29/11/2021
২য় ধাপঃ
Branding এর ধাপ সমূহ নিয়ে আজকের আলোচনাঃ
স্ট্রাটেজি :
বাংলাদেশে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরী নিয়ে কনফিউশনের মধ্যে থাকেন।একটি কার্যকরী মার্কেটিং স্ট্রাটেজির চারটি মূল নীতি আছে এবং এগুলোর উপর একটি প্রতিষ্ঠান লাভজনক হচ্ছে কিনা তা অনেকাংশে নির্ভর করে। নীতিগুলো হলো -
1. Specialization বা বিশেষীকরণ
আমরা অনেক সময়ই মনে করি একই সাথে অনেক ধরনের কাস্টমারকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বা সেবা দিয়ে এক সাথে টার্গেট করলে ব্যবসা তাড়াতাড়ি লাভজনক করা যাবে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টা।আপনি যদি একটা মার্কেটের সকল কাস্টমাররের কাছে আপনার পণ্য বা সেবা নিয়ে পৌছাতে চান তাহলে কাউকেই আপনি ঠিকভাবে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনার পণ্য বা সেবা নিয়ে মার্কেটের ঠিক কোন জায়গায় আপনি বিশেষজ্ঞ হবে।|উদহারণসরূপ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আজকেরডিল সারা বাংলাদেশ জুড়ে সেইসব কাস্টমারদেরকে টার্গেট করছে যারা কম টাকায় অনলাইন একটি মার্কেটপ্লেস থেকে পণ্য কিনতে চায় যা কিনা তারা যে জায়গায় থাকে সেখানে সহজলভ্য নয়।
2. Differentiation বা পৃথকীকরণ
পৃথকীকরণ হলো কার্যকর মার্কেটিং স্ট্রাটেজি গড়ার পথে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।বলুনতো আপনার পণ্য বা সেবার মুল্য কে ঠিক করে? আপনার নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে আপনি বা আপনার প্রতিষ্ঠান করে! ভুল, মূল্য ঠিক করে আপনার প্রতিদ্বন্দী পণ্য বা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।তাই আপনার সম্পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে।কেন আপনার আদর্শ কাস্টমার আপনার কাছ থেকে না কিনে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনেছে? তারা আপনার থেকে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী দের কাছ থেকে কি উচ্চ মান পাচ্ছে এবং আপনি তাদের এই উপলব্ধি পরিবর্তনের জন্য কি করতে পারেন?
আপনার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাযিক সাফল্যের জন্য আপনাকে আপনার প্রতিদ্বন্দীদের দেয়া পণ্য বা সেবার মান থেকে ভালো এবং সম্পূর্ণ পৃথক সমাধান দিতে হবে কাস্টমারদের প্রয়োজন বা সমস্যার।এবং তা নিশ্চিত করার জন্য আপনাকে আপনার টার্গেট কাস্টমারদের সম্পর্কে সব কিছু জানতে হবে — তারা কে , তারা কি করে, তাদেরকে আপনার কাস্টমার বানাতে হলে কি করা লাগবে ইত্যাদি।
উদাহরণসরূপ মার্কেটে যখন ব্ল্যাকবেরি মোবাইল সেট বের হলো তখন স্টিভ জবস তার প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ারদের ডেকে নিয়ে বললেন — আমি এমন একটি অ্যাপল ব্রান্ডের মোবাইল ফোনে বানাতে চাই যা কিনা একটি বাটন দিয়ে চালু বা বন্ধ হবে, এছাড়াও সব ধরনের কাজ করা যাবে এবং খুব সহজে ব্যবহারযোগ্য হবে।ইঞ্জিনিয়াররা বলল এই ধরনের কোন ফোন তৈরী করা সম্ভব না, কিন্তু স্টিভ জবস লেগে থাকলেন, এবং তার ফলে সর্বপ্রথম এক বাটনের টাচস্ক্রিন যুক্ত অ্যাপল মোবাইল ফোন মার্কেটে আসলো| বাকি ইতিহাস আমাদের প্রায় সবারই জানা।
মানুষের ব্যস্ততা আর সময় স্বল্পতার কারণে ইট-পাথরের তৈরি দোকানগুলোর চেয়ে প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন দোকান অর্থাৎ ই-কমার্স সাইট গুলোতে মানুষের উপস্থিতি বেশী। তাই ই-কমার্স ব্যবসার জনপ্রিয়তা উত্তোরত্তর বেড়েই চলেছে।
ভ্যালু :
ব্যবসায় সফলতা নির্ভর করে উত্তম ক্রেতা ভ্যালু সরবরাহ করার উপর। মার্কেটিং এর অন্যতম প্রধান কাজ হলো ক্রেতা ভ্যালু তৈরি ও প্রদান করা। সর্বোচ্চ ক্রেতা ভ্যালু প্রদান করতে পারলে ক্রেতা সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাবে। ক্রেতা ভ্যালু কি? পণ্য বা সেবা গ্রহণ করে যে সুবিধা পায় এবং তার বিনিময় যে অর্থ ব্যয় করে এ দুইয়ের পার্থক্যকে ক্রেতা ভ্যালু(Customer Value) বলে। সুবিধার থেকে খরচ কম হলে ভ্যালু বৃদ্ধি পায়।এখানে, সুবিধা হলো কার্যভিত্তিক সুবিধা এবং আবেগময়ী সুবিধা। আর ব্যয় হলো অর্থ ব্যয়, সময় ব্যয়, শ্রম ব্যয় ইত্যাদি।
ট্রাস্ট বা বিশ্বাস কি :
