01/01/2025
ফার্মগেটের নীচে এক ল্যাংড়া নিয়মিত ভিক্ষা করে। তার একটা পা নাই, হাঁটুর উপর থেকে কেটে ফেলা হয়েছে।
একদিন সেই ল্যাংড়া ভিক্ষুক সকালে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে এসে দেখে, তার জায়গায় বসে ভিক্ষা করছে এক কানা। কানার দুই চোখই নষ্ট। ছোট পিচ্চি নাতনি তাকে হাত ধরে নিয়ে এসেছে।
ল্যাংড়া তো রেগেমেগে ফায়ার। সে উত্তেজিত হয়ে বলল, রে কানা, তোর সাহস তো কম না! তুই আমার জায়গা দখল করছোস! আমার জায়গা ছাইড়া গেলি,,, ফোট কইলাম!
কানাও রেগে গিয়ে বলল, কেন রে ল্যাংড়া, এই জায়গা কি তোর শ্বশুরের কেনা? আমি যেখানে খুশি সেখানে বসুম। তোর শ্বশুরের কী?
ল্যাংড়া ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে বলল, এই সাবধান শ্বশুর নিয়া কতা কবি না। লাত্থি মাইরা কিন্তু তোর টেংরি ভাইঙ্গা দিমু,,,জানোস আমি কে? ল্যাংড়া সমিতি যদি জানতে পারে, তোর খবর আছে কইলাম,,, সমিতির সভাপতি আমার খুবই পেয়ারের মানুষ।
কানাও লাফিয়ে উঠে বলল, আর আমাগো কানা সমিতি বুঝি ঘাস খাইবো? সাহস থাকলে লাত্থি মাইরা দেখ,নিজেই উল্টাইয়া চিৎপটাং হইয়া যাবি। আমি অনেক জায়গা ঘোরাঘুরি কইরা শেষমেশ এই জায়গা চয়েজ করছি। সহজে ছাড়ুম না। কানা মজিদ যদি জানতে পারে, তুই আমার লগে বেয়াদবি করছোস, তোর অবস্থা কিন্তুক ছেঁড়াবেড়া হইয়া যাইবো।
নাতনি কানার দিকে তাকিয়ে বলল, দাদা, কানা মজিদ কে?
কানা নাতনির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, চুপ থাক, ল্যাংড়ারে ভয় দেখাইছি।
ল্যাংড়া লাফিয়ে উঠে বলল, এই ব্যাটা কানা, তুই চোখে দেখছ না, এই জায়গা চয়েস করলি কেমনে? বিটলামি করছ আমার লগে? ফোট কইতাছি,,,,সমিতির লোক আইলে দৌড় দেওয়ার টাইম কিন্তু পাবি না।
কানা কিছুতেই যাবে না। দুজনেই কথার যুদ্ধ চালিয়ে গেল। ল্যাংড়া এক ঠ্যাং উচিয়ে লাথি দেখায়, কানা আন্দাজে অন্যদিকে ঘুষি পাকায়!
পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক রিকশাওয়ালা। সে ল্যাংড়ার পরিচিত। ল্যাংড়াকে সে এই জায়গায় বহুদিন যাবৎ দেখছে। একসাথে একদিন দু'জনে ভাগাভাগি করে বিড়িও খাইছে। এই ঝগড়ায় অংশগ্রহণ করা কর্তব্য মনে করলো।
সে রিকশা থেকে নেমে এসে সব শুনে কানাকে ঘাড় ধরে সরিয়ে দিয়ে ল্যাংড়াকে বসে দিল।
দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখে এগিয়ে এলো এক সিএনজি ওয়ালা। শত হলেও সিএনজি ওয়ালা রিকশাওয়ালা থেকে মর্যাদার দিক দিয়ে কিছুটা হলেও উপরে। সে এই মান হানিকর কাজ মেনে নেয় কীভাবে? সে আবার কানার মামা বাড়ির প্রতিবেশীর আত্মীয়। সিএনজি ওয়ালা এসেই রিকসাওয়ালাকে হুমকি দিয়ে বসলো, ব্যাটা মাস্তানি করস? সিএনজি দিয়া তোর রিকশারে এমন ধাক্কা দিমু না,,,, বাঁচতে চাইলে দৌড় দে।
তুই দৌড় দে হালার পো,,,
তবে রে হমুন্দির পুত,,,,
দু'জনেই লেগে গেল তুমুল হাতাহাতি, মারামারি।
দুর থেকে এই দৃশ্য দেখল এক ট্যাম্পুওয়ালা। সিএনজি থেকে ট্যাম্পুর বডি শক্তিশালী। সে আবার রিকশাওয়ালার দুর সম্পর্কে ভাতিজার বন্ধু । ট্যাম্পুওয়ালা এসেই সিএনজি ওয়ালার ঘাড় চেপে ধরে বলল, ট্যাম্পু দিয়া তোর সিএনজিরে এমন ডলা দিমু, একেবারে ভর্তা বানাইয়া দিমু কইলাম, গেলি?
