাশে গুটিশুটি হয়ে অন্যদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনামিকা। ভয়ে কাঁপছে সে। সেদিনের মতো আজ হলুদ শাড়ি পরনে। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।

"কোথায় যাচ্ছো?"

"মসজিদ থেকে বাড়িতে ফিরছি।"

"ও। আমরা একটু সরিষা ক্ষেতে এলাম।"

"জ্বী ভাই। আপনারা থাকুন আসছি।"

সালাম দিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেল ইউসুফ। আশ্চর্য! যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই ইউসুফ! মানে কী!একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ইউসুফ। এমন একটা কুয়াশা মাখা প্রেম সেও তো চেয়েছিলো তার ম্যাগনোলিয়ার সাথে। এমন একটা কুয়াশা মাখা প্রেম তাদেরও তো হতে পারতো! পারতো না নাকি! হ্যাঁ,পারতো তো! নীরবে হাঁটতে লাগলো। কিছু মানুষ যতই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হোক না কেন দিনশেষে প্রতিটা মানুষই কারো না কারো কাছে কিংবা কারো একটু ভালোবাসার কাছে বেহায়া,নির্লজ্জ। সে আল্লাহভীরু বলে তার মধ্যে প্রেম আসবে না এটা ভুল কথা। প্রেম-ভালোবাসা অন্ধ। এটা ধর্ম-জাতি,পাপ-পূণ্য কিছুই মানে না! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুব বলতে ইচ্ছে করলো,"আমি কতটা বেহায়া দেখেছেন! আপনি অন্যের হয়ে গিয়েছেন তা জানার পরও এখনও আপনাকে ভালোবাসি। ছিঃ! কি জঘন্য! কি নির্লজ্জ! কি বেহায়া আমি!"

"তুমি একটু দাঁড়াও।"

পিছনে এগিয়ে গিয়ে খেজুর গাছের মালিকের সামনে দাঁড়াতেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলো লোকটা। কিছু একটা বলে ক্ষতিপূরণ সহ বেশকিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিতে চাইলে লোকটা নিতে চায়নি তবুও জোর করে দিয়ে চলে এলো। আশফাক জানে কাজটা ঠিক হয়নি কিন্তু পিচ্ছি বউটার আবদারও ফেলতে পারছিলো না। অতঃপর হাঁটতে লাগলো দু'জন। হঠাৎ একটা রিকশা যাচ্ছে। আশফাককে দেখতেই নেমে সালাম দিলো।

"ভাইজান কেমন আছেন?"

"ভালো। তোমাকে দেখা যায় না যে?"

"রিকশা নিয়া ব্যস্ত থাকি আইজকাল। লগে কে ভাবী নাকি?"

"হুম।"

হঠাৎ দেখলো একটা লাল টুকটুকে বিয়ের ওড়না রিকশাতে বেঁধে রাখা। সেদিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো কাশেম।

"বিয়ের ওড়না ওটা?"

ঘোমটার ভিতর থেকে বললো অনামিকা।

"জ্বী ভাবিজান।"

"বেঁধে রেখেছেন কেন?"

"বিয়া করছিলাম সামনের সপ্তাহ। বউ বাপের বাড়ি এহনো তুলে আনি নাই। তাই যেইহেনে যাই ওড়নাটা নিয়া যাই মনে হয় যে বউটা সঙ্গে সঙ্গে আছে।"

ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো ওরা দু'জন। সাথে নেই তবুও একসাথে রয়েছে তারা। অথচ কত লোকে সাথে থেকেও এক সাথে নেই। ভালো থাকুক এমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসারা। এদের ভালবাসাটায় সত্যি কোনো স্বার্থ নাই। এদের ভালোবাসার আরেক নাম নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। মনে মনে একটা নাম দিয়ে ফেললো অনামিকা,নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।

"ভাইজান আসেন পৌঁছাইয়া দিই।"

"তুমি যাও কাশেম। আমরা হাঁটতে বের হয়েছি।"

"আচ্ছা ভাইজান আসি। ভালা থাইকেন,দোয়া কইরেন আমগো লাইগা।"

"দোয়া রইলো।"

সালাম দিয়ে রিকশা নিয়ে চলে গেল কাশেম। ওরা দু'জন হাঁটতে লাগলো। টুপটুপ করে রাস্তার ধার থেকে বেশ কতগুলো ঘাসফুল ছিঁড়ে নিলো অনামিকা।

"শীত আসলে এই একটাই সমস্যা। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ আমি থমকে যাই। রাস্তার পাশে অযত্নে ফুটে থাকা ঘাসফুলকে কেন এত সুন্দর হতে হবে!"

