Nazrul Islam Tipu

Nazrul Islam Tipu This Page will use only Information Purpose only.

Address

Mapco LLC
Abu Dhabi
2035

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Nazrul Islam Tipu posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Nazrul Islam Tipu:

Share

Category

আমার পরিচিতি

আমি নজরুল ইসলাম টিপু। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার এক পিছিয়ে পড়া জনপদ ইদিলপুর গ্রামেই আমার জন্ম। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আধুনিক দুনিয়া থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন, বৈদ্যুতিক আলো-বিহীন সমাজে ১৯৬৬ সালের এক ঈদের দিনের সকাল থেকেই আমার জীবন চলার শুরু। অবহেলিত, উপেক্ষিত অন্য দশটা ছেলের মতই আমার জীবনের পথচলা আরম্ভ হয়। তারপরও আমার বন্ধু সংখ্যা ছিল খুব সীমিত! মাত্র একজন! আমার সম বয়সী ছেলেরা সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াত। তাদের কাছে স্কুলের নিয়ম-শাসন পছন্দনীয় ছিল না। স্কুল প্রাঙ্গণে মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীরা যখন জাতীয় সংগীতে টান দিত, তারা দলবেঁধে শুনতে আসত! অতঃপর তারা গ্রামীণ খেলা-ধুলোয় হারিয়ে যেত। ইচ্ছে হত এদের সাথে মিলে যাই কিন্তু বারণ ছিল। আমাদের এলাকার নয়, এমন একজন নিরীহ ছাত্র, বহুদূর থেকে হেটে আমাদের বাড়ীর সামনের স্কুলে পড়তে আসত। ঘর থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই হবে আমার বন্ধু এবং শুধু তার সাথেই বন্ধুত্ব করা যাবে! খেলা-ধুলোর প্রতি চরম অনাগ্রহী এই সহপাঠী স্কুল ছুটির পরই সে তার গন্তব্যে রওয়ানা হত!

সীমিত বন্ধু-বান্ধবের কারণে আমার শিশুকাল কেটেছে নিজের সাথে নিজে কথা বলে, আর গাছ পালাকে শাসন করে! স্কুলের পড়া কবিতা, গল্প, ছড়া তাদের শিখাতাম। যথাযথ পড়া আদায় না করার অপরাধে, আমারই স্কুলের শিক্ষক বিজন বিহারী বাবুর অনুকরণে, বাড়ির পিছনে মানকচুর পাতা আর হলুদ ক্ষেতের গাছের সাড়ি, আমার বেত্রাঘাত আর কঠোর শাসনে নেতিয়ে পড়ত! পরদিন তাদের উপর রহম দিল হতাম। উচ্চস্বরে মাইকে শোনা গান গেয়ে মুরুব্বীদের ত্যক্ত করতাম আবার অঙ্গভঙ্গি করে কবিতা আবৃত্তি করে কখনও হাসির পাত্র হতাম! ছাত্র বিবেচিত হওয়া গাছ গুলো পুনরায় তাজা উঠলে আবারো পড়া-লেখার খবর নিতাম, ছুতো-নাথা ধরে কোন একদিন পুনরায় বেত অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। একদিন মা বললেন, “প্রকৃত পক্ষেই আমার স্কুলের শিক্ষক যদি আমার সাথে এমন ব্যবহার করে, তখন আমি কি করব”? এই কঠিন প্রশ্নের কোন উত্তর ছিলনা তবে এ কথায় মনে রেখাপাত হল, সে থেকে থামলাম।

আমি ছিলাম খুবই কৌতূহলী বালক। এই অভ্যাস আমাকে কখনও চরমভাবে ভুগিয়েছে আবার কখনও প্রশান্তি এনে দিয়েছে। মুরগী ডিম পারার আগে অনবরত ডাকে কেন? আবার ডিম পারার পরেই বা সজোরে চিল্লায় কেন? লাঙল কে বানালো? লাঙলের ধাতব ফলা বানানোর কৌশল কার থেকে এলো? কার বুদ্ধিতে গরুর কাঁধে জোয়াল জুড়িয়ে জমিতে নামানো হল। কুড়াল বা বানালো কে? তার পিছনে কায়দা করে বড় ছিদ্র বানিয়ে সেটাতে কাঠের হাতল লাগিয়ে, এই কুড়াল দিয়ে বিরাট গাছ ধরাশায়ী করা যায়! এই চিন্তা প্রথম কার মাথা থেকে এসেছিল! সমাজ-জীবনের চারিদিকে চলতে থাকা এ ধরনের বহু জিনিষে কারো কোন আগ্রহ না থাকলেও আমার মাথায় হাজারো প্রশ্ন কিলবিল করত। এসব প্রশ্ন মুরুব্বীদের দিকে ছুড়ে দিলে তারা কেউ উপদ্রব ভাবত, কেউ পাগল ঠাওরাত! এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কত ভৎসনার মুখে পড়েছি, শিক্ষকদের কাছে তিরস্কৃত হয়েছি, মুরুব্বীদের কাছে অকর্মা হিসেবে বিবেচিত হয়েছি, তার কোন হিসেব করা যাবেনা। অনেকে আমার পিতা-মাতাকে বলত একে জ্বিন-ভূতে পেয়েছে! বৈদ্যি ডেকে জিনের আছর মুক্ত করুন। বাবা সত্যি সত্যিই বাড়ীতে বৈদ্যি ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে এক ভিন্ন করুণ অধ্যায়। তখন শিশু মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ‘আমি যদি এসব প্রশ্নের উত্তর পাই তাহলে, কাউকে তিরস্কার না করেই উত্তর জানিয়ে দিব’।

এই কৌতূহলী খাসিয়তের জ্বালায় শুধুমাত্র একজন মানুষ কোনদিন পেরেশান হননি! তিনি আমার ‘বাবা’! যাকে হৃদয়ের সমস্ত অভিব্যক্তি দিয়ে সারাজীবন ভালবেসেছি। তিনি আমার মনের কৌতূহল মেটাতে, পারত পক্ষে সম্ভাব্য সকল উপায়ে সাহায্য করতেন। বংশীয় ধারায় তিনিও ছিলেন পড়ুয়া মানুষ! ভাগ্যগুণে আমার বাবার, দাদার দাদা এবং তার বাবা, সবাই ছিলেন শিক্ষিত মানুষ। তাদের গোষ্টি-গত পরিচয় ছিল ‘ভূঁইয়া’ হিসেবে। আর ভূঁইয়ারা অধিক ভূসম্পত্তির মালীর হিসেবে বিবেচিত। মাঝপথে আমার বাবার দাদার উপাধি ‘লালমিয়া পণ্ডিত’! তিনি তৎকালের শিক্ষিত ও বাগ্মী মানুষ হিসেবে পরিগণিত ছিলেন, যার কারণে আমাদের বাড়ীর নাম হয়ে যায় ‘পণ্ডিত বাড়ী’। গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বতনদের কল্যাণে বিচিত্র ধরনের পুরানো বইয়ের একটি যোগসূত্র ছিল আমাদের বাড়ীতে।