এবার মারামারি চলছে তাদের মধ্যে।
রাস্তার ওপাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক বাস ওয়ালা। সে সিএনজি ওয়ালার বোনের জামাইয়ের বন্ধুর খালু। বাস ফেলে দৌড়ে এসে সে ট্যাম্পুওয়ালাকে ধুরুম ধুরুম কিলাতে শুরু করলো। হুমকি দিয়ে বলল, ব্যাটা রকবাজি করস? বাস দিয়ে তোর ট্যাম্পুরে ডলা দিয়া চানাচুর বানাইয়া দিমু কইলাম!
এখন মারামারি চলছে বাস আর টেম্পুতে।
তুমুল মারামারি চলছে। কানা আর ল্যাংড়া একপাশে বসে ঝগড়া উপভোগ করছে। নাতনি বলল, দাদা, এরা মারামারি করতেছে কেন?
কানা থুঃ করে একদলা থুতু ফেলে বলল, কইতে পারি না,মনে লয় হুদাই !
এক পর্যায়ে কানা একটা বিড়ি ধরিয়ে দুই একটান খেয়ে ল্যাংড়ার দিকে এগিয়ে দিল। ল্যাংড়া সেই বিড়ি নিয়ে আয়েস করে খেতে খেতে ঝগড়া দেখতে লাগল।
ঝগড়ার একপর্যায়ে ট্যাম্পু ওয়ালার দাঁত একটা হাওয়া। মুখ গড়িয়ে রক্ত পড়ছে। বাস ওয়ালার হাঁটু ছিলেছে,থুতনি কেটেছে । দু'জনেরই জামাকাপড় ছেঁড়া।
ট্যাপ্মুওয়ালা ফোন করেছে ট্যাম্পু মালিককে। বাস ওয়ালা আবার ফোন করেছে তার বাস মালিককে।
দু'জনেই মুহুর্তে এসে হাজির। দু’জনেই আবার সরকার দলীয় নেতা।
ট্যাম্পু মালিক বাস মালিককে দেখে হুংকার দিয়ে বলল, এই ব্যাটা আমারে তুই চিনস? চিনস আমারে?
বাস মালিক ততোধিক হুংকার দিয়ে বলল, এই ব্যাটা, তুই গালকাটা ফরিদ রে চিনস? আমি কইলাম তার ছোটভাই।
ট্যাপুওয়ালা বুঝল, হুংকার দিয়ে কাজ হবে না। সে গলা নরম করে হাত বাড়িয়ে দিল , না তো ভাই, আমি তাকে চিনি না। আসেন পরিচিত হই!
দুই মালিক মিমাংসা করতে বসলো।
কানা আর ল্যাংড়া আবার বিড়ি ধরিয়ে দুইজনে ভাগ করে খেতে খেতে শালিশ দেখতে লাগল।
শালিশে ফায়সালা হল, কানা এবং ল্যাংড়া দুজনেই বাদ। বাস মালিক এবং ট্যাম্পু মালিক নিজেদের পছন্দের একজন লোককে এখানে বসাবে। সেই লোক মাসে মাসে দু'জনকেই বাসায় গিয়ে মাসোহারা দিয়ে আসবে।
ফায়সালার কথা কানা আর ল্যাংড়াকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ল্যাংড়া কানাকে ডেকে বলল, এইটা কী হইল রে কানা?
কানা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, কী আর হইবো, আমরা আমাগো শক্তি দেহাইছি। এখন ওরা অগো শক্তি দেখাইতেছে!
কপি পোস্ট
🖊️হানিফ ওয়াহিদ