"তোমার কাছে সবই সুন্দর লাগে।"

"কেন লাগে বলুন তো?"

"আল্লাহ তোমাকে একজোড়া সুন্দর চোখ উপহার দিয়েছেন তাই।"

"আচ্ছা এখন আমাকে আপনার মডেল বানিয়ে বুনোফুলের সাথে আরো কয়েকটা ফটোশুট করুন।"

হঠাৎ দেখলো একটা ছাগল গলায় রশি নেই ঘাস খাচ্ছে এত ভোরে। মানে হয়!

"আমার মডেল হতে চাও?"

"হুম।"

"কিন্তু আমি তো ফ্রীতে ফটোশুট করি না।"

"মানে?"

"টাকা লাগবে।"

"কোনো টাকাপয়সা নেই আমার কাছে।"

"আচ্ছা,তো মডেল শুনুন আপনি যদি ওই ছাগলটি ধরতে পারেন তাহলে আপনার ফটোশুট ফ্রী!"

"তাই নাকি!"

"হুম।"

"ঠিক আছে ধরছি।"

ছাগলকে ধরতে গেল অনামিকা কিন্তু তাকে দেখতেই ছাগলটা আকস্মিক ছুটতে লাগলো। হতভম্ব হলো অনামিকা। মানে হয়! কোথ থেকে এলো এই ত্যাদড় ছাগল?সে-ও ছাগলের পিছুপিছু দৌঁড়াতে লাগলো। ছাগল আর অনামিকার দৌঁড়ানি দেখতেই হাসতে হাসতে পেটের মধ্যে খিল ধরে গেল আশফাকের। তবে ফটোশুট করতে ভুললো না। হতাশ হয়ে ফিরে এলো অনামিকা।

"পারছি না। বড্ড দুষ্টু!"

"ঠিক তোমার মতো।"

আচমকা পাঁজাকোলে তুলে হাঁটা ধরলো।

"আহ! কী করছেন মানুষ দেখবে তো!"

"দেখুক!"

"ছাড়ুন!"

"তোমাকে কোলে খুব শান্তি পাই!"

"তাই?"

"হুম!"

"নিশ্চয়ই ফাজলামি করছেন তাই না?"

"একদম না।"

"তাহলে ঠোঁটে বাঁকা হাসি কেন?"

"সে তুমি বুঝবে না মাথামোটা গাধী মেয়ে!"
___

শুক্রবার। আযান হতেই দ্রুত গোসল সেরে বুক হতে হাঁটু অব্ধি একটি সাদা টাওয়াল পেঁচিয়ে কামরায় ঢুকতেই চমকে গেল আশফাক। তাকে দেখতেই হকচকিয়ে চট করে টি-শার্টটি বিছানায় রেখে দিলো অনামিকা।

"কী করলে এটা?"

"কোনটা?"

হাতেনাতে ধরা পড়ে চোরা চোখে-মুখে চাইলো অনামিকা। আমতা আমতা করতে লাগলো।

"আমার টি-শার্ট শুঁকছো যে!"

"কই কিছু না।"

"আমি প্রায়ই লক্ষ্য করি তুমি আমার ব্যবহৃত পোশাকগুলো শুঁকো ব্যপার কী বলো তো?"

"কখন কবে?"

অস্বস্তিতে আড়ষ্ট হয়ে কাঁপতে লাগলো অনামিকা।

"প্রতিদিন দেখি এমনটা করো তুমি। কেন করো?"

"এতো দিকে চোখ যায় কেন আপনার?"

