31/12/2020
সিলেটে মাইক্রোবাস বিস্ফোরণ!
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের মুখে সেই ভয়ঙ্কর সময়ের বর্ণনা।
সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক। ভোর সাড়ে ৫টা। অন্ধকার কেটে গেলেও পূর্বাকাশে ফোটেনি উজ্জ্বল আলো, কুয়াশা কাটেনি তখনও। মালবাহী ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলেন চালক। কিন্তু তিনি জানতে না, তার এই গাড়ি থামানোই থামিয়ে দেবে চার-চারটি জীবন।
দাঁড়ানো পণ্যবোঝাই সেই ট্রাকের দ্রুত বেগে আসা একটি মাইক্রোবাস (নোহা গাড়ি) আছড়ে পড়ে। মাইক্রোবাসে সামনের অংশ ঢুকে পড়ে ট্রাকের পেছনে। সংঘর্ষ আর গ্যাস সিলিন্ডার ফাটার প্রচণ্ড আওয়াজে কেঁপে উঠে চারপাশ। কিছু বুঝে ওঠার আগে আগুন ধরে যায় পুরো মাইক্রোবাসে। চালকসহ যাত্রী ছিলেন ৬ জন। পেছনের গ্লাস ভেঙে ৩ জন বেরিয়ে আসলেও সামনে থাকা চালকসহ ৩ জন জীবন্ত দগ্ধ হয়ে যান। আর্তনাদ করতে করতে মারা যান ঘটনাস্থলেই।
এদিকে, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ছাদসহ ওপরের অংশ উড়ে যায়। এর থেকে একটি ধাতব অংশ ছুটে গিয়ে ৩শ ফুট দূরে কলোনির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ৭ বছরের শিশুর শরীরে আঘাত করে। পরে অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে নেওয়ার পথেই শিশুটি মারা যায়।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোরে সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের হেতিমগঞ্জে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বর্ণনা এভাবেই দেন বেঁচে যাওয়া তিন যাত্রী।
অকুস্থলের পার্শ্ববর্তী এক বাড়ির একজন জানান ‘ভোরে আমি বাড়ির সামনে হাঁটাহাটি করছিলাম। এ সময় বিকট শব্দ পেয়ে পেছনে ফিরে দেখি দাউ দাউ করে একটি মাইক্রোবাসে পুড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে বেঁচে যাওয়া তিনজনের আর্তনাদ। চোখের সামনে স্বজনদের পুড়ে মরতে দেখছিলেন তারা। কিন্তু কিচ্ছু করার ছিলো না তাদের। আগুনের এত উত্তাপ, আর বিস্ফোরণে কাছে যাওয়া ছিলোই দুষ্কর। খানিক পরে আহতরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
মাইক্রোবাসে আগুন লাগার ঘটনা দূর থেকে দেখছিল পার্শ্ববর্তী রফিপুর কলোনির শিশুরা। এ সময় ছুটে আসা জ্বলন্ত একটি ধাতব টুকরা আঘাত করে শিশু হাসানের (৭) উরুতে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে থাকে। শিশুটিকে বাঁচাতে প্রাণান্তর চেষ্টা করেন তার বাবা-মা। সকাল বেলায় গাড়ি না পাওয়ায় নিজের পিকআপভ্যান বের করে শিশু সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছলেও বাঁচাতে পারেননি মঞ্জুর আহমেদ। হাসপাতালের চিকিৎসক ওই শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন’।
সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হেতিমগঞ্জে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ফলে নিহত বেড়ে ৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বারইগ্রামের মৃত কুনু মিয়ার ছেলে রাজন আহমদ (২৭), একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে ও মাইকোবাস চালক সুনাম আহমদ (২৬) এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার শিশু পুত্র হাসান আহমদ (৮)।
জানা গেছে, বিয়ানীবাজারের চারখাই গ্রামের কুনু মিয়ার ছেলে মদন মোহন কলেজের বিএসএস পড়ুয়া রাজন (২২) রাতে ভাতিজাকে নিয়ে হাসপাতাল যান। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে ফেরার পথে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। রাজনের সঙ্গে দগ্ধ হয়ে মারা যান গাড়িচালক বিয়ানীবাজারের চারখাই গ্রামের সোনা মিয়া (২৪)। তবে অন্য জনের মরদেহ শনাক্ত করা যায়নি। ধারণা করছেন নিহত অপর লোকটিকে হয়তো রাস্তা থেকে গাড়িতে তোলা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার থেকে আসা আজিজুর বলেন, নিহত রাজন ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। আর চালক সোনা মিয়ার এক ভাই প্রবাসে থাকেন। আহতদের মধ্যে কিশোরটি গোলাপগঞ্জ তার খালার বাসায় এবং অন্য দুইজন বাড়িতে চলে গেছেন।