আমি নজরুল ইসলাম টিপু। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার এক পিছিয়ে পড়া জনপদ ইদিলপুর গ্রামেই আমার জন্ম। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, আধুনিক দুনিয়া থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন, বৈদ্যুতিক আলো-বিহীন সমাজে ১৯৬৬ সালের এক ঈদের দিনের সকাল থেকেই আমার জীবন চলার শুরু। অবহেলিত, উপেক্ষিত অন্য দশটা ছেলের মতই আমার জীবনের পথচলা আরম্ভ হয়। তারপরও আমার বন্ধু সংখ্যা ছিল খুব সীমিত! মাত্র একজন! আমার সম বয়সী ছেলেরা সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়াত। তাদের কাছে স্কুলের নিয়ম-শাসন পছন্দনীয় ছিল না। স্কুল প্রাঙ্গণে মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীরা যখন জাতীয় সংগীতে টান দিত, তারা দলবেঁধে শুনতে আসত! অতঃপর তারা গ্রামীণ খেলা-ধুলোয় হারিয়ে যেত। ইচ্ছে হত এদের সাথে মিলে যাই কিন্তু বারণ ছিল। আমাদের এলাকার নয়, এমন একজন নিরীহ ছাত্র, বহুদূর থেকে হেটে আমাদের বাড়ীর সামনের স্কুলে পড়তে আসত। ঘর থেকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল, সেই হবে আমার বন্ধু এবং শুধু তার সাথেই বন্ধুত্ব করা যাবে! খেলা-ধুলোর প্রতি চরম অনাগ্রহী এই সহপাঠী স্কুল ছুটির পরই সে তার গন্তব্যে রওয়ানা হত!
সীমিত বন্ধু-বান্ধবের কারণে আমার শিশুকাল কেটেছে নিজের সাথে নিজে কথা বলে, আর গাছ পালাকে শাসন করে! স্কুলের পড়া কবিতা, গল্প, ছড়া তাদের শিখাতাম। যথাযথ পড়া আদায় না করার অপরাধে, আমারই স্কুলের শিক্ষক বিজন বিহারী বাবুর অনুকরণে, বাড়ির পিছনে মানকচুর পাতা আর হলুদ ক্ষেতের গাছের সাড়ি, আমার বেত্রাঘাত আর কঠোর শাসনে নেতিয়ে পড়ত! পরদিন তাদের উপর রহম দিল হতাম। উচ্চস্বরে মাইকে শোনা গান গেয়ে মুরুব্বীদের ত্যক্ত করতাম আবার অঙ্গভঙ্গি করে কবিতা আবৃত্তি করে কখনও হাসির পাত্র হতাম! ছাত্র বিবেচিত হওয়া গাছ গুলো পুনরায় তাজা উঠলে আবারো পড়া-লেখার খবর নিতাম, ছুতো-নাথা ধরে কোন একদিন পুনরায় বেত অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। একদিন মা বললেন, “প্রকৃত পক্ষেই আমার স্কুলের শিক্ষক যদি আমার সাথে এমন ব্যবহার করে, তখন আমি কি করব”? এই কঠিন প্রশ্নের কোন উত্তর ছিলনা তবে এ কথায় মনে রেখাপাত হল, সে থেকে থামলাম।
আমি ছিলাম খুবই কৌতূহলী বালক। এই অভ্যাস আমাকে কখনও চরমভাবে ভুগিয়েছে আবার কখনও প্রশান্তি এনে দিয়েছে। মুরগী ডিম পারার আগে অনবরত ডাকে কেন? আবার ডিম পারার পরেই বা সজোরে চিল্লায় কেন? লাঙল কে বানালো? লাঙলের ধাতব ফলা বানানোর কৌশল কার থেকে এলো? কার বুদ্ধিতে গরুর কাঁধে জোয়াল জুড়িয়ে জমিতে নামানো হল। কুড়াল বা বানালো কে? তার পিছনে কায়দা করে বড় ছিদ্র বানিয়ে সেটাতে কাঠের হাতল লাগিয়ে, এই কুড়াল দিয়ে বিরাট গাছ ধরাশায়ী করা যায়! এই চিন্তা প্রথম কার মাথা থেকে এসেছিল! সমাজ-জীবনের চারিদিকে চলতে থাকা এ ধরনের বহু জিনিষে কারো কোন আগ্রহ না থাকলেও আমার মাথায় হাজারো প্রশ্ন কিলবিল করত। এসব প্রশ্ন মুরুব্বীদের দিকে ছুড়ে দিলে তারা কেউ উপদ্রব ভাবত, কেউ পাগল ঠাওরাত! এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কত ভৎসনার মুখে পড়েছি, শিক্ষকদের কাছে তিরস্কৃত হয়েছি, মুরুব্বীদের কাছে অকর্মা হিসেবে বিবেচিত হয়েছি, তার কোন হিসেব করা যাবেনা। অনেকে আমার পিতা-মাতাকে বলত একে জ্বিন-ভূতে পেয়েছে! বৈদ্যি ডেকে জিনের আছর মুক্ত করুন। বাবা সত্যি সত্যিই বাড়ীতে বৈদ্যি ডাকতে বাধ্য হয়েছিলেন। সে এক ভিন্ন করুণ অধ্যায়। তখন শিশু মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ‘আমি যদি এসব প্রশ্নের উত্তর পাই তাহলে, কাউকে তিরস্কার না করেই উত্তর জানিয়ে দিব’।