রাগী রাগী ভাব ফুটে উঠলো চোখে-মুখে। অস্বস্তি লুকাতে চাইলো। একটা শাড়ি নিয়ে ভাঁজ করায় মনোযোগ দিলো। অনামিকার মুখোমুখি দাঁড়ালো আশফাক।

"সত্যিটা বলো।"

"নামাজ পড়তে যান।"

"যাবো আগে সত্যিটা বলো।"

পড়লো মহাবিপদে। কাচুমাচু করলো অনামিকা।

"কিছু না।"

"বলো ভৃঙ্গরানি শুনতে ইচ্ছে করছে।"

"স্বামীর ব্যবহৃত পোশাকের ঘ্রাণটা আমাদের বিবাহিত মেয়েদের কাছে সব পারফিউমের ঘ্রাণের থেকে সেরা! এজন্যই আপনার ব্যবহৃত পোশাকের ঘ্রাণ নিই। নিতে ভালো লাগে। আর আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। ঘ্রাণ না নিলে থাকতে পারি না আমি।"

চমকে তাকায় আশফাক। বলে কী মেয়েটা! লজ্জায় লাল হয়ে গেল অনামিকার সুশ্রী মুখশ্রী। মৃদু হাসলো আশফাক। নারীদের মধ্যে এক অসাধারণ ক্ষমতা থাকে,সে চাইলে তার প্রিয় মানুষের কাছে না থাকলেও তার প্রত্যেকটি ব্যবহৃত হওয়া জিনিস থেকে ভালোবাসা শোষণ করে আজীবন কাটিয়ে দিতে পারে। আচ্ছা,অনামিকা কি পারবে তার ব্যবহৃত জিনিস থেকে ভালোবাসা শোষণ করে আজীবন কাটিয়ে দিতে? জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলেও করলো না। থাক না অজানা এই প্রশ্নোত্তরটি। আশফাকের লোমশ বুকের দিকে তাকিয়ে রইলো অনামিকা।

"কী দেখো ওমন করে?"

"আপনাকে।"

"মনে হচ্ছে আমাকে না অন্যকিছু।"

লাজুক হাসলো অনামিকা।

"শুনেছি যে পুরুষের বুকের লোম বেশি সেই পুরুষ নারীকে অনেক ভালোবাসতে জানে।"

"তাই নাকি!"

"হুম।"

"এই উক্তি কার?"

"আমার।"

"তাই তো বলি এমন আজব উক্তি কোনো মনিষীর দ্বারা সম্ভব নয়। সে যাইহোক,জুম্মার দিনে স্বামীকে পরিপাটি করে সুন্দর পোশাক পরিয়ে মসজিদে পাঠানো প্রতিটি স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্য সেটা জানো না?"

"জানতাম না সবে জানলাম।"

"কেন?"

"আগে তো স্বামী ছিলো না তাই।"

"হুম এখন দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করো।"

"যাহা আদেশ নবাব সাহেব। জুমুআয় দোয়ার দরখাস্ত আর সবচেয়ে উত্তম পোষাকটি পরিধান করে রবের ঘরে হাজির হয়ে যাওয়া যাক!"

"হুম।"

আশফাককে রেডি হতে সাহায্য করলো অনামিকা। শুভ্র পাঞ্জাবি জড়ালো দেহে। বুকের বোতামগুলো আঁটকানোর সময় লোমশ বুকে ঠোঁট দুটো ঘষে চুমু খেলো অনামিকা। মৃদু হাসে আশফাক। আতর মেখে মাথায় তাজ পরিয়ে মানুষটার দিকে একপলক তাকালো। কিন্তু দৃষ্টি নামাতে পারলো না অনামিকা। শত চেষ্টা করেও পারলো না। তার শান্ত দৃষ্টিটুকু হঠাৎই অশান্ত হয়ে গেল। ইশ! সাদা পাঞ্জাবিতে মানুষটাকে কি যে পূতপবিত্র লাগছে! কি সুন্দর! চোখ আঁটকে গেল অনামিকার। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো।

"বোল্ড লাগছে আপনাকে।"

"সত্যি!"

"হুম।"

আয়নায় নিজেকে একপলক দেখে নিলো আশফাক। আয়নার মধ্যে চোখাচোখি হলো দু'জনের।

"এইভাবে দেখার কী আছে ভৃঙ্গরানি?"

"তা বুঝবেন না।"

কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো।

"বুঝিয়ে বলো এবার।"

"আপনি অনেক সুদর্শন তাই! আর বললাম না শুভ্র রঙে আপনাকে বোল্ড লাগে।"

"যতটা বলছো ততটাও আহামরি নয়।"

"আপনি তো আপনার চোখ দিয়ে নিজেকে দেখেন না; যদি দেখতে পারতেন তাহলে বুঝতে পারতেন আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ! আর সত্যিই বোল্ড লাগে। কারো নজর না লাজুক!"

চোখের কোণ থেকে কাজল নিয়ে কানের পিছনে লাগিয়ে দিলো। হতভম্ব হলেও নীরব রইলো আশফাক। মানে হয় এইসবের!

