01/07/2024
কেন জানি নিজের একটা ঘ্রাণ পাচ্ছি।
আমার স্ত্রী আমার সবকিছু সহ্য করতে পারলেও আমার একটা জিনিস সে মোটেও সহ্য করতে পারেনা। আর সেটা হলো কথায় কথায় মানুষকে টাকা ধার দেওয়ার ব্যাপারটা। এ নিয়ে সে আমাকে মাঝেমধ্যেই কথা শোনায়। আমি হেসে উড়িয়ে দিই আর বলি, ' তুমি না। আমি কি তাদেরকে একবারের জন্য দিয়ে দিচ্ছি নাকি। কাজ মিটে গেলে তো আবার ফিরত দিয়ে দিবে। আর তাছাড়া মানুষ হয়ে যদি মানুষের বিপদে পাশে না দাঁড়াতে পারি তাহলে তো সমাজ ছেড়ে জঙ্গলে চলে যাওয়াটা ঢের ভালো।'
আমার এমন ফিলোসোফি শুনে স্ত্রী চোখ পাকিয়ে জবাবে বলে, ' তোমার এই খোঁড়া যুক্তিই দেখবা একদিন তোমাকে সর্বসান্ত করে ছাড়বে। সেদিন আমার কথা মিলিয়ে নিও তুমি।'
জবাবে আমি মৃদু হাসি। মেয়েটা না বড্ড পাগলী। মানুষের বিপদে তো মানুষই দাঁড়াবে তাই না? এই কথাটা তাকে কে বুঝাবে?
কয়েকমাস ধরে বাসার ফ্রিজটা ঠিকঠাকমতো চলেনা। মিস্ত্রি এসে ঠিক করে দিয়ে গেলে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার যা তাই হয়ে যায়। হৃদিতা কিছুদিন ধরেই বলছে ফ্রিজটা চেঞ্জ করার কথা,তাই আমিও ভেবেছিলাম এমাসের বেতনটা পেলে একটা নতুন ফ্রিজ কিনবো।
আজ মাসের এক তারিখ। একাউন্টে বেতন ঢুকেছে। হৃদিতাকে ফোন দিয়ে বললাম, রেডি হয়ে থাকতে অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় দুজন মিলে গিয়ে একটা ফ্রিজ কিনে আনবো।'
সারাদিন অফিসের কাজকর্ম সেরে বিকেলে অফিস থেকে বার হয়ে বাসায় ফিরছি হঠাৎ করে একজন পিছন থেকে ডাক দিলো, আদিল ভাইয়া?'
পিছু ঘুরে দেখলাম, হিমেল দাঁড়িয়ে আছে। হিমেল হলো আমরা আগে যেই এলকায় থাকতাম সেই এলাকার ছোটভাই। বেশ ভালো ছেলে। আমাকে দেখলেই সালাম দেয়।
'আরে হিমেল তুমি! এইখানে কি মনে করে!'
'আসলে ভাইয়া আপনার কাছেই এসেছিলাম।'
'আমার কাছে! কেন কোন সমস্যা হয়েছে? আন্টির শরীর ঠিক আছে তো?'
'না ভাইয়া। মা কয়েকদিন ধরে খুব অসুস্থ। এদিকে বাবার এমাসের পেনশনের টাকাটাও এখনো পাইনি। আর আমি যেখানে চাকরি করি সেখানেও পাঁচ তারিখে বেতন দেয়। কি করবো কিছু বুঝতাছি না।'
'টাকা লাগবে তাই তো? আন্টির চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে তো এত ইতস্ততের কি আছে? কত টাকা লাগবে?'
'বেশি না ভাইয়া। দশ হাজারের মত হলেই হবে৷ আমি কথা দিচ্ছি পাঁচ তারিখে বেতনটা পাওয়া মাত্রই আপনাকে আমি টাকাটা ফিরিয়ে দিবো।'
' সে তুমি বেতন পেলে দিয়ে দিও। দাঁড়াও বুথ থেকে টাকাটা তুলে নিয়ে আসছি। আজকেই সেলারি ঢুকছে তো তাই এখনো একাউন্ট থেকে তোলা হয়নি। দশ হাজারে হয়ে যাবে তো?'