ট্রাস্ট হচ্ছে মূলত ভরসা বা বিশ্বাসের জায়গা। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ধরুণ আপনি একটি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। তাহলে আপনার বিম্বাস বা ভরসার জায়গা হবে, আপনার কর্ ও আপনার ক্লাইন্ট। অর্থাৎ আপনার কোম্পানিকে এমন স্থানে নিয়ে যেতে হবে যাতে করে আপনার ক্লাইন্ট আপনার কোম্পানিকে ভরসা করে, বিশ্বাস ও আস্থা রাখে আপনার ব্র্যান্ড তথা আইডেন্টিটির উপর।
আইডেন্টিটি :
আপনি ব্র্যান্ড তৈরি করলেন, প্ল্যান করলেন আপনি কোন গ্রুপ এর মানুষ এর কাছে আপনার ব্র্যান্ড তুলে ধরবেন, তাহলে তো আপনাকে প্রচার করতে হবে, আপনাকে আপনার কোম্পানি অথবা প্রোডাক্টকে মার্কেট এ, জনগনের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, এর নাম ই হচ্ছে আইডেন্টিটি।
লোগো ::
লোগো একটি গ্রাফিক্স চিহ্ন বা প্রতীক যা দ্বারা কোন কোম্পানিকে বা প্রতিষ্ঠানকে ফুটিয়ে তোলা হয়।
লোগো একটা ব্যান্ড এর পরিচয়,লোগোর মাধ্যমে দর্শক বুঝবে সেই কোম্পানিটা কি ধরনের, তার কাজ কি।
একটা সুন্দর লোগোতে সবসময় একটা মেসেজ থাকতে হয়, যেমন কোম্পানি কি করতে চায় সেটা একটা সিম্বল এর মাধ্যমে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। লোগো তৈরী করা সহজ ব্যাপার না। কিছু শেপ কালার আর ফ্রন্ট দিয়ে একটা ডিজাইন করলেই লোগো ডিজাইন হয়ে যায় না। লোগো একটা ব্যান্ড এর পরিচয় তাই ডিজাইন এ টেকনিকাল দক্ষতার পাশাপাশি আপনাকে সৃজনশীল হতে হবে।
বিজ্ঞাপন : বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে পণ্য ও সেবা কিংবা নতুন ধারণা সম্পর্কে ভোক্তা বা ব্যবহারকারী সকলকে জানানোর একটি ব্যবস্থা বিজ্ঞাপন । এটি শুধু জানানোতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সম্ভাব্য ক্রেতা বা ব্যবহারকারীদের কাছে এসবকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে, সেগুলো ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ, এমনকি কখনো কখনো প্ররোচিত করে। আর এই কাজটি করে থাকে বিক্রেতা তথা উৎপাদনকারী নিজে, তার প্রতিনিধি কিংবা বিপণনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি।
যে মাধ্যমেই বিজ্ঞাপন প্রচার হোক, এর জন্য বিজ্ঞাপনদাতাকে ব্যয় বহন করতে হয়। বিজ্ঞাপনের ধরন নির্বাচন, তার জন্য কথা বা ছবি সাজানো এবং তার উপস্থাপনা, প্রকাশনা, প্রচারণা ইত্যাদি অতীতে ব্যক্তিগতভাবে বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিজ স্থাপনা ও জনবলের সাহায্যে সম্পাদিত হলেও এখন এসব একটি সুসংগঠিত পেশার কাজ এবং এসবের জন্য আছে ছোট বড় বিভিন্ন বিশেষায়িত বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান।
মার্কেটিং:
আমরা মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী মার্কেটিং নিয়ে একটা ভুল ধারণা রাখি। আর সেটা হচ্ছে মার্কেটিং মানেই হচ্ছে প্রসার, যত বেশী মানুষের কাছে যত বেশী পণ্য প্রসার করা যায় সেটাই হচ্ছে মার্কেটিং। মূলত মার্কেটিং তা নয়। অবশ্যই মার্কেটিং এ প্রচার এবং প্রসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তবে আপনি ডিজিটাল বা ট্রেডিশনাল মার্কেটিং করুন, একজন মার্কেটার হিসাবে আপনার দ্বায়িত্ব হচ্ছে যথাযথ রিসার্চ, এনালাইসিস করে সঠিক মানুষের কাছে সঠিকভাবে আপনার পণ্যের প্রচার এবং প্রসার করা।
আর এই কাজটা শুরু হয় মূলত কোন একটি পণ্য বাজারে বা মার্কেটে আসার পরে নয় বরং আগে থেকে। রিসার্চ করে দেখতে হয় আদো মার্কেটে পণ্যটির চাহিদা আছে কিনা, থাকলে কি রকম চাহিদা, কতজন পণ্যটা কিনতে পারে, কারা বর্তমানে একই ধরণের পণ্য দিচ্ছে, কিভাবে দিচ্ছে, মার্কেটে কিসের ঘাটতি রয়েছে যা দিয়ে আপনি আপনার কম্পটিটিটরদের পিছনে ফেলে আপনার কাস্টমারকে বোঝাতে সক্ষম হবেন যে আপনার পণ্য বা সেবাটিই হচ্ছে তাদের জন্য উপযুক্ত।
ইনশাল্লাহ আগামি পর্বে থাকবে
“ব্র্যান্ডিং” এবং ই-কমার্স ব্যবসায় ব্র্যান্ডিং এর পরিধি ও গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করবো ।
প্রথম অংশে থাকছে – কিভাবে একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে হয়।
দ্বিতীয় অংশে থাকছে – নতুন উদ্যোক্তা এবং নিযুক্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব।
এবং শেষ অংশে থাকছে – ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে আপনি কী কী কৌশল অবলম্বন করবেন।