"ভীষণ ভালোবাসি বউ!"

খুব খুশি হয় অনামিকা।

"আসছি সাবধানে থেকো। তোমার জন্য কিছু আনতে হবে?"

"হ্যাঁ।"

"বলো।"

"আমার জন‍্য মন ভরে দোয়া করবেন আর আসার সময় আল্লাহর রহমত এবং আমার জন্য জিলাপি নিয়ে আসবেন।"

"ঠিক আছে তোমার জন্য দোয়া করবো আর আমার জন্যও দোয়া করে বলবো আমি যেন আরো তিনটি বিয়ে করতে পারি।"

"কী বললেন?"

"সত্যি বলছি।"

"একটা বিয়ে করা ভালো। প্রথম স্ত্রী ইন্তেকাল না করা অব্ধি দ্বিতীয় বিয়ে করার প্রয়োজন কী?"

"অনেক প্রয়োজন।"

"একদম না। প্রথমজন মা'রা গেলে দ্বিতীয় বিয়ে করা উচিত। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রীর আপত্তি না থাকলে তৃতীয়। আমাদের নবী ও তো খাদিজা (রা) এর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত কাউকেই বিয়ে করেননি তাহলে আপনার কেন চার বিয়ের এত শখ?"

"সে তুমি বুঝবে না ভৃঙ্গরানি! সাবধানে থেকো। আসছি।"

মাথা নাড়ায় অনামিকা। কপালে চুমু খেয়ে মহল থেকে বেরিয়ে গেল আশফাক। দ্রুত ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালো অনামিকা। ব্যালকনির রেলিং ধরে মুগ্ধ নয়নে মানুষটাকে দেখতে লাগলো। যতদূর দেখা গেল ততক্ষণ অব্ধি দেখলো। আশফাক যেতেই সেও গোসল সেরে নামাজ আদায় করে খুব সুন্দর একটি শাড়ি পরে সেজেগুজে তৈরী হয়ে নিলো। আজ জমিদার বাড়িতে শীত উৎসব হবে। অর্থাৎ আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। শীতকালে সবাইকে দাওয়াত করে বড়সড় একটা অনুষ্ঠান রাখেন জমিদার সাহেব। আর প্রতি শুক্রবারে মহলের আঙিনায় বড়সড় পিঠার উৎসব করেন। তাদের বাড়ির সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। দাদা-দাদী,জেঠা-জেঠি,ফুপা-ফুপু সহ মিনুদের সবাইকে। বেগমবাহারের বড়ভাইকেও দাওয়াত করা হয়েছে। মোটামুটি সকালেই এসে পড়েছে মেহমানরা। তাদের বাড়ির লোকজন আসবে জুমার পর এবং রাতে থাকবে।
___

জুমুআ থেকে ফিরার সময় অনামিকার জন্য জিলাপি আনতে ভুললো না আশফাক। লাজুক হাসলো অনামিকা। সে-তো দুষ্টমি করে বলেছিলো আর দেখো লোকটাও নিয়ে এসেছে। এমন ভাগ্য কয়জনের হয়! অবশ্য অনামিকা না বললেও আশফাক আনতো। শ্বাশুড়ি মায়ের কামরায় চলে গেল। শ্বাশুড়ি মাকে একটা দিয়ে নিজে একটা খেল। হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে গেলেন বেগমবাহার। মানে হয় এইসবের! এখন নাকি এই বুড়ো বয়সে জিলাপি খাবেন তিনি। পুত্রবধূর মন রাখতে খেতে হয়েছিলো। শ্বাশুড়ীর কামরা থেকে বেরুতেই হঠাৎ ডাক পড়লো।

"বৌমা শুনো।"

চমকে উঠে দাঁড়ায় অনামিকা।

"জ্বী আব্বাজান।"

"নাও জিলাপি।"

একটা ধরিয়ে দিলেন হাতে।

"আমি খেয়েছি আব্বাজান।"

"আরেকটা খাও। এটা তোমার আর গোলাপবাহারদেরকেও দিয়েছি।"

"জ্বী আব্বাজান আমি যাই।"

দ্রুত চলে গেল অনামিকা। কিছুক্ষণ পর তাদের বাড়ি থেকে মেহমান এলো। দাদা-দাদীকে জড়িয়ে ধরে আবেগে কেঁদে ফেললো অনামিকা। সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় হলো। এরপর সবাই মিলে অপরাহ্নের ভোজ সারলো রাজকীয় ডাইনিংয়ে। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতেই সবার মিষ্টিমুখ করানো হলো। অনামিকার জেঠি,ফুপিরা ঘুরে ঘুরে জমিদার বাড়ির আনাচে-কানাচে সব দেখতে লাগলেন আর হিংসায় পুঁড়তে লাগলেন। অবশ্য তাদের সঙ্গে খাতির জমলো বসন্তবাহারের। কিন্তু অহংকারের জন্য মিশতে পারলেন না বোদলাবাহার।
___

গৌধূলির শুরু হতেই নীলাকাশ কালচে হয়ে কুয়াশার চাদর নেমে এসেছে পাহাড়-অরণ্যের বুকে। শীতের আকাশে সূর্য যেন ঝুপ করে একটু জলদিই লুকিয়ে পড়ে গৌধূলিবেলায়। তবে কেন জানি মনে হলো,পাহাড়ের বুকে আজ সন্ধ্যেটাই যেন খুব ধীরে ধীরে নামলো। আর সেই সন্ধ্যের মুখে শীত জড়িয়ে পাহাড় যখন ঝুপ করে কুয়াশায় লুকিয়ে গেল ঠিক তখুনিই মহলের কোর্টইয়ার্ডে পিঠাপুলির আয়োজন শুরু হলো। পহেলা পৌষ,বাংলা শীত ঋতুর প্রথম দিন। ঝরে পরা পাতার ধূসর রঙে আছে শীতের মায়াবী সৌন্দর্য। তাই অন্য সবাই ধূসর রঙের শাড়ি পরে শীত উৎসব উদযাপন করলেও অনামিকারটা হচ্ছে ভিন্ন আর সেটা আশফাকের পছন্দেই। সুন্দর করে সেজেগুজে পরিপাটি হয়ে অনামিকাকে নিচে যেতে বলে দিয়েছেন বেগমবাহার। বাড়িতে মেহমান ভরপুর। তাই গুছিয়ে এবং সতর্ক হয়ে থাকতেও বলে দিয়েছেন। লাল কমলাভ কালারের একটি কোরা তসর কাতান শাড়ি পরে একেবারেই তৈরি হয়ে নিলো অনামিকা। ভীষণ সুন্দর শাড়িটি। জমিন কমলাভ কালার হলেও শাড়ির আঁচল এবং পাড় টুকটুকে লাল। আর পুরো জমিনে অসম্ভব সুন্দর জরি সুতোর কারুকার্যে খচিত। জমিন এবং পাড়ে থাকা ছোট্ট ছোট্ট ফুলগুলোর উপর স্টোন বসানো। সবমিলিয়ে দেখতে অপূর্ব লাগছে অনামিকাকে। তাকে ওমন রূপে দেখতেই এগিয়ে এলো আশফাক। হকচকায় অনামিকা। একহাতে প্রদীপ তুলে আরেকহাতে চিবুক তুললো। মুগ্ধ নয়নে তাকাতেই আড়ষ্ট হলো অনামিকা। চোখে চোখ রাখলো।

"কী দেখছেন ওভাবে?"

"দীপশিখার আলো বেশি উজ্জ্বল নাকি তোমার মুখাবয়ব ঠিক বুঝতে পারছি না আজ ভৃঙ্গরানি!"

হকচকায় অনামিকা।

"কেন?"

"পুরো রুম এভাবে উজ্জ্বল করলো কে তুমি বুঝি নাকি প্রজ্জ্বলিত দীপশিখা!"

কবিসাহিত্যিকদের মতো মানুষটার ওমন কথায় শ্বাস আঁটকে তাকিয়ে রইলো অনামিকা। আশফাকের চোখে কেমন নেশা।

"ডালিম রাঙা শাড়িতে এভাবে সেজেছ যে আমি বুঝবো কি করে কার তেজ বেশি; তোমার নাকি ওই লেলিহান বহ্নিশিখার!"

আড়ষ্ট হয়ে লাজুক হাসলো অনামিকা।

"অমন করে হাসলে যে আমার দিকে তাকিয়ে; গৃহগর্ভের মৃন্ময়ী কি তাহলে চিন্ময়ী হলো অবশেষে!"

