03/04/2024
কালের কণ্ঠে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে আমার পঞ্চম বই এবং প্রথম নন ফিকশানের নির্বাচিত কিছু অংশ। তারই কিছু অংশ যুক্ত করছি।
(বিজ্ঞান ও ফিচার)
প্রকাশ: ২৪ মার্চ, ২০২৪ ১৪:৩০
কে অপরাধী আর কে মানসিক রোগী?
- মালিহা তাবাসসুম
গোয়েন্দা গল্পে একই রকম মোটিভবিশিষ্ট সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের সঙ্গে মানসিক রোগীর মিল আছে। মানসিক রোগের উপবিভাগগুলো অনেকটা আইডেন্টিকাল টুইনের মতো। অথচ তাদের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক। বিশেষত পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারগুলো এ ক্ষেত্রে বেশি সমস্যাযুক্ত।
কারণ এগুলোর ডায়াগনসিস এবং চিকিৎসা পৃথিবীর কঠিনতম চিকিৎসাপদ্ধতির মাঝে একটি।
চলুন DSM-5-TR এর অন্তর্ভুক্ত মানসিক রোগগুলোর Major Type (প্রধান শ্রেণিবিভাগ)-এর দিকে চোখ বুলানো যাক। তার আগে দেখে নিই DSM কী। এটা হলো সাইকিয়াট্রিস্টদের বাইবেল হিসেবে খ্যাত DSM-5 (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, Fifth Edition)-এ উল্লিখিত সবগুলো মানসিক রোগ।
এতে সব ধরনের মানসিক রোগ আর সেগুলোর ধরন অন্তর্ভুক্ত করা আছে।
প্রধান শ্রেণিবিভাগের শুরুতেই আছে নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার। এ ক্ষেত্রে মায়ের গর্ভে ভ্রূণ যখন ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠে, তখন মস্তিষ্কের গঠনের ক্ষেত্রে কোনো বায়োলজিক্যাল অসম্পূর্ণতা বা অসংগতি দেখা দেয়। এর অনেকগুলো উপবিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—অটিজম।
এরপর প্রধান শ্রেণিবিভাগ হলো নিউরোটিক টাইপ। হরমোন, নিউরোট্রান্সমিটার (মস্তিষ্কে রাসায়নিক বার্তাবাহক) ইত্যাদির বিপাক এবং ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় কোনো অসংগতি দেখা দিলে নিউরোটিক ডিজঅর্ডার দেখা দেয়, যেমন বিষণ্ণতা ব্যাধি, উদ্বেগজনিত ব্যাধি-অর্থাৎ অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন ইত্যাদি।
মানুষ মাত্রই অ্যাংজাইটি থাকবে, ডিপ্রেশন থাকবে। তার মানে আমরা সবাই পাগল? অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশনকে DSM-এ স্থান দেওয়ার মানে কী?
সত্যি বলতে- এ কারণেই ‘Insanity’ কিংবা 'পাগল' শব্দগুলোকে মানসিক স্বাস্থ্য জগৎ থেকে উৎখাত করা হয়েছে। অ্যাংজাইটি আর ডিপ্রেশন যে কত বড় মারণঘাতক হতে পারে, তার গুরুত্ব জেনেই বিশেষজ্ঞরা এদের DSM-এ স্থান দিয়েছেন।
এখানে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। সেটি হলো—DSM-এ স্থান পাওয়া নিউরোটিক ডিজঅর্ডার—অ্যাংজাইটি আর ডিপ্রেশন কি অপরাধীদের শাস্তি লঘু করে দিচ্ছে না?
কল্পনা করুন। একজন মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ঝন্টু তার প্রফেসরকে খুন করে এসে আদালতে বলল—আমি মারাত্মক ডিপ্রেশনের পেশেন্ট। অমুক স্যারের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আমি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়েছি। আমাকে পাঁচ-পাঁচবার সাপ্লি দিতে হয়েছে। তাই ইঁদুর মারার বিষ খাইয়ে তাকে শেষ করে দিয়েছি।
কাজটা তুমি কেন করলে? তুমি বুদ্ধিমান মানুষ। ডাক্তারি পড়ছ।
জবাবে ঝন্টু বলল, ঘটনার সময় আমার আবেগ কাজ করেছে বিবেক কাজ করেনি। তখন আমার বিবেকটাই যদি কাজ করত তাহলে আমি এত বড় পাপের মধ্যে জড়িয়ে যেতাম না!
বিচারক রায় দিলেন, আদালত আসামি ঝন্টুকে ৩০২ ধারা অনুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করল।
বিস্ফারিত চোখে নিজের উকিলের দিকে তাকিয়ে ঝন্টু চিৎকার করে উঠল—এরা এসব কী বলছে? কানাকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছে নাকি! আমি নিজে দেখেছি DSM-এ ‘নিউরোটিক ডিপ্রেশন’ মানসিক রোগ। আমি ‘Mental Disorder Defense’-এ কেন নির্দোষ প্রমাণিত হব না!
ঝন্টু এবং আপনাদের মনে উদয় হওয়া প্রশ্নের জবাব মানসিক রোগের পরবর্তী প্রধান বিভাগ ‘সাইকোটিক ডিজঅর্ডার’ সম্পর্কে জানলেই পেয়ে যাবেন।
সাইকোটিক ডিজঅর্ডারের মধ্যে আছে— সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক রোগ। আগামীতে এগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
লেখক : চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক