08/03/2024
১৫ টি কারণে রোজা ভাঙে না, যদিও অনেকে মনে করে, এসব কারণে রোজা ভেঙে যায়।
▬▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬▬
(১) অনিচ্ছাকৃত বমি হলে (মুখ ভরে হলেও) রোজা ভাঙবে না। তেমনি, বমি কণ্ঠনালীতে এসে নিজে নিজে ভেতরে ঢুকে গেলেও রোজা ভাঙবে না। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তির বমি এসে গেছে, তার উপর কাজা নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করেছে, তাকে কাজা আদায় করতে হবে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৭২০; হাদিসটি সহিহ]
(২) শরীর থেকে রক্ত বের হলে, হিজামা করলে বা কাউকে রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমতাবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন (হিজামা করিয়েছেন), যখন তিনি রোজাদার। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯৩৯]
আনাস (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, রোজা অবস্থায় হিজামা তথা শিঙ্গা লাগানোকে কি আপনারা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে, এর ফলে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরুহ হবে।’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯৪০]
সুতরাং, রোজা অবস্থায় রক্ত দিতেও কোনো সমস্যা নেই। কারণ দুটোই একজাতীয় বিষয়। এমনটিই বলেছেন বিশিষ্ট আলিমগণ।
(৩) সুরমা, কাজল, সুগন্ধি ইত্যাদি দ্বারা রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা অবস্থায় সুরমা লাগিয়েছেন। [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৬৭৮; হাদিসটি সহিহ]
তেমনি, শরীর বা মাথায় তেল ব্যবহার করলেও রোজা ভাঙবে না। [ইমাম আবদুর রাযযাক, আল মুসান্নাফ: ৪/৩১৩]
(৪) মশা, মাছি, ধুলাবালি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটে ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না। ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘কারো গলায় মাছি ঢুকে গেলে রোজা ভাঙবে না।’’ [ইমাম ইবনু আবি শাইবাহ, আল মুসান্নাফ: ৬/৩৪৯; শায়খ ইবনু উসাইমিন, রমযান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৩]
(৫) ভুলে কিছু পানাহার করলে রোজা ভাঙবে না। হাদিসে এসেছে, ‘‘যে রোজাদার ভুলে খেয়ে ফেললো বা পান করে ফেললো, সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে; কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯৩৩]
(৬) স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙে না।
কারণ স্বপ্নদোষ হওয়ার বিষয়টি ইচ্ছাকৃত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না।’’ [সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬]
(৭) রোজা অবস্থায় অজ্ঞান, বেহুঁশ বা অচেতন হলে রোজা ভাঙবে না। তাবিয়ি নাফে’ (রাহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) একবার নফল রোজা অবস্থায় বেহুঁশ হয়ে যান। কিন্তু এ কারণে তিনি রোজা ভঙ্গ করেননি।’ [ইমাম বাইহাকি, আস-সুনানুল কুবরা: ৪/২৩৫]
(৮) ইবনু উমার (রা.) বলেন, ‘‘রোজা অবস্থায় মিসওয়াক—কাঁচা বা পাকা ডাল দিয়ে—করলে রোজার কোনো সমস্যা হবে না।’’ এমনকি ইফতারের পূর্বে মিসওয়াক করলেও অসুবিধা নেই। [ইমাম ইবনু আবি শাইবাহ, আল মুসান্নাফ: ৯১৭৩; বর্ণনাটির সনদ সহিহ]
[রামাদানে দিনের বেলায় টুথপেস্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এর কিছু স্বাদ মুখে পাওয়া যায়, ফলে এটি মাকরুহ। তবে, কেউ গিলে না ফেললে রোজা ভাঙবে না]
(৯) নাইট্রোগ্লিসারিন-জাতীয় ইনহেলারে রোজা ভাঙবে না, তবে ভেনটোলিন ইনহেলারে রোজা ভেঙে যাবে। কারণ এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। [মাসিক আল কাউসার সূত্রে মাওলানা হাবীবুর রহমান সংকলিত ‘রমযান মাসের উপহার’]
