30/09/2021
বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড (পরিমার্জন প্রসঙ্গ)
*
১৯৯৯ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী প্রশংসা ও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য হিসাবে বিবেচিত, একইসাথে আরবি, তার্কিশ (তুর্কি), ডাচ, স্প্যানিশ, নরওয়েজিয়ান (নশক্), পার্সিয়ান (ফার্সি) ভাষায় অনুবাদ হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ১৫ লক্ষ কপির বেশী বিক্রিত বৌদ্ধ মতালম্বী ও বুদ্ধ গবেষক Jane Hope রচিত Introducing Buddha বইটির ২০০৫ সালের ৫ম সংস্করণকে নট ফর সেল ক্লাবের অনুবাদক ও সম্পাদনা পরিষদ বাংলায় অনুবাদ এবং রঙ সম্পাদনা করে ক্লাবের সদস্যদের জন্য “বিক্রয়ের জন্য নয়” প্রকাশনা হিসাবে নিয়ে আসে!
ক্লাবের দৃৃষ্টিতে অনুবাদগত ছোটখাট ত্রুটি ছাড়া “বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড” বাংলা সংস্করণে বিশেষ কোনো ভুলভ্রান্তি নেই; তবে বইয়ের ১২৬ এবং ১২৮ পৃষ্ঠায় মূল বইয়ের অনুরূপ/হুবুহু থাকা দুটো দৃশ্যকল্প এবং বাংলাদেশে বসবাস করা বৌদ্ধ ধর্মমতের থেরবাদী ভাবধারার কিছু ভাবনার সাথে ভিন্নমতের জন্য “বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড” গ্রন্থটিকে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়!
বলে রাখা ভালো: ক্লাব কেবলমাত্র তার সদস্যদের জন্য “কালেক্টর’স এডিশন” হিসাবে বই নির্মাণ করে এবং ক্লাবের বই নীতিগতভাবেই “বিক্রয় এবং হস্তান্তর নিষিদ্ধ”। বুদ্ধকে ভালোবাসার জায়গা থেকে ১১টি বৌদ্ধ বিহারে ১১টি অতিরিক্ত কপি সম্মানসূচক দান করতে গিয়েই Not For Sale Club প্রথমে আলিঙ্গন এবং পরে পৃষ্ঠটান ঘটনাক্রমের অভিজ্ঞতা পায়!
বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড একটি আন্তর্জাতিক মানের বই; বাংলাদেশে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্মের একটি মতবাদকে সমর্থন দিতে এই বই রচিত হয়নি। ধর্ম-মত-নির্বিশেষে সব সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কাছে সংক্ষেপে বুদ্ধের জীবনী, দীক্ষা এবং বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস তুলে ধরার উদ্দেশে বইটি লেখা হয়েছে। বইটিতে বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন উপধারা, মতবাদ নিয়েও সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে; এতে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকায় বিদ্যমান রক্ষণশীল মতবাদ “থেরবাদ” নিয়ে যেমন আলোচনা আছে তেমনি তিব্বতীয়, চীনা বৌদ্ধ ধর্ম নিয়েও আলোচনা আছে।
বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড পাঠ করে একজন অবৌদ্ধ খুব সহজেই বুদ্ধ এবং বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। প্রসঙ্গত: ৫৯ গ্রন্থ (২৫ খণ্ড) বাংলা ত্রিপিটক পড়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়; এমনকি স্বয়ং বৌদ্ধদের মাঝেও খুব কম সংখ্যক ব্যক্তিই পূর্ণাঙ্গ ত্রিপিটকের হাজার হাজার পৃষ্ঠা পাঠ করেছেন।
বুদ্ধের জীবন, দীক্ষা, বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস এবং বিশ্ব জুড়ে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার সম্পর্কে জানার জন্য “বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড”-এর মতো সহজ বাংলায় লেখা আর একটি বইও সম্ভবত নেই। এটি কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়, এটি নন-ফিকশন ধারার বই এবং এই বইটি বাংলা নন-ফিকশন অনুবাদ অঙ্গনে একটি মাইলফলক হবার দাবী রাখে!
এতকিছুর পরেও ক্লাব বাংলাদেশে বসবাসকারী বৌদ্ধ ধর্মমতের থেরবাদী অংশের আপত্তিগুলো আমলে নিয়ে “বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড” গ্রন্থটির সংশোধিত ২য় পেপারব্যাক সংস্করণ উভয়-পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে পূণরায় নির্মাণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আলোচনা ফলপ্রসু করতে অনুবাদক ও সম্পাদনা পরিষদের ৪ সদস্যের একটি দল গঠন করেছে! ক্লাবের এই দল মূল বইটির সাথে বাংলা অনুবাদটির ভুলভ্রান্তিগুলো পর্যালোচনা করবে এবং ১২৬ ও ১২৮ পৃৃষ্ঠার দৃশ্যকল্পদুটিকে ঢেকে দেবার বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে!
“নট ফর সেল ক্লাব” আশাকরে এই পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে “বুদ্ধ: গ্রাফিক গাইড” গ্রন্থটি নিয়ে সবার সকল ধরণের বিব্রত অবস্থা পূণরায় ভালোবাসায় রূপান্তরিত হবে!
“সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু!
জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক!”