'হ্যাঁ ভাইয়া।'
পাশের একটা বুথ থেকে দশ হাজার টাকা তুলে হিমেলের হাতে দিয়ে বললাম, টাকা নিয়ে টেনশন কইরো না। আগে আন্টিকে সুস্থ করো ঠিক আছে। আর রাতে ফোন দিয়ে আন্টির খবর জানিও কেমন।'
হিমেল টাকাটা পেয়ে বেশ খুশিমনে ফিরে গেলে আমিও বাসার দিকে রওনা দিলাম।
বাসায় এসে হৃদিতাকে যখন বললাম, ফ্রিজ টা না হয় পাঁচ তারিখের পর কিনতে যাই। তখন সে চোখ পাকিয়ে এডভোকেটের মত জেরা শুরু করে বললো, ' নিশ্চয় এবারও সেলারি থেকে কাউকে ধার দিয়ে এসেছো তাই না? কাকে দিয়েছো? কেন দিয়েছো? তোমাকে তিনমাস ধরে বলছি ফ্রিজটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কয়েকদিন পর পর নষ্ট হয়ে গেলে ফ্রিজের সবকিছু পরিস্কার করতে গিয়ে আমার দম ছু্টে যায়। আর আজ নিজে ফ্রিজ কেনার কথা বোলে এখন বলছো আবার পাঁচ তারিখে।'
হৃদিতাকে শান্ত করিয়ে বললাম, ' আরে রাগছো কেন, পুরোটা শুনবা তো আগে। আমরা আগে যেই বাসায় ভাড়া থাকতাম,ওখানকার রাবেয়া খালাকে তো চিনো তুমি? '
'হ্যাঁ চিনবো না কেন। কি হয়ছে আন্টির?'
'আন্টি নাকি খুব অসুস্থ। অফিস থেকে ফেরার সময় তার ছেলে হিমেলের সাথে দেখা হয়েছিলো। ছেলেটার মায়ের টাকা জোগাড় করতে না পেরে মুখটা একবারে শুকিয়ে গিয়েছিলো। তাই আমি দশ হাজারটা টাকা ধার দিয়েছি। সমস্যা নাই সে পাঁচ তারিখে বেতনটা পেলেই দিয়ে দিবে বলেছে। তখন না হয় দুজন মিলে গিয়ে ফ্রিজটা কিনে আনবো। ফ্রিজ তো দুদিন পরও কেনা যাবে, সামান্য দশটা হাজার টাকার জন্য একজনার মা অসুস্থ হয়ে কষ্ট পাবে,ব্যাপারটা কেমন অমানবিক হয়ে যায় না?'
'আচ্ছা তুমি যে মানুষের উপকারের জন্য এভাবে টাকা ধার দাও, কখনো তো একজনকেও দেখলাম না তোমার উপকারের দাম দিতে। বরং ধার দেওয়া সেই টাকাটা ফিরত নিতে গিয়ে কত কত বাহানা করে তারা। এখনকার যুগে ভালো মানুষের কোন দাম নাই বুঝলে। বুঝবা একদিন।'
আমি হৃদিতার কথা শুনে আবারও হাসি। মেয়েটা সত্যিই একটা পাগলী। উপকারের প্রতিদানের আশায় উপকার করলে সেই উপকারের আর মান থাকলো কোথায়?
কিছুদিন আগের কথা, রাতে বসে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ করে হৃদিতা এসে তার হাতের মোবাইলটা আমার সামনে ধরে বললো, ' এইটা তোমার বন্ধু সজিব না?'
আমি ভালোমতো দেখে বললাম, 'হ্যাঁ। সজিব-ই তো। কেন কী হয়ছে?'
'সজিব না তোমার বাল্যকালের বন্ধু। তো তার বিয়েতে কোই তোমাকে দাওয়াত দিলো না তো?'