(১০) নাকে ড্রপ অথবা স্প্রে ব্যবহারের পর তা যদি গলার ভেতরে চলে যায়, তবে রোজা ভেঙে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙবে না। [মাজাল্লাতু মাজমা‘ইল ফিকহিল ইসলামি: ২/৪৫৪; মাসিক আলকাউসার সূত্রে ‘রমযান মাসের উপহার’]
(১১) খাবার ঠিকঠাক আছে কি না, তা বোঝার জন্য ঘ্রাণ নিলে রোজা ভাঙবে না। ইবনু উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘(জিহ্বা দিয়ে) খাবারের স্বাদ গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না, যদি গিলে ফেলা না হয়।’ [রমযান মাসের ৩০ আসর, পৃষ্ঠা: ১৫৫]
তবে, বাধ্য না হলে এমনটি করা মাকরুহ। ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহ.) বলেন, ‘প্রয়োজন ছাড়া খাবার চেখে দেখা মাকরুহ; তবে এতে রোজা ভঙ্গ হবে না।’ [ফাতাওয়া কুবরা: ৪/৪৭৪]
(১২) রোজা অবস্থায় নখ বা চুল কাটতে কোনো সমস্যা নেই। মেয়েরা হাতে-পায়ে মেহেদী দিলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। [শায়খ আহমাদ মুসা জিবরিলের রিসালাহ]
(১৩) সহবাস ছাড়া স্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ঠ হলে রোজা ভাঙবে না। তবে বীর্যপাত হওয়া যাবে না।
আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাদার অবস্থায় (স্ত্রীকে) চুমু খেতেন এবং তাদের সাথে (ঘনিষ্ঠ) মেলামেশা করতেন। তবে, নিজ আবেগ-উত্তেজনার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিলো তোমাদের সবার চেয়ে বেশি। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯২৭]
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘‘বয়স্ক রোজাদারদের (স্ত্রীর সাথে) ঘনিষ্ঠ মেলামেশার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং যুবকদের জন্য মাকরুহ (অপছন্দ) করা হয়েছে।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: হাদিসটি সহিহ]
শায়খ ইবনু উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘কিছু লোক আছে, যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না; তাদের দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায়। এমন ব্যক্তি ফরজ রোজা পালনকালে স্ত্রীকে চুম্বন করা, আলিঙ্গন করা ইত্যাদির মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে সাবধান থাকবে। আর যদি ব্যক্তি নিজের ব্যাপারে জানে যে, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, তাহলে তার জন্য স্ত্রীকে চুম্বন করা ও জড়িয়ে ধরা জায়েয আছে; এমনকি ফরজ রোজার মধ্যেও।’
তবে, সাবধান! রোজা অবস্থায় দিনের বেলা উত্তেজনাবশত সহবাস করে বসলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। তাই, এসব ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা চাই। বিশেষ করে ফজরের পর যখন স্বামী-স্ত্রী ঘুমাতে যান, তখন শয়তান বেশি উত্তেজিত করে তোলে। তাই, এক কাঁথার নিচে না শুয়ে একটু দুরত্ব অবলম্বন করা উচিত।
(১৪) রামাদানে রাতের বেলা সহবাস করতে কোনো অসুবিধা নেই। এমনকি সহবাসের পর গোসল না করে সাহরি খেয়ে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর গোসল করলেও সমস্যা নেই। আয়িশা (রা.) ও উম্মু সালামা (রা.) বর্ণনা করেন যে, (রাতে সহবাসের ফলে) অপবিত্র থাকা অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফজর হয়ে যেতো; এরপর তিনি গোসল করতেন ও রোজা রাখতেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৯২৬]
তবে, ফজরের সময়টি খুব দীর্ঘ না। তাই, কোনোভাবেই যেন ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(১৫) গরমের কারণে, শরীর ঠাণ্ডা করতে কিংবা পিপাসা নিবারণ করতে একের অধিকবার গোসল করতেও সমস্যা নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই কাজটির প্রমাণ রয়েছে। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৩৬৫; হাদিসটি সহিহ]
Nusus