13/09/2024
টানা তিন যুগ ৩৬বছর ইমামতির ফলাফল বিদায় বেলা পেলেন পাঞ্জাবি আর পায়জামার কাপড়?
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে ৩৬ বছর ইমামতি করার পর বিদায় নিয়েছেন ইমাম মাওলানা জয়নাল আবেদীন। বিদায় বেলা উপহার হিসেবে পেয়েছেন একটি পাঞ্জাবী আর পায়জামার কাপড়!
সম্প্রতি সরাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম পদ থেকে বিদায় নেওয়া ইমাম মাওলানা জয়নাল আবেদিন সাহেবের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে সরাইল উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদে পেশ ইমাম হিসেবে নিয়োগ পেয়ে একটানা দীর্ঘ ৩৬ বছর ইমামতি করেছেন তিনি। নিজ গ্রামের বাড়ি কুট্টাপাড়া থেকে সাইকেলযোগে মসজিদে এসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘ তিন যুগ। যুগের পর যুগ এই পথ চলায় অনেক কষ্ট শিকার করেছেন কেবল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তবে মসজিদ পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে হাদিয়া হিসেবে সম্মানি পেয়েছেন সর্বশেষ প্রতিমাসে সাড়ে ৫ হাজার টাকা।
জানা যায়, সারা দেশে উপজেলা ভিত্তিক মডেল মসজিদ নির্মাণের অংশ হিসেবে সরাইল উপজেলা চত্বরে নির্মিত হয়েছে একটি মডেল মসজিদ ও ইসলামি রিসোর্স সেন্টার। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উক্ত মডেল মসজিদের নতুন ইমাম, মোয়াজ্জেন ও খাদেম নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় কপাল পুড়েছে সাবেক এই ইমামের।
দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে উপজেলা পরিষদের প্রাক্তন জামে মসজিদে ইমামতি করে আসা মাওলানা জয়নাল আবেদিন নতুন মডেল মসজিদে ইমামতি করার সকল একাডেমিক যোগ্যতা থাকলেও ৪০ বছর বয়সের শর্ত থাকায় এবং বর্তমানে ইমাম সাহেবের বয়স ষাটোর্ধ্ব হওয়ায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফের ইমামতির আবেদন করতে পারেননি তিনি। বাধ্য হয়েই ৩৬ বছরের ইমামতি থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তাঁকে। বিদায় বেলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে তিনি পেয়েছেন একটি পাঞ্জাবি আর পায়জামার কাপড়!
দেশের সরকারি-বেসরকারি লক্ষ লক্ষ চাকুরীজীবিদের সম্মানজনক বেতনসহ অবসরকালীন মোটা অংকের পেনশনের সু-ব্যবস্থা থাকলেও একজন ইমামের বিদায় বেলায় তার বিপরীত। নানা প্রতিকূলতা আর অর্থনৈতিক দৈন্য দশায় শত কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে জীবন সংসার পরিচালনা করলেও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কেবল মাত্র মহান আল্লাহর সন্তোষ্টি আর পরকালে কিছু প্রাপ্তির আশায় একটি পাঞ্জাবি আর পায়জামা নিয়েই নীরবে ইমামতি থেকে অবসরে চলে যান ইমাম সাহেবগণ।
অনেকের ধারণা, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সুন্দর সুন্দর ও কারুকার্যপূর্ণ মসজিদ নির্মাণ হলেও ইমামদের উপযুক্ত সম্মানি দেওয়ার বেলায় দেখা দেয় যতসব সমস্যা ও অভাব। সেই আদিকাল থেকে সামান্য বেতনেই চলছেন বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেনগণ। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সবকিছুর পরিবর্তন হলেও কেবল পরিবর্তন হচ্ছে না ইমাম মোয়াজ্জেনদের সম্মানি।
প্রতিটি মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেনদের দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সম্মানজনক বেতন ও অবসরকালীন আর্থিক সুবিধা প্রদানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।