
25/06/2025
লেখা ও ছবি: আরিফ আজাদ ভাই।।
একটা ভিডিও ক্লিপ দেখেছিলাম সেদিন। একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে, সদ্যই কৈশোরে পড়বে এমন একটা বয়স৷ তার সামনে একটা থালা এবং থালায় একটামাত্র শক্ত রুটি। রুটির উপরে একটু লবণ আর সাথে একটা শুকনো মরিচ।
মেয়েটা একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে সেই শুকনো মরিচটা পোড়াল। তারপর লবণটুকুর সাথে মরিচটাকে কচলিয়ে, সেই শক্ত রুটি ছিঁড়ে ওই মরিচভর্তা দিয়ে রুটি খাচ্ছে আর কাঁদছে।
আমি আদৌ জানি না ভিডিওটা সত্য কী না৷ তবে এটুকু নিশ্চিত জানি—আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষজন বাস করেন যাদের কাছে প্লেটে একটুকরো মাংস কিংবা একটু গোশতের ঝোল পাওয়াটাও স্বপ্নের মতোন ব্যাপার।
রাস্তাঘাটে যখন খুব বয়োবৃদ্ধ কাউকে রিকশা চালাতে দেখি, অথবা বাংলাবাজার, গুলিস্তান, চকবাজারের মতো জায়গাগুলোতে যখন এমন কাউকে ভারি জিনিসপত্রে বোঝাই ভ্যান ঠেলতে দেখি—অন্তরটা হুঁ হুঁ করে উঠে। মাঠ ফেঁটে চৌচির হওয়ার মতোন রোদে যখন একজন অশীতিপর বুড়ো মানুষ কয়েক আঁটি শাক আর প্রায় শুকিয়ে যাওয়া সবজি নিয়ে গ্রাহকের আশায় রাস্তার একপাশে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকে—কী যে মায়া লাগে আর কষ্ট হয় বলে বোঝানো দায়।
মাযলুম উপত্যকাগুলোতে আমাদের বাচ্চাদের বয়েসি বাচ্চারা ঘাস রান্না করে খেয়ে বেঁচে আছে কোনোরকমে৷ একটা ভিডিওতে দেখেছিলাম—সমুদ্র থেকে তারা কচ্ছপ ধরে রান্না করে বা পুড়িয়ে খাচ্ছে যা তারা জীবনেও কোনোদিন খায়নি।
আমাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কতো আরাম আর আয়েশে, কতো আনন্দ আর সুখের মাঝে রেখেছেন, তাই না? আমরা ঠিকঠাক খেতে পারছি। পছন্দের খাবার দাবারের কোনো কমতি নেই৷ আমাদের জীবনে খুব কম ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকছে। ভালো পরছি, ভালো জায়গায় ঘুরছি। উৎসব, আনন্দ আর বিনোদনে ভরা যেন আমাদের জীবন।
এই যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের জীবনকে এতো সহজ করেছেন, এতো আনন্দমুখর রেখেছেন আমাদের জীবন, কখনো কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাকে এরজন্য একবার একান্ত নিরালায়, একান্ত মোনাজাতে, একান্ত ফরিয়াদে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি?
কারও নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়, কারও ঘরে নুনও থাকে না, পান্তাও থাকে না৷ অথচ আমাদের ফ্রিজ ভর্তি খাবার, আলমিরা ভর্তি কাপড়। যাবতীয় ইচ্ছা, ছোট আর বড়—আমাদের থাকছে না অপূর্ণ। এই যে জীবনের এই সহজীকরণ, এটা তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলারই রহমত।
কখনো কি এই সহজ জীবনের জন্য দু’ফোঁটা অশ্রু নিবেদন করেছি আসমানের রবের সমীপে?