19/04/2023
- অদ্ভুত তো? স্যার,আপনি আমার গায়ে টাচ কেন করছেন?
- চুপ!একটা কথাও বলবানা। ভদ্র মেয়ের মত বসে থাকো।
- কিন্তু স্যার এসব কি করছেন।যেতে দিন আমাকে।
- কিছু হবেনা। আমাকে দশ মিনিট সময় দাও। এরপর তুমি চলে যাবে।
রুপার দিনটা সেদিন থেকে অভিশপ্ত। রফিক স্যারের কাছে প্রতিদিন সকালে প্রাইভেট পড়তে আসে। পড়াশুনায় অনেক ভালো পড়ান তিনি। এটি কারো অজানা নয়। কিন্তু উনি ভিতরে মানুষটা কেমন।আপাতত সেটি রুপা জেনেছে। সকালবেলা রুপাকে বসিয়ে রেখে,রুপার বিভিন্ন অঙ্গে স্যার হাত দিয়েছে। প্রাইভেট প্লেস ছুঁয়ে স্যার রুপাকে বলে," এটি আমার একটা পার্সোনাল টেস্ট ছিলো।তুমি কাওকে কিছু বলবা না কিন্তু। আজকে যাও"।
রাতে রুপা বারান্দায় একা বসে আছে।ভাবছে সকালের ঘটনাটি। নিজের কাছে নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসেবে,উনাকে সবসময় সম্মানের চোখে দেখে রুপা। এবং এটিও জানে,আজকে তার সাথে ভালো কিছু হয়নি। আর এসব বলবেও বা কাকে,তাতে নিজের সম্মানকেই আঘাত করা হবে।
রাত-২ টা।
বিছানায় বসে বসে রুপা ভাবছে ২ বছর আগের ঘটনা। আজ তার সাথে তেমন বড় কিছু হয়নি। বড় কিছু বলতে,২ বছর আগের ঘটনার চেয়ে ছোট। রুপার একজন প্রেমিক ছিলো। যে ২ বছর আগে রুপাকে ছেড়ে, অন্য এক মেয়েকে বিয়ে করে নেয়। বিচ্ছেদ হওয়ার আগে রুপার সাথে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় সে। যা রুপাকে ক্ষণে ক্ষণে শেষ করে দিচ্ছিলো। সব কিছু ভুলে যখন রুপা আবার নতুন জীবনে পা দিয়েছে। তখন নতুন করে আগমন ঘটলো এই স্যারের। রুপা টেবিল থেকে মোবাইল ফোনটা হাতে নেয়। এরপর স্যারের নাম্বার ডায়াল করে কল দিলো। রফিক স্যার ঘুমের ঘোরে ফোন রিসিভ করে বলল," আরে রুপা? এতো রাতে? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?"। স্যারের কন্ঠ শুনে রুপা ভয় পেয়ে যায়।ভেবেছে কল দিয়ে বলবে,যাতে আর কোনোদিন রুপাকে এইভাবে টাচ না করে। কিন্তু মেয়ে মানুষ। অল্পতে হয়রান হয়ে যায়( সবার ক্ষেত্রে নয়)
রুপা কল কেটে দিলেও,পরবর্তীতে রফিক স্যার কয়েকবার কল দেয়। কিন্তু রুপার সাহস হয়নি ফোন রিসিভ করার। ভয়ে ফোন সাইলেন্ট করে শুয়ে যায়।
পরেরদিন সকাল।
রুপা প্রাইভেটে আসে। মোট ১২ জন স্টুডেন্ট পড়ায় এই সময়। রফিক স্যার প্রতিদিনের মতো পড়াচ্ছে। পড়া শেষে যখন সবাই উঠে যাবে। তখন তিনি বললেন," রুপা,তোমার বাবা কল দিয়েছে। তোমাকে বলেছে কিছু?"। হটাৎ স্যারের এমন প্রশ্ন শুনে রুপা অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। বাকিরা ভেবেছে ঘরোয়া সমস্যা তাই যে যার মত বেরিয়ে পড়ে। রুপা ডাউট ক্লিয়ার করার জন্য দাঁড়ায়। এই সুযোগ নিয়ে রফিক স্যার সোজা দরজা লাগিয়ে দেন। রুপা এইবার ভয় পেয়ে স্যারকে বলল," স্যার, কি করছেন আপনি। দরজা কেন লক করলেন"। রফিক স্যার কোনো কথায় কান দেয়নি। পকেট থেকে ফোন বের করে সোজা রুপাকে দেখায়। রুপা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে,গতকালকের ভিডিও। যেখানে রুপার বুকে স্যারের হাত দেওয়া দেখাচ্ছে।
রুপা ভয়ার্ত স্বরে বলল," আপনি এইটা কি করলেন স্যার?"। রফিক স্যার রুপার কথায় একটা মুচকি হাসে। এরপর ফোন পকেটে নিয়ে রুপার দিকে তাকায়। রুপার সারা শরীর তখন থরথর করে কাঁপছিলো। রফিক স্যার বললেন," টেবিলের উপর বসো।চুপচাপ থাকবা। নয়তো তোমার ভিডিও সারা কলেজ দেখবে"। রুপার স্বর বন্ধ হয়ে যায়। একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকে। রফিক স্যার সোজা এসে রুপার ওড়না ফেলে দেয়। এরপর শরীর থেকে ধীরে ধীরে বস্ত্র খুলে নেয়।রুপা ভয়ে গোংরানি দিয়ে যাচ্ছে। তবে লাভ হয়নি। ২ বছর আগে রুপার প্রেমিক যা করেছে। সেই একই কাজ আজ রফিক স্যার করতে যাচ্ছে। রুপা টেবিল শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়। রফিক স্যার রুপাকে জড়িয়ে ধরে......... ।
১৬ মিনিট পর.....
"যাও,আজকের এই ঘটনা যেনো কেও না জানে"। কথাটা বলে রফিক স্যার উনার চেইন লক করলো। রুপাও অসুস্থের মতো শরীরের বস্ত্র ঠিক করে। এরপর ব্যাগ নিয়ে বের হয় বাহিরে। কিছু করার ছিলো না তার। এই অভিজ্ঞতা হয়তো তার নতুন নয়। কিন্তু এই ভয় তার জন্য নতুন। এইভাবে ভয় দেখিয়ে কেও তাকে কখনো ভোগ করেনি। মাথা নিচু করে কলেজ গেটের সামনে চলে আসে। তখনি রুপাকে চমকে দিয়ে কেও বলল," রুপা? তোর চেহারা এমন উদাস কেন?"। রুপা মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে,রুপার বান্ধুবী মেঘা দাঁড়িয়ে আছে। আর আচমকা মেঘা কথা বলে উঠায়,রুপা একটু চমকেও যায়। মেঘা কিছুটা সন্দেহ করে। একটু এগিয়ে এসে মেঘা বলল," গতকাল প্রাইভেট শেষে তোকে নারাজ দেখলাম।আজও তোকে নারাজ দেখাচ্ছে। স্যার দেখলাম তোর সাথে আলাদা সময়ও কাটিয়েছে। ব্যাপার কি। কিছু করেছে উনি?"। মেঘার কথা শুনে রুপা আরো ভয় পেয়ে যায়। কারণ মেঘা বরাবর সন্দেহ করলো। রুপারও ইচ্ছে হচ্ছে,মেঘাকে সব বলতে। কিন্তু স্যারের কাছে রুপার ভিডিও রয়েছে। এখন যদি মেঘাকে কিছু বলা হয়। তবে স্যার সেই ভিডিও পাবলিশ করে দিবে। ভয়ার্ত স্বরে রুপা মেঘাকে বলল," না, শরীরটা খারাপ লাগছে আমার। আজ যাই,ক্লাস করবো না"। বলে রুপা চলে যায়। মেঘা রুপার চলে যাওয়া দেখছিলো। এবং এটিও খেয়াল করে,রুপার জামার পিছনে কিছু ব্লাড লেগে আছে।
বিকেল ৫ টা।
দরজা বন্ধ। রুমের লাইটও বন্ধ। হাটুর উপর মাথা ফেলে রুপা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। বাহিরের জগৎ তাকে আঘাত করলেও,এই অন্ধকার রুম রুপার জন্য পারফেক্ট স্থান। যেখানে সে অন্ধকারের সাথে নিজের কষ্ট ভাগ করে নেয়। আজ আবার মনে পড়ে যাচ্ছে আসিফের কথা। ২ বছর আগে, আসিফ রুপার সাথে কম করেনি। সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন ওরা একত্রিত হতো। আর প্রতিবারেই শারীরিক সম্পর্কে জড়াতো। সেটি ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে। কিন্তু আজকেরটা? একজন বৃদ্ধ শিক্ষক, যার বয়স ৪০ পার হবে। সেও মজা লুটে নিলো। কাওকে বললেও সমস্যা,না বললেও সমস্যা। একমাত্র পথ আত্মহত্যা। তবে এটিও সমাধান নয়। আত্মহত্যা মহা পাপ,বেচে থেকেও করা হচ্ছে পাপ। রুপা উত্তর খুঁজে পায়না,তার করণীয় কি। এসব ভাবনার মাঝে রুপার মোবাইল ফোন বেজে উঠে। রুপা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে,নিপার কল। নিপা রুপার ক্লাসেই পড়ে। তেমন একটা সম্পর্ক নেই। মাঝে মাঝে পড়াশুনার ব্যাপারে কথা হয়। রুপা ফোন রিসিভ করার পর বলে," হ্যালো নিপা। কি অবস্থা"। কিন্তু রুপার জবাব অন্যভাবে দেয় নিপা। ওপাশ থেকে নিপা বলল," অবস্থা পরে জানা যাবে। এখানে রফিক স্যারের অবস্থা খারাপ।তাড়াতাড়ি আলীপুরের পুরাতন বাড়িতে আয়। তোর জন্য সবাই অপেক্ষা করছে"। কথাটা বলে নিপা কল কেটে দেয়। রুপা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। হটাৎ কল দিয়ে তাকে পুরাতন বাড়ি কেনো যেতে বলা হলো। আর রফিক স্যারের নাম উল্লেখ করলো কেন নিপা। তবে কি ওরা সব জেনে গেছে? রুপার মাথা ঝিম ধরে যায়।চারপাশ যেনো ঝিরঝির করে উঠে। পায়ের গোড়ালি কাঁপতে শুরু করে তার। কোনোভাবে রুপা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। এরপর ওড়নাটা নিয়ে বেরিয়ে যায় পুরাতন বাড়ির দিকে।
আলিপুর হচ্ছে রুপাদের বাড়ির পাশে। মাঝে একটা খাল থাকায়,গ্রাম দুইটা। রুপার কলেজও আলিপুর গ্রামে। খাল পার হলেই সোজা রাস্তা।আর যদি রাস্তার বাম পাশের চিকন রাস্তায় যাওয়া হয়। তবে সেই পুরাতন বাড়িতে যাওয়া যায়।রুপা খাল পেরিয়ে পুরাতন বাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িটা দোতলা। এই বাড়িটার একটা ইতিহাস আছে। ১৯৬৮ সালে ব্রিটিশরা এই বাড়ি নির্মাণ করেন। আলিপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। সেই মুক্তিযোদ্ধারা তখন প্রাণপণে লড়াই করে। আর সবাই শহীদও হোন। তখন থেকে এই ব্রিটিশদের বাড়ি পরিত্যক্ত হয়।
