27/05/2024
# # দয়া করে জনস্বার্থে পোস্টটি শেয়ার করুন # #
কুকুর বিড়ালের কামড় বা আঁচড়ে করণীয় !!!
বাড়িতে পোষা শখের বিড়াল কিংবা পথের পাশের বেওয়ারিশ কুকুর আঁচড় কিংবা কামড় দিলে কিন্তু একই বিপদ। এই বিপদের কারণ একটি ভাইরাস। নাম র্যাবিস। এটি একটি আরএনএ ভাইরাস।
এটির কারণে হয় মস্তিষ্কের প্রদাহ। যাকে বলা হয়ে থাকে ‘এনকেফালাইটিস’। আমাদের কাছে এটি জলাতঙ্ক রোগ হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।
রোগটি প্রাচীনকাল থেকেই পৃথিবীর মানুষের কাছে পরিচিত ছিল।
এটি একটি ভয়ানক রোগ। এতে মৃত্যুহার এখন পর্যন্ত প্রায় এক শ ভাগ। পৃথিবীজুড়ে এখনো প্রতিবছর প্রায় ৬০ হাজার মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করছে। এই মৃত্যুর শতকরা ৯৬ ভাগ ঘটে এশিয়া এবং আফ্রিকায়।
কোন প্রাণীতে জলাতঙ্ক ?????
প্রতিবছর বাংলাদেশে দুই-তিন লক্ষ মানুষ প্রাণীর কামড়ের শিকার হয়। এসবের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই কুকুরের কামড়। কুকুর ছাড়াও বিড়াল, শেয়াল, খেঁকশিয়াল, বানর, বাদুড়, বেজিসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর কামড়ের ঘটনাও ঘটে। এসব প্রাণীর কামড় বা আঁচড়ে জলাতঙ্ক হতে পারে। কামড় ছাড়াও খুবই বিরল ক্ষেত্রে কখনো কখনো কর্নিয়া অথবা অন্যান্য অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেও এটি হতে পারে।
প্রাণীটি কামড় দেওয়ার পর পাঁচ দিন থেকে শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যে এই লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণত দুই থেকে তিন মাসের ভেতরেই লক্ষণ প্রকাশ পায়। ভাইরাসগুলো বাহিত হয় স্নায়ুর মাধ্যমে। যখন কোনো প্রাণীর কামড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয় তখন সেখানে ভাইরাস বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। ভাইরাসগুলো স্নায়ুর মাধ্যমে বাহিত হয়ে চলে যায় মস্তিষ্ক, লালাগ্রন্থি, কর্নিয়া, ত্বক এবং অন্যান্য অঙ্গে। এ রোগের লক্ষণ প্রকাশের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই লালাগ্রন্থিতে জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
আক্রান্ত স্থানে ব্যথা, চুলকানি, ঝিন ঝিন ভাব, অনুভূতি হ্রাস পায়। এরপর শুরু হয় গা ব্যথা, মাথা ব্যথা, জ্বর, বমি ভাব, বমি এবং শরীর ব্যথা। মস্তিষ্কের প্রদাহ হলে বদলে যায় আচার-আচরণ, চোখে ভেসে ওঠে অলিক সব দৃশ্য। ভয় লাগে বাতাসে। পানি পান করতে গেলে শ্বাসনালির তীব্র সংকোচন ঘটে। ফলে পানি দেখলে ভীতি কাজ করে। এ জন্য এটাকে বলে জলাতঙ্ক। আলোতেও অসুবিধা হয়। চোখে আলো পড়লে অস্বস্তি অনুভব হয়। অঝোরে ঝরতে থাকে লালা। রোগী হয়ে পড়ে অস্থির প্রকৃতির। একসময় মূর্ছা যায় রোগী। মৃত্যু এসে হাজির হয় দরজায়। তবে এক ধরনের জলাতঙ্ক আছে যেখানে রোগী অস্থির প্রকৃতির না হয়ে বরঞ্চ নিথর হয়ে পড়ে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় কথাবার্তা।
ভাইরাস প্রবেশের আগে টিকা
যাঁরা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত কিংবা ল্যাবরেটরিতে কর্মরত কিংবা সংক্রমিত কুকুর কিংবা মানুষের সেবা প্রদানকারী তাঁরা টিকা নেবেন। মাংসপেশিতে নিলে সাত দিন অন্তর দুটি। চামড়ার নিচে নিলে দুই পাশে দুই ডোজ। সাত দিন পর দ্বিতীয় ডোজ।
জীবাণু প্রবেশের পর চিকিৎসা
■ প্রাণীকে স্পর্শ করলে, খাওয়ালে, ক্ষতহীন ত্বকে জিহবা দিয়ে প্রাণী যদি লেহন করে তাহলে সাবান পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। কোনো টিকার প্রয়োজন নেই।
■ সামান্য আঁচড় কাটলে এবং রক্তক্ষরণ না হলে ক্ষতস্থানের চিকিৎসা এবং যত দ্রুত সম্ভব অ্যান্টি রাবিস ভ্যাকসিন এক ডোজ নিতে হবে।
■ এক বা একাধিক আঁচড় কিংবা কামড়ের পাশাপাশি রক্তক্ষরণ হলে অথবা কোনো কাটা স্থানে লালা লেগে গেলে ক্ষতস্থানের চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিন বা টিকা নিতে হবে, সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক এবং ধনুষ্টঙ্কারের টিকাও নিতে হবে।
■ একাধিক কামড় বা আঁচড় এবং কামড়ের অবস্থান যদি মুখে, ঘাড়ে, মাথায়, হাতে হয় এবং প্রাণীটি যদি জলাতঙ্ক আক্রান্ত থাকে অথবা জলাতঙ্ক আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহ করা হয় তাহলে অবশ্যই তাকে অ্যান্টি র্যাবিস ভ্যাকসিনের পাশাপাশি ইমিউনোগ্লোবিলিন টিকাও নিতে হবে।
ভ্যাকসিনের ডোজ
নিতে হবে ০, ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮তম দিনে। মোট পাঁচ ডোজ। নিতে হবে মাংসপেশিতে।
ক্ষতস্থানের যত্ন
দ্রুততার সঙ্গে ক্ষতস্থান বহমান পানি দিয়ে ১৫ মিনিট ধরে ধুয়ে ফেলতে হবে। আয়োডিন সলিউশন লাগাতে হবে। ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করা যাবে না। খোলা রাখতে হবে।
দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে করণীয়
টিকার সম্পূর্ণ ডোজ সম্পাদন করার তিন মাসের মধ্যে আবার কুকুর বা বিড়ালের আঁচড় বা কামড়ের শিকার হলে পুনরায় টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিন মাসের পর এমনটি হলে দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। সুতরাং পোষা প্রাণী কুকুর, বিড়াল কামড় কিংবা আঁচড় দিলে হেলা না করে অতিসত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট
সিএমএইচ, বরিশাল