11/03/2020
মাস্ক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করে না!
--------------------------------------------------------
কভিড-১৯ করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে মাস্ক ক্রয় ও মজুদ করার ধূম পড়েছে। বাংলাদেশেও ব্যাপক চাহিদার কারণে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে দাম। কিন্তু এ বিষয়ে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন? তাঁদের মতে, করোনা আক্রান্ত যারা তারাই মাস্ক পরবে, যাতে অন্যরা সংক্রমিত না হয়, কিন্তু সুস্থরা নয়। এমনকি কারো প্রতিবেশীও যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তবু মাস্ক পরার সুযোগ নেই।
ইউনিভার্সিটি অব আইওয়ার কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক, সংক্রমণ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ এলি পেরেনসেভিচ বলেন, ‘সার্জিক্যাল মাস্ক কিংবা রেসপাইরেটর মাস্ক—কোনোটিই একজন ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে না। স্বাভাবিক একজন সুস্থ মানুষের মাস্কের প্রয়োজন নেই এবং এটি তার পরা উচিতও নয়। কারণ এ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে সুস্থ মানুষকে সংক্রমিত হওয়া থেকে মাস্ক রক্ষা করেছে। ফলে তারা অযথাই এটি পরে। এমনকি এর ফলে সুস্থ মানুষ নিজেদের সংক্রমণেরও ঝুঁকি বাড়ায়, কারণ মাস্ক পরার কারণে হাত দিয়ে বারবার মুখ স্পর্শ করে।’
পেরেনসেভিচ বলেন, ‘যদি আপনি মনে করেন যে আপনি আপনার হাত পেছনে বেঁধে রাখবেন, যাতে মুখ স্পর্শ করতে না হয়, তবু মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। কারণ যারা মাস্ক পরে তারা নিজের মুখ বা নাককে করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। করোনাভাইরাস হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, বাতাসের মাধ্যমে নয়।’ তিনি বলেন, ‘যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তখন অবশ্যই আপনাকে মাস্ক পরতে হবে পরিবারের অন্য সদস্যরা যাতে আক্রান্ত না হয়। বাইরে গেলেও মাস্ক পরে যেতে হবে, যাতে অন্যরা এতে সংক্রমিত না হয়।’
আপাতত করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় হাত ধোয়াসহ সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ অনুসরণ করার পরমার্শই দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)।
যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যানডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিভাগের মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. উইলিয়াম স্ক্যাফনার বলেন, মানুষ মনে করে নিজের নাক ও মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে রাখলে চারপাশে ঘুরতে থাকা এসব ভাইরাস থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে। কিন্তু শ্বাসযন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ যেমন—ফ্লু ও করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়। যদি তা-ই হতো তাহলে সিডিসি বহু বছর আগেই এমন পরামর্শ দিত। কিন্তু তারা এমনটি করেনি, কারণ তারা বিজ্ঞানভিত্তিক সুপারিশ করে থাকে।’
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে সেন্ট জর্জেসের ড. ডেভিড ক্যারিংটন বলেন, ‘সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট নয়।’ তিনি বলেন, ‘এই মাস্কগুলো এতই ঢিলেঢালা থাকে যে এটা বায়ুকে ফিল্টার করতে পারে না ঠিকঠাক। তা ছাড়া যে এই মাস্ক ব্যবহার করছে, তার চক্ষু থাকছে উন্মুক্ত।’
তবে ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মলিকুলার ভাইরোলজির অধ্যাপক জোনাথন বল বলেন, হাসপাতালের মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রিত সমীক্ষায় দেখা গেছে রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক ইনফ্লুয়েঞ্জা ঠেকাতে পারে। রেসপিরেটর হচ্ছে এমন এক ধরনের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র, যার মধ্যে থাকে একটি বিশেষায়িত ফিল্টার। অন্যদিকে ভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে বিশেষজ্ঞদের তিনটি পরামর্শ—গরম পানি ও সাবান দিয়ে নিয়েমিত হাত ধোন। যথাসম্ভব নিজের চোখ ও নাক স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন। যথাসম্ভব স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ পালন করুন। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের ড. জেক ডানিং বলেন, ‘যদিও একটি ধারণা আছে যে মাস্ক ব্যবহার করা উপকারী, কিন্তু বাস্তবে হাসপাতালের পরিবেশের বাইরে এই মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপকভিত্তিক উপকার পাওয়ার খুব কম নজিরই আছে’। ফোর্বস, বিবিসি।