'কি জানি। আর না দিয়েই ভালো করছে৷ দাওয়াত দিলে তো তখন যাওয়ারই লাগতো। এদিকে অফিসে কাজের যে চাপ,তখন না গেলে সে কি ভাবতো? দেখি হাদারামটার বউটাকে দেখিতো।'
সজিবের কাপল ছবি দেখতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের গ্রুপের প্রায় সবকয়জনাই সেখানে উপস্থিত আছে। শুধু আমি বাদে।
মৃদু হেসে বললাম, ' যাক শেষমেশ হাদারামটারও একটা হিল্লে হলো। কলেজ থাকাকালীন তো সবাই মিলে ক্ষ্যাপাতাম আর বলতাম তোর কপালে কোনো মেয়ে নাই।
যাক বউটা বেশ মিষ্টি দেখতে হয়েছে। বেশ মানিয়েছে কি বলো?'
হৃদিতা রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বললো, ' তুমি না, তোমাকে যে উপরওয়ালা কোন মাটি দিয়ে তৈরী করেছেন তা একমাত্র তিনিই ভালো জানেন।'
আমি হেসে বললাম, ' আরে রাগ করছো কেন? আমার বউটাও কি কম সুন্দরী নাকি। সজিবের বউয়ের থেকেও ঢের সুন্দরী আমার বউ। আরে আরে কোথায় যাচ্ছো,শুনো না।'
সেদিন বিকেলে বাজার করে ফেরার সময় সজিব এসে ধরলো আমাকে।
তারপর হাতদুটো ধরে বললো, ' দোস্ত তোকে কয়েকদিন ধরে হন্নে হয়ে খুঁজছি আমি। কোথায় থাকিস বল তো?'
আমি কোনো উত্তর দিলাম না,শুধু মৃদু হাসলাম একটু। সজিব আবার বলা শুরু করলো, ' আচ্ছা শোন না, নতুন বিয়ে করে খুব ঝামেলায় পড়ে গেছিরে। বিয়েতে যে এত এত খরচা,আগে জানলে বিয়েই করতাম না। এতদিন ধরে যা সঞ্চয় করেছিলাম সব শেষ৷ তোর ভাবি কয়েকদিন ধরে সাজেক যাওয়ার জন্য বায়না ধরেছে৷ এদিকে মানিব্যাগে একটা টাকাও নাই। নতুন বউয়ের আবদার না রাখলেও কেমন দেখায় তুই ই বল। দোস্ত শোন না,আমাকে কিছু টাকা দে না। সাজেক থেকে ফিরে এসেই তোর টাকাটা ফিরত দিয়ে দিবো কথা দিলাম। প্লীজ দোস্ত না বলবি না। অনেক আশা নিয়ে তোর কাছে এসেছি।'
'আমার কাছে তো এখন বেশি টাকা নাই।'
'বেশি না তো,মাত্র বিশ হাজারের মত দিলেই হবে।'
'কিন্তু....
'কোন কিন্তু টিন্তু না। দিতেই হবে তোকে।'
অগত্যা আরও একবার হৃদিতাকে লুকিয়ে সজিবকে বিশ হাজার টাকা দিলাম। নতুন বউ নিয়ে ঘুরাঘুরি করার ইচ্ছা কার ই বা না থাকে। আমিও তো হৃদিতাকে নিয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান,সাজেক সবখানে ঘুরেছি।
এর কিছুদিন পর হৃদিতার বড় আপু আর তার বর আমাদের বাসায় আসলেন। কথায় কথায় আপু বললেন, তাঁর বর নাকি নতুন একটা বিজনেস শুরু করতে যাচ্ছে।'
শুনে বললাম, 'ভালোই তো। তা ভাইয়া কীসের ব্যবসা?'
