30/08/2023
বিয়ের পর আজ প্রথম শ্বশুর বাড়ি আসলাম। লজ্জায় কারোর সাথে কথা বলতেও পারছিনা। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধুই উত্তর দিচ্ছি। রাতে খাবার খাওয়ার জন্য সবার সাথে বসলাম। এখানে আমার বউ,শালী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি আর দাদি শ্বাশুড়ি ও বসেছে। আমার শালী হঠাৎ করে আমাকে বলল,
-- দুলাভাই আপনি কাল আমাকে নিয়ে কলেজে যাবেন ঠিক আছে?
শালীর কথা শুনে অবাক হলাম এতো বড় মেয়েকে নিয়ে কেউ কলেজে যায়? আমি কিছু না বলে চুপচাপ হয়ে রইলাম। তখন দাদি শ্বাশুড়ি বলল।
-- নাত জামাই তুমি ওরে নিয়ে কলেজ পৌছে দিয়। আসলে এখনকার ছেলেপুলে গুলো ভালো না। মেয়েদের ইভটিজিং করে। মাঝে আমাকেও করে।
আমি তখন ভাত মুখে নিচ্ছিলাম দাদী শ্বাশুড়ির কথা শুনে আমার মুখ থেকে সব ভাত বের হয়ে গেছে। একটু পানি খেয়ে বললাম -- আপনাকে এই বয়সে কারা ইভটিজিং করে?
-- আর বলোনা আমাদের বাসার পাশের বুড়ো বুড়ো বেটারা। আমি হেটে গেলে ওরা আমাকে দেখে চোখ মারে। ঈশারায় ডাকে, শিশ দেয় আমাকে দেখলে।
আমি অনেক কষ্ট করে নিজের হাসি বন্ধ রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছিনা। এই বয়সে দাদীকে ইভটিজিং করা টা মেনে নিতে পারছিনা।
-- দাদী আপনি কি জানেন আপনি অনেক সুন্দরী?
-- হুম জানি তিন দিন আগে রহিম ভাই ও বলছে।
-- রহিম ভাইয়ের বয়স কতো?
-- ওর বয়স ৮০ হবে। আমাকে দেখলে মাঝে মাঝে চোখ ও মারে।
হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। সবাই অনেক হাসাহাসি করছে।
কোনো রকম ভাবে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে গেলাম। বউ আমার কাছে এসে বলল।
-- ওই শোনো,
-- কি হয়েছে?
-- আমি বাচ্চার মা হতে চাই তুমি আমাকে একটা বাচ্চা দাও।
-- ঠিক আছে দেখি কেউ বাচ্চা বাড়া দেয় নাকি।
-- আমি এখন তোমার বাচ্চার আম্মু হতে চাই বাড়া করা না।
-- আরে বাবা এখন আমি বাচ্চা কই থেকে এনে দেব?
-- বাচ্চা না দিলে তোমার সাথে কথা নাই।
কি একটা মসিবত। বউতো রেগে আগুন হয়ে গেলো। সারারাত আমাদের আর কথা হয়নি ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে গিয়ে দেখি আমার শ্বশুর মসাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি গিয়ে ওনাকে সালাম দিলাম। বুঝলাম না উনি কেন আমার সালামের উত্তর দিলো না? আমি ওনার কাছে গিয়ে বললাম
-- বাবা এতো সকালে আপনি এখানে কি করছেন?
-- তোমার শ্বাশুড়ির সাথে আমার ঝগড়া হইছে তোমাকে কে বলল?
শ্বশুরের কথা শুনে আমার মাথার চুল খাড়া হয়ে গেলো। কি জিজ্ঞেস করলাম আর কি উত্তর দিল?
-- বাবা, আমি বলছি আপনি এখানে কি করছেন?
-- তোমার শ্বাশুড়ি আমাকে সহ্য করতেই পারেনা। কি বলব লজ্জার কথা তোমার শ্বাশুড়ি আমাকে মাঝে মাঝে ঝাড়ু দিয়েও পিটায়।
শ্বশুর আব্বার কথা শুনে আমি আর হাসি ধরে রাখতে পারলাম না। আমি বুঝতে পারলাম শ্বশুরের কানে সমস্যা আছে তাই কথা বাড়াতে চাইলাম না। আমি বললাম -- বাবা আপনি থাকেন আমি চলে যাচ্ছি।
বাবা কোনো উত্তর না দিয়ে আমার সামনে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে দিয়ে আমাকে বলল -- তুমি কি সিগারেট খাও?
আমি মুখে কিছু না বলে হাত দিয়ে না বললাম।কারণ মুখ দিয়ে না বললে আবার কি বুঝে!
শ্বশুর সিগারেটে টান দিতে দিতে আমাকে বলল -- গুড বয়, সিগারেট খাওয়া ভালো না। এতে অনেক সমস্যা হয়। সিগারেট মানুষের ক্ষতি করে।
মনে মনে বললাম আপনি সিগারেট খেয়ে আমাকে ভালো কথা বলছেন। আমি আর কিছুনা বলে রুমে চলে আসলাম। এবার শালীকে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। শালী হঠাৎ করে আমাকে বলল -- দুলাভাই আপনাকে আমার খুব পছন্দ হইছে।
আমি মুচকি হাসি দিয়ে ধন্যবাদ বললাম। শালী এবার আমাকে যা বলল রীতিমতো আমি হতবাক।
-- দুলাভাই আপনি আমার আপুকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করবেন?
-- এহ! কি বলছ তুমি এসব?
-- দুলাভাই আপনি জানেন আমার জন্য কতো ছেলে পাগল? সবাই আমার পিছনে ঘুরঘুর করে আমি পাত্তা দি না। দুই জনকে দিছিলাম দুই জনেই আমাকে ছ্যাঁকা দিলো।
-- আহা, কি জন্য ছ্যাঁকা দিলো?
-- আসলে ওরা আমাকে বলছে কিস করতে, তো আমি কিস দিতে গিয়ে কামড় দিয়ে ফেলছি। তাই আমার সাথে ব্রেক আপ করে চলে গেছে। আমার কি দোষ ছিল বলেন তো?
এই মেয়ের কথা শুনে আমার অবস্থা খারাপ। বুঝতে পারলাম আমি কেমন পরিবারে বিয়ে করলাম। আমার শ্বাশুড়ি বাদে সবাই তার চেড়া।
#সমাপ্ত।
#রম্যগল্প
#শ্বশুর_বাড়ি_জিন্দাবাদ
#শহীদ_উল্লাহ_ছাইদ