বেশ কতগুলো চুমু খেলো ঘাড়ে,গলায়।

"কবি সাহেব।"

"একদম না। ডালিমকুমারী চলো যাই।"

সায় দিয়ে হাঁটা ধরলো অনামিকা।
__

জমিদার বাড়ির কোর্টইয়ার্ডে পৌঁছালো দু'জন। দেখলো আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে জায়ানরা। চতুর্দিকে পলক বুলাতেই লক্ষ্য করলো জমিদার বাড়ির কোর্টইয়ার্ডজুড়ে আজ লাইটিং করা। জোনাকি পোকার মতো টিমটিম করে গাছের মাথায়ও জ্বলছে বাতিগুলো। মহলের সামনের পুষ্করিণীর সাথের বাগানের প্রতিটি গাছ এবং ফুলগাছে ছোট ছোট রঙবেরঙের বাতি লাগানো হয়েছে এবং পুষ্করিণীর পানিতে বিয়ের দিনের মতো অসংখ্য ম্যাজিক ওয়াটার লিলি ও জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হঠাৎ পাহাড়ের বুকে ফুটে থাকা বুনো সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণ ভেসে এলো। নাসিকায় টেনে নিলো অনামিকা। সেই সাথে দূর থেকে সমুদ্রের শোঁশোঁ হাওয়ার শব্দ ভেসে আসছে ভায়োলিনের সুরের মতো। সবমিলিয়ে অন্যরকম একটা মুহূর্ত উপভোগ করতে লাগলো অনামিকা।

"অমিত কখন এলে?"

"এইতো এইমাত্র।"

হ্যান্ডশেক করলো দু'জন। চোখ পড়লো অনামিকার দিকে।

"উনি!"

"তোমার ভাবী।"

চোখে চোখ পড়তেই তাকিয়ে রইলো অমিত। চোখ না ধারালো কোনো হীরকখণ্ড ঠিক বুঝতে পারলো না অমিত। লাইটের আলো আড়াল করে দাঁড়ানোয় আলো-আঁধারির মধ্যে কেমন জ্বলজ্বল করে জ্বলছে চোখের মণিগুলো। একপলকের এক দেখায় অনামিকার চোখের মধ্যে ডুবে গেল অমিত। দৃষ্টি আর নামাতে পারলো না আঁটকে গেল অনামিকার চোখে।

"অমিত আর ইউ ওকে?"

হকচকিয়ে উঠলো অমিত। ধ্যান ভাঙ্গে তার।

"হ..হ্যাঁ।"

আশফাক বুঝতে পারলো ব্যপারটা। কাঁপন ধরলো বুকে প্রেয়সীকে হারানোর। এতোদিন সবার মুখ থেকে শুনেছে,আশফাক কালো মেয়ে বিয়ে করেছে। কিন্তু কেন করেছে আজ সেটা বুঝতে পারলো। বাবাহ! মেয়েটার চোখের চাহনি কেমন অদ্ভুত লাগলো! মনে হচ্ছিলো সিরিয়ালে যে তাকিয়ে থাকে ইচ্চেধারী নাগিনীরা ঠিক তেমন চাহনি। শরীরে কাঁপন ধরে গেল অমিতের। ভেতরটা হঠাৎ কেমন হাসফাঁস করে জেগে উঠলো। এতোক্ষণ খুব ভালো লাগছিলো কিন্তু হঠাৎ কেমন জানি অশান্তি লাগছে! স্থির হতে পারছে না। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করলো হঠাৎ। আচমকা ভেসে উঠলো চোখজোড়া। কাঁধের উপর স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো।

"অমিত আর ইউ ওকে?"

"হ্যাঁ। আমি ঠিক আছি।"

"তোমাকে অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে।"

"না না ঠিক আছি।"

"এতক্ষণ তো ঠিক ছিলো ও। হঠাৎ কী হয়েছে।"

বললো জায়ান।

"আরেহ! কিছু হয়নি অহেতুক চিন্তা করছো তোমরা।"

"আচ্ছা,কাজ সারি।"

"হ্যাঁ।"

