20/09/2023
একজন আহমদ ছফা ❤️
ক'জন চিনেন? কে এই আহমদ ছফা?
একবার খালেদা জিয়া আহমদ ছফাকে ফোন করে দাওয়াত করেছিলেন। তিনি বেগম জিয়াকে বলেছিলেন, যেতে পারি এক শর্তে। আমাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে হবে। শেখ হাসিনার কাছে গিয়েছিলাম। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাকে রান্না করে খাইয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার রান্না করার সময়ও হয়নি, ছফাও আর যাননি।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছফার আরেকবার ফোনালাপ হয়েছিল। উপলক্ষ ছিল এনজিও ব্যুরো থেকে 'বাংলা-জার্মান সম্প্রীতি'র রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে। ছফা ই বেগম জিয়াকে ফোন করেছিলেন। ফোনটি ধরেছিলেন তাঁর পিএস। ছফা বিনয়ের সঙ্গে পিএ কে বলেছিলেন, ম্যাডামকে কি একটু দেয়া যাবে? আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
পিএ সাহেব জানতে চাইলেন, 'আপনি কে?'
ছফার জবাব, 'আমি আহমদ ছফা।'
পিএ সাহেব ফের জানতে চাইলেন, 'কোন আহমদ ছফা?'
পিএস-এর কথায় ছফা ভয়ানক রকম খেপে গিয়েছিলেন। তিনি রাগলে সচরাচর যে গালটি তাঁর মুখ দিয়ে বের হত সেটি বেরিয়ে গিয়েছিল। তারপর তিনি কোন রকম ভূমিকা না করে বললেন, 'বাংলাদেশে আহমদ ছফা দু'জন আছে নাকি?'
ছফা কথা না বাড়িয়ে রিসিভারটি ধপাস করে রেখে দিয়েছিলেন।
পিএ সাহেব ছফার এ অশোভন আচরণের কথা বেগম জিয়াকে জানিয়েছিলেন কিনা জানা যায়নি। কিছুক্ষণ পরে বেগম জিয়া ফোন করেছিলেন। ছফা র কথার ঝাল তখনও থেকে গিয়েছিল। ফোন পেয়ে তিনি বেগম জিয়াকে বিরক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, 'ম্যাডাম, কী সব অশিক্ষিত পিএ টিএ রাখেন। আহমদ ছফার নাম জানে না।'
আহমদ ছফার কথায় বেগম জিয়া হেসে জবাব দিয়েছিলেন, 'আমি নিজে অশিক্ষিত; শিক্ষিত মানুষ পাব কোথায়। আপনারা কেউ তো এগিয়ে আসছেন না।'
বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় কলকাতার বই আসত। আহমদ ছফা এর বিরোধীতায় নামেন। তার বিরোধীতার ফলে কলকাতার বই আসা বন্ধ হয়। ছফা কাজটা করেছিলেন দেশের লেখকদের কল্যানের জন্য কিন্তু এ দেশেরই লেখক শওকত ওসমান তাকে বাজে লোক বলে মন্তব্য করেন।
এরপর আহমদ ছফা তাকে নিয়ে নিউমার্কেটের বইয়ের দোকানে দোকানে নিয়ে যান। গিয়ে জিজ্ঞেস করেন শওকত ওসমানের কোন বই আছে কিনা। লেখককে কেউই চিনতে পারল না। তখন কলকাতার একজন সাধারণ মানের লেখকের নাম বলতেই অনেকগুলো বই বের করে দিল। আহমদ ছফা তখন শওকত ওসমানকে বললেন,
"দেশটা আমরা বা ল ছেঁড়ার জন্যে স্বাধীন করেছি?"
*বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার আহমদ ছফাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাষ্ট্রদূত হওয়ার জন্য। কিন্ত, তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন বললেন শর্ত আছে তখন আহমদ ছফা বলেছিলেন, 'শর্ত ছফার জন্য নয়, আপনি অন্য কাউকে দেখুন।' এতে শেখ মুজিবর অত্যন্ত রুষ্ঠ হন। পরবর্তীতে তাকে অনুরোধ করেছিলেন, শিক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার জন্য। আহমদ ছফা বলেছিলেন সম্ভব নয়।
আমাকে ধারণ করার মতো শক্তি আপনার সরকার বা আপনার প্রশাসনের নেই।
*হুমায়ূন আহমেদ সহ কয়েকজন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন কেউ বিয়ে করবেন না। সবাই বিয়ে করেছিলো এক আহমদ ছফা ছাড়া। তিনি চিরকুমার ই ছিলেন।
বাংলা সাহিত্যে এ পর্যন্ত যত প্রাবন্ধিক, লেখক এবং সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেছেন তন্মধ্যে আহমদ ছফাই সবচেয়ে সাহসী, বুদ্ধিমান, কুশলী, বহুমুখী, সাধারণ এবং তেজময়। নির্লোভ মননশীলতা এবং সত্যসমৃদ্ধ স্পষ্টবাদিতার জন্য তাঁকে ভয় পেতেন সে সময়ের সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবিরা।
কেউ যদি কয়েক পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ পড়ে কোনো বিষয়ে নিবিড় জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে তার জন্য সহজ ও বিচক্ষণ উপায় হচ্ছে আহমদ ছফার প্রবন্ধ পাঠ।
যিনি সব সময় সত্য কথা বলতে ভয় পেতেন না এবং সকল অন্যায় এর প্রতিবাদ করতেন। এই সেই ছফা যিনি স্বাধীন বাংলাদেশে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর পরিবারকে গৃহহীন করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
২০০১ সালের ২৮ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থনে দাফন।
ওনার একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি —
"কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট।"
© সংগ্রহীত ও পরিমার্জিত!