'কাচামালের। আমাদের পুরান ঢাকাতে তো এখন কাচামালের ব্যবসাটা একবারে রমরমা হয়ে উঠেছে।'
'তাহলে তো ভালোই।'
এবার আপু বিরস মুখে বললেন, ' ভালো আর কোথায় ভাই।
এতদিন ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াচ্ছিলো দেখে সবাই কতকিছু বলেছে ওকে। এখন একটা বিজনেস শুরু করতে যাচ্ছে সেখানেও সবার অসুবিধা।'
বললাম, 'কেন আপু? ভাইয়া কিছু একটা করলে তো সবারই খুশি হওয়ার কথা।'
'সেটা তো সবাই উপরে উপরে দেখায়। তোমার ভাইয়া বিজনেস করতে যাচ্ছে, বাবার কাছে গিয়ে বললাম, বাবা তোমার জামাই নতুন ব্যবসা করতে চাইছে কিছু টাকা কম পড়েছে।' বাবা মুখের উপরে না করে দিলেন। তুমিই বলো আমি কি তার সৎ মেয়ে? আজ হৃদিতা যদি চাইতো ঠিকি দিয়ে দিতো।'
'আপনি অযথা রাগ করছেন আব্বার উপরে।'
'তো কি করবো বলো। এতদিন কিছু করতে না পারার জন্য সবাই কত কথা শুনিয়েছে আমাকে। আর এখন কিছু করতে চাইছে তখনো সবার অসুবিধা।'
'তা ভাইয়া কত টাকার সর্ট পড়ছে?'
ভাইয়া একগাল হেসে বললেন,' বেশি না। এই লাখ দুয়েকের মত। টাকাটা পেলে সত্যিই আমার খুব উপকার হতো বুঝলে। দেখো না ভাই তুমি একটু ম্যানেজ করে দিতে পারো কি না। রিক্তা বলছিলো তুমি নাকি সবার বিপদে পাশে দাঁড়াও। তাহলে এই বড় ভাইটার পাশে একটাবার দাঁড়িয়ে দেখো না। বেশিদিন রাখবো না,ব্যবসাটা দাঁড়িয়ে গেলেই তোমাকে তোমার টাকাটা ফিরিয়ে দিবো।'
কথাটা শুনে হৃদিতা আমার হাত টিপে বারণ করার চেষ্টা করলো। কিন্তু আমি হৃদিতার বারণ না শুনে বললাম,' আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া। আপনাকে আর কারও কাছে যেতে হবেনা। আপনি বরং মন দিয়ে নতুন ব্যবসার পরিকল্পনা করেন।'
সে রাতেও হৃদিতা আমার উপর চড়াও হলো। বুঝিনা মেয়েটা এমন কেন। আমি কি তাদেরকে টাকাগুলো এমনি এমনি দিচ্ছি,ধারই তো নিচ্ছে তারা৷ সময় হলে আবার দিয়ে দিবে।
এরপর কেটে গিয়েছে কয়েকমাস।
অফিসে বসে কাজ করছি,এমন সময় একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো মোবাইলে।
কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ হতে একজন বোলে উঠলো, ' হৃদিতা কি আপনার স্ত্রী? উনার গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আপনি জলদি করে চলে আসুন।'
কথাটা শোনামাত্র পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো আমার। অফিসের কাজ কাম ফেলে রেখে যতটা দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছালাম। হৃদিতাকে তখন আইসিইউ তে নেওয়া হয়েছে। খুবই গুরুতর অবস্থা।
হৃদিতাকে যে হাসপাতালে এনেছিলো তার মারফত জানতে পারলাম, সকালে বাজার করে যাওয়ার সময় একটা বেপরোয়া লেগুনার ধাক্কা খেয়ে এই অবস্থা হয়েছে।
ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি জানালেন, রোগির অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট করা হলেও জরুরি ভিত্তিতে মাথার অপারেশন না করাতে পারলে রোগিকে বাঁচানো যাবেনা।