রুপা বাড়িটার দোতলায় উঠে।উপরের রুমে গিয়ে দেখে,একটা চেয়ারে রফিক স্যার বসে আছে। স্যারের হাত-পা বাধা।রুপা স্যারকে দেখে হতভাগ। সবচেয়ে বড় কথা স্যারের চারপাশে ১১ জন আছে। এরা সবাই রুপার কলেজের।কেও সিনিয়র, কেও জুনিয়র।তাদের নাম হচ্ছে, মেঘা,রিয়াজ,নিপা,মোহনা,দিনা,আশিক,মাইশা,নুসরাত,জয়া,শহিদুল আর মীম। অর্থাৎ ৩ জন ছেলে আর ৮ জন মেয়ে। রুপা সবাইকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সবার মধ্যে রিয়াজ এগিয়ে আসে রুপার দিকে। রুপা ভয়ার্ত চাহনিতে রিয়াজের দিকে তাকায়। রিয়াজ রফিক স্যারের ফোনটা রুপার হাতে দেয়। এরপর বলে," এই ফোনেই সব রয়েছে। তুমি এই ফোনকে যা ইচ্ছে করতে পারো"। রিয়াজের কথা শুনে রুপার চোখে পানি জমে যায়। খুশিতে রুপা হুট করে রিয়াজকে জড়িয়ে ধরে। রিয়াজ রুপাকে শান্তনা দিতে লাগলো। রুপার সব কান্না যেনো এখন বেরিয়ে আসবে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে সে। রিয়াজ এমতাবস্থায় রুপাকে বলে,' এই ফোন আর রফিক।দুইটার সাথেই তুমি যা ইচ্ছে তা করতে পারো"। কথাটা বলে রিয়াজ রুপাকে ছেড়ে পিছনে তাকায়। পিছন থেকে আশিক একটা হাতুড়ি দেয় রিয়াজের হাতে। রুপা স্যারের দিকে তাকিয়ে ভালোই বুঝতে পারে,রুপার আসার আগে রিয়াজরা স্যারকে ইচ্ছেমত কেলিয়েছে। স্যারের মুখে মারের দাগ স্পষ্ট ফুটেছে। এসব কথোপকথনের মাঝে রফিক স্যার রুপাকে বলে," আমি তোদের কি করবো ভাবতেও পারবিনা। তোদের সবার খারাপ দিন শুরু হবে"। রফিক স্যারের কথা শুনে রিয়াজ পিছন ফিরে তাকায়। তখনি রুপা রিয়াজের হাত থেকে হাতুড়ি কেড়ে নেয়। আর দৌড়ে গিয়ে স্যারের মুখে সজোরে হাতুড়ির বারি দেয়। সবাই রুপার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার ভয়টা অন্তত কমবে এইবার। এরপর রুপা স্যারের ফোনটা ফ্লোরে ফেলে দেয়। ফেলার পর হাতুড়ি দিয়ে ফোন ইচ্ছেমত ভাঙ্গতে শুরু করে। হয়ে যায় ফোন টুকরো টুকরো। তবুও রুপার যেনো মন ভরেনা। এইবার হাতুড়ি ফেলে পা দিয়ে ফোনটাকে ভাঙ্গতে শুরু করে। যেনো শত বছরের রাগ সে কমিয়ে নিচ্ছে। রুপাকে উত্তেজিত হতে দেখে মেঘা দৌড়ে যায়। আর রুপাকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে লাগলো। তখনি পিছন থেকে শাহিদুল ডাক দিয়ে বলল," সর্বনাশ, স্যার তো মারা গেছে"।
চলবে......?
গল্প- #সে_আসছে ( পর্ব-০১)
লেখক- # নুরসাত ফারিয়া এবং MD Sumon Islam Rana
[ বেশি বেশি লাইক,কমেন্ট শেয়ার করলে। শিঘ্রই পরের পর্ব আপ দিবো। তো শুরু হয়ে যাক?]