চারভাই এবং অমিত মিলে কাজে লেগে পড়লো। সম্পর্কে অমিত আশফাকের মামাতো ভাই আর পেশায় একজন ডক্টর। গ্রামে তারা কেউ থাকে না। ঢের টাকাপয়সা থাকায় শহরে বাড়ি করেছে ওখানেই থাকে। আর জমিদার বাড়ির যেকোনো উৎসব,অনুষ্ঠানে তারা সবসময়ই উপস্থিত থাকে। তাদের ছাড়া কোনো উৎসব-অনুষ্ঠান জমেই না! মহলের ব্যাকইয়ার্ডে থাকা লাকড়িঘর থেকে বেছে বেছে বড় বড় কাঠ এনে জড়ো করছে জোভান-জোহান। অনামিকার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো জায়ান। কাঠের মধ্যে কেরোসিন ঢেলে খচ করে ঘষে একটা ম্যাচের কাঠি ছুঁড়তেই দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো। কাঠ পুঁড়ে লম্বা লম্বা শিখায় আগুন জ্বলতে লাগলো। মহলের কোর্টইয়ার্ডের আগুনের শিখা জমিদার বাড়ির পুরো পূর্ব অংশই কমলাভ রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। আগুনের চারপাশে ওরা দু'জন সহ আরো বেশ কয়েকজন মানুষ এসে গোল হয়ে বসলো। ফটফট শব্দ করে কাঠ পুড়ছে আর সেদিকে তাকিয়ে রইলো অনামিকা। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে তার কাছে। তাকে আরো একধাপ মুগ্ধ করতে সেই সাথে আবারও মৃদু মৃদু হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসছে পাহাড়ের জংলীফুলের মৃদু সৌরভ। সুয়েটার কিংবা শাল কিছুই গায়ে জড়ায়নি অনামিকা। হুট করে নিজের শরীর থেকে জ্যাকেটটা খুলে জড়িয়ে দিলো অনামিকার গায়ে। মৃদু হেসে নাক মুখের সামনে আসা চুলগুলো সরাতে নিতেই হঠাৎ একটা ঘ্রাণ লাগলো নাসিকায়। অনামিকা জানে ঘ্রাণটা কার। পরিচিত ঘ্রাণে মনটা হঠাৎই কেমন বন্য চঞ্চলা হরিণীর মতো হয়ে উঠলো। এটা কোনো পারফিউমের ঘ্রাণ নয় মানুষটার শরীরের। ঘ্রাণটা বেশ লাগে অনামিকার। মৃদু হেসে চোখ বুজে নাক টেনে শুষে নিতে লাগলো সেই ঘ্রাণ। অন্যরা গল্প করলেও সেদিকে মন নেই অনামিকার। চারপাশে একপলক তাকালো আশফাক। অনামিকার দিকে চোখ পড়তেই ঝলসে গেল মুহূর্তেই। লাল কমলাভ শাড়িতে আর আগুনের কমলাভ আলো অনামিকার মুখের রঙ বদলে দিয়েছে। বদলটা এতোটাই প্রখর আর তেজদীপ্ত যা অলৌকিক শক্তিতে বার-বার ভষ্ম করছে আশফাককে। মনে হলো সে আবার নতুন কোনো মোহে আঁটকা পড়ছে। আর যা এতোগুলো দিনেও এই মোহ তাকে কখনো ছুঁতে পারেনি। আশফাকের ওমন তাকানো চক্ষুগোচর হলো অনামিকার। শিউরে উঠলো শরীরটা আর বুকের ভেতর থেকে আত্মাটাও কেমন যেন তিরতির করে কাঁপতে লাগলো। সেই কখন থেকে অনামিকার দিকে তাকিয়ে রইলো অমিত। বিষয়টি উপলব্ধি হতেই হঠাৎ একপাশে নিয়ে গেল অনামিকাকে। টুপ করে চুমু খেলো গালে। মুখের দিকে বেরিয়ে আসা চুলগুলোয় ফুঁ দিলো।

"ভৃঙ্গরানি,তুমি এবার মায়ের কাছে যাও।"

"কেন?"

"আগুন পোহানো লাগবে না।"

"একটু থাকি না আপনার সাথে!"

"আর না। অনেক হয়েছে এখন যাও।"

মনভার হয় অনামিকার।

"খবর্দার মায়ের কাছ ছাড়া অন্য কোথাও যাবে না। ভালো হবে না কিন্তু।"

মাথা নাড়ায় অনামিকা।

"সাবধান বলছি।"

"আচ্ছা।"

হাত ধরে মায়ের কাছে দিয়ে এলো। সেদিকে তাকিয়ে রইলো অমিত।
______

চলবে~

Address

Khagrachari
Chittagong Division
4400

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Monir Bro posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share