ডাক্তারের মুখে কথাটা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো আমার। পাগলের মত হয়ে বললাম, ' আমার হৃদিতার কিছু হবেনা ডাক্তার। আপনারা অপারেশনের ব্যবস্থা করুন।'
'আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি কাউন্টারে ফর্ম ফিলাপ করে দুই লাখ টাকা জমা করেন। আমরা ব্যবস্থা করছি।'
'আচ্ছা ঠিক আছে।'
ডাক্তারের কাছ থেকে সরে এসে একটাবার আইসিইউ এর ছোট গ্লাস দিয়ে ভিতরে তাকালাম। দেখি হৃদিতার মুখে অক্সিজেন মাক্স লাগানো। মাথায় ব্যান্ডেজ করা। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।
সেখান থেকে সরে এসে জামাল ভাইকে কল দিলাম৷
'ভাইয়া হৃদিতার এক্সিডেন্ট হয়েছে৷ আইসিইউ তে ভর্তি হয়ে আছে। ডাক্তার বলছে অপারেশন করাতে হবে। দুই লাখ টাকা লাগবে। আপনি একটু ব্যবস্থা করেন না ভাই।'
'দেখো আদিল, কয়েকমাস আগেই তোমার থেকে টাকাটা এনে সবে ব্যবসাতে খাটিয়েছি। এখন তো সব টাকা শেষ ভায়া। আচ্ছা তুমি টেনশন কইরো না আমি দেখছি। রিক্তাকে ফোন দিয়ে যেতে বলছি এক্ষুণি।'
বলেই কলটা কেটে দিলো। কিছুক্ষণ পর বেশ কয়েকবার কল দিলাম, কিন্তু জামাল ভাই আর ফোনটা রিসিভ করলেন না। বরং একটু পর থেকে যান্ত্রিক একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসতে লাগলো বারবার।
উপায় না পেয়ে একে একে সবাইকে কল দিলাম, অফিস কলিগ থেকে শুরু করে বন্ধুমহলের সবাইকে। সবাই নানান বাহানা দেখিয়ে এড়িয়ে গেলো।
এমনকি সজিবকে যখন ফোন দিয়ে সবটা বললাম, 'সে বললো দোস্ত তোর ভাবিকে নিয়ে সেন্ট মার্টিন এসেছি। ঢাকায় ফিরে ভাবিকে দেখে আসবো।
একে একে পরিচিত সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলো। শেষমেশ হৃদিতার বাবার কাছে কল দিয়ে বললে, শ্বশুর-শাশুড়ী দুজনেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন।
শ্বশুর আব্বা দুই লাখ টাকার বান্ডিল দুটো আমার হাতে দিয়ে বললেন, ' এক্ষুণি কাউন্টারে জমা দিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করতে বল। আর আমার মেয়ে কোথায়?'
টাকার বান্ডিল দুটো হাতে নিয়ে পাথরের মূর্তির মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। কারণ ততোক্ষণে এই দুই লাখ টাকার প্রয়োজন আমার শেষ। হৃদিতা আমাকে,আমাদের সবাইকে ছেড়ে অনেক দূর চলে গিয়েছে।
শ্বশুর-শাশুড়ী আমার চোখে জল দেখে ছুটে গিয়ে রুমে ঢুকলেন। দেখলেন তাদের আদরের মেয়ের মায়াবী মুখ খানা সাদা কাপড়ের অন্তরালে ঢাকা পড়েছে।
বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইলো আমার।
অশ্রুসিক্ত চোখে হাতে ধরে রাখা টাকার বান্ডেল দুটোর দিকে তাকিয়ে বললাম, ' এতদিন তোর মাধ্যমে বহু মানুষের উপকার করেছি আমি। সবসময় ভেবেছি মানুষ হয়ে মানুষের উপকার করার। কিন্তু আজ সেই সমস্ত মানুষগুলোই আমাকে তাদের আসল চেহারা দেখিয়ে দিলো। আজ শেষমেশ তুইও আমার কোনো কাজে লাগলি না। হৃদিতা ঠিকি বলতো, আমার এই ভালোমানুষিই একদিন আমাকে সর্বসান্ত করে ছাড়বে।
আজ যে আমি বড্ড একা হয়ে গেলাম হৃদিতা।
🖋আশিক মাহমুদ