27/11/2016
Nouman Ali Khan Collection In Bangla
●|● জোরপূর্বক বিয়ে ●|●
উস্তাদঃ আসসালামু আলাইকুম।
আব্দুল্লাহঃ ওয়া আলাইকুম আসসালাম।
উস্তাদঃ কেমন আছো আব্দুল্লাহ?
আব্দুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহ্, আপনি কেমন আছেন?
উস্তাদঃ আমি ভালো আছি। আমি তোমার সাথে কিছু সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাই।
আব্দুল্লাহঃ এটা কি বোনদের বিষয়ে?
উস্তাদঃ হ্যাঁ, বলা চলে তাদের বাবা-মায়ের বিষয়ে;
আমার কাছে অনেক খবর আসছে যেখানে মেয়েদেরকে মানসিকভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে বিয়ে করার জন্য। তাদেরকে বলা হচ্ছে, “তুমি যদি অমুককে বিয়ে না করো তাহলে তোমাকে আর কেউ বিয়েই করবে না... তোমার নিজের অবস্থার দিকে তাকাও... ইত্যাদি।”
বাবা-মায়েরা তাদের মেয়েকে হয়রান করছেন, তাদের বলছেন “তোমাকে শীঘ্রই বিয়ে করতে হবে... তোমার জন্য যেন আমাদের ছোট হতে না হয়... তোমার কারণে আমাদের পরিবারের দুর্নাম যেন না হয়... এর পরেরবার প্রস্তাব আসলে অবশ্যই রাজি হয়ে যাবে...।” আর এই মেয়েগুলো প্রতিনিয়তই চাপের মুখোমুখি হতে থাকে। তো এটা হলো একটা দিক।
আরেকটা দিক হলো মেয়েরা কাউকে পছন্দ করলে তা প্রকাশ করতে পারে না। আমি তাদের কথা বলছি না যারা ডেটিং করে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোন মেয়ে যদি কারো ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে জঘন্য কাজ হিসেবে দেখা হয়, যেন সে চরম কোন অপরাধ করে ফেলেছে।
ইসলামে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে দিয়ে দেবার কোনোই স্থান নেই। বিয়েতে অবশ্যই মেয়ের সম্মতি থাকতে হবে। তাও আবার ‘অনিচ্ছাকৃত’ সম্মতি না, রাজি হওয়ার ব্যাপারে তাকে খোলামেলা, খুশি থাকতে হবে। অর্থাৎ তারা প্রকৃতপক্ষেই বিয়েতে সম্মত আছে।
এমন না যে “আমার বাবা-মা যেহেতু বলছে তাই আমার আর কিছুই বলার নেই...।” না না না।
এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, “আমার পিতা জোর করে আমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন, তাই আমি চাপে পড়ে বিয়ে করেছি। কিন্তু আমি তাকে পছন্দ করি না।” তিনি (সাঃ) বললেন, “তোমাদের বিয়ে বৈধ নয়।”
তুমি চিন্তা করতে পারো? আর জানো লোকেরা কেন এমন করে? চাপ দিয়ে বিয়ে দেওয়া যে একদম নিষিদ্ধ তা কেবল জানাই যথেষ্ট না। কারণ মানুষ হারাম জানার পরেও অনেক কাজ করে থাকে। এর একটা মনস্তাত্ত্বিক দিকও আছে। এই মানুষগুলো তাদের সন্তানের সুখের চেয়ে নিজের সুখের ব্যাপারে বেশি সচেতন। তাদের নাম, বংশ, সমাজের সামনে তাদের কেমন লাগবে এসব ভুয়া চিন্তা যেগুলো বাস্তবে পুরো অর্থহীন সেগুলোই তাদের কাছে সন্তানদের জীবনভর সুখ-শান্তির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এটা কেবল একটা অনুষ্ঠানসর্বস্ব বিষয় হয়ে গেছে। “কতজন মানুষ বিয়েতে আসবে...”, “আমরা এই হলটায় অনুষ্ঠান করবো”, “আমরা এটা করবো, সেটা করবো...”, “ওই পরিবারের সাথে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক হবে”, “আমরা অনেক ভালো পাত্র পেয়েছি”
তারা আসলে ভালো পাত্র পায়নি, তারা কেবল একটা ভালো সিভি পেয়েছে। তারা খোঁজে পাত্র অমুক এলাকার কিনা, তাঁর এই এই যোগ্যতা আছে কিনা... সব অবাস্তব বিষয়।
আর পাত্র বাস্তব জীবনে সম্পূর্ণ খারাপ চরিত্রের হতে পারে। আমি অনেক ঘটনা জানি যে, চুলচেরা সন্ধান চালিয়ে একি মহল্লার পাত্র খুঁজে তাঁর সাথে মেয়ের বিয়ে দেখা হয়েছে। আর দু’সপ্তাহ পর দেখা যায় যে সে মেয়েকে পিটিয়ে প্রায় মেরে ফেলার অবস্থা করে ফেলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে পরিবারের উচিত ছিল তাদের ভুল স্বীকার করা। কিন্তু তারা উল্টো মেয়েকে বলবে, “না না, তোমাকে ধৈর্য্য ধরতে হবে”, “বাইরে যেন এ ব্যাপারে জানাজানি না হয়, তাহলে আমাদের সম্মান থাকবে না।”
বিয়ে দ্বীনের অর্ধেক আর তারা মানুষের বিয়ে ধ্বংস করে বেড়াচ্ছে, এই লোকগুলো বাস্তবে ছেলেমেয়েদের দ্বীন থেকেই দূরে ঠেলে দিচ্ছে। তাঁদের সাবধান হওয়া উচিত। তারা শুধু তাঁদের সন্তানদেরই ঝামেলায় ফেলছেন না, তারা নিজেরাই আল্লাহর সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন।
এটা খুবই জরুরী একটা বিষয়। সন্তানদের সুখ ও সম্মতির জন্য চেষ্টা করা। আর আল্লাহ যেন আমাদেরকেও বিজ্ঞ, ন্যায়পরায়ণ অভিভাবক বানিয়ে দেন, যখন আমরা সন্তানদের ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাবো। আল্লাহ যেন আমাদের ছেলেমেয়েদেরকেও বড় হওয়ার সাথে সাথে সঠিক, সুবিবেচিত সিদ্ধান্ত নেয়ার তৌফিক দান করেন। আমীন। আমরা অন্য কোন বিষয় নিয়ে পরে আবার কথা বলবো। বারাকাল্লাহু লি ওয়ালাকুম, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্।