এই কৌতূহলী খাসিয়তের জ্বালায় শুধুমাত্র একজন মানুষ কোনদিন পেরেশান হননি! তিনি আমার ‘বাবা’! যাকে হৃদয়ের সমস্ত অভিব্যক্তি দিয়ে সারাজীবন ভালবেসেছি। তিনি আমার মনের কৌতূহল মেটাতে, পারত পক্ষে সম্ভাব্য সকল উপায়ে সাহায্য করতেন। বংশীয় ধারায় তিনিও ছিলেন পড়ুয়া মানুষ! ভাগ্যগুণে আমার বাবার, দাদার দাদা এবং তার বাবা, সবাই ছিলেন শিক্ষিত মানুষ। তাদের গোষ্টি-গত পরিচয় ছিল ‘ভূঁইয়া’ হিসেবে। আর ভূঁইয়ারা অধিক ভূসম্পত্তির মালীর হিসেবে বিবেচিত। মাঝপথে আমার বাবার দাদার উপাধি ‘লালমিয়া পণ্ডিত’! তিনি তৎকালের শিক্ষিত ও বাগ্মী মানুষ হিসেবে পরিগণিত ছিলেন, যার কারণে আমাদের বাড়ীর নাম হয়ে যায় ‘পণ্ডিত বাড়ী’। গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বতনদের কল্যাণে বিচিত্র ধরনের পুরানো বইয়ের একটি যোগসূত্র ছিল আমাদের বাড়ীতে।
বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উঠেছি। জ্যৈষ্ঠের এক দুপুরে বাবা একটি বড় বই নিয়ে বসলেন। তিনি আমাকে রামায়ণের অংশ বিশেষ শুনালেন। কৌতূহলী মনে কান খাড়া করে মজাদার কাহিনী শুনতে রইলাম। ব্যস! বাবাকে প্রতিদিন পিড়াপিড়ি করতে থাকি, মজাদার পড়াটা আরো শোনানোর জন্য। একদিন মা বললেন, তুমি যখন অনেক কিছু জানতে চাও, তাহলে পড়াটা তুমিই শিখে নাও। তোমার সকল উত্তর তো বইয়ের ভেতরেই পেয়ে যাবে। মায়ের এই প্রেরণায় শক্ত করে লেগে গেলাম। কয়েকদিনের চেষ্টায় আমি বড়দের বই পড়তে পারলাম। আমার ধারণা হল, মজা বুঝি শুধু এই বইতে! বাবা আমার ধারণা পাল্টে দিলেন। তিনি কলেজ পড়ুয়া আমারই বড় ভাইয়ের বইয়ের শ্রীকান্ত অংশ থেকে ‘নতুন দা’র ঘটনাটি অংশ বিশেষ শোনালেন! এটা পড়তে গিয়ে, বাবা নিজেই অনেক হাসলেন! কম বুঝার কারণে আমি অত হাসতে পারলাম না! আমার মা স্কুলে পড়েন নি কিন্তু বাবার হাসির আতিশয্যে তিনিও হাসিতে যোগ দিলেন। বাবা-মাকে এমন করে হাসতে ও উৎফুল্ল হতে অতীতে কখনও দেখিনি। এই ঘটনাটি আমাকে খুব প্রভাবিত করে। কারো প্ররোচনা ব্যতীতই একটি বিশ্বাস আমার অন্তরে গেঁথে গেল যে, খুশী হবার জন্য বইয়ের মধ্যে বহু উপাদান আছে। অতঃপর বাবা আমাকে আদম (আ), নূহ (আ), ইব্রাহীম (আ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ালেন। প্রাইমারী স্কুল জীবনের সেই সময়েই সকল পড়ার অন্ত-নিহিত অর্থ না বুঝলেও, দ্রুততার সাথে পড়ার অভ্যাস রপ্ত করে ফেলি। এই যোগ্যতার ফলে, বাহিরের বয়স্ক মানুষের কথার রহস্য বুঝা আমার জন্য সহজ হয়ে গেল।
সেই থেকে বইয়ের প্রতি প্রেম ও ভাল লাগার শুরু, এখনও ভালো লাগে! গিন্নী বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘ঈশ আমি তোমার গিন্নী না হয়ে যদি বই হতাম, তাহলে তোমার অনেক বেশী নজরে থাকতাম’! বই পছন্দে আমার নির্দিষ্ট কোন রূচিবোধ ছিলনা! সহজ বই, কঠিন বই, পৌরাণিক বই, যাদুর বই, তাবিজের বই, গল্প-উপন্যাসের বই, দার্শনিকের বই, এমনকি ধর্মীয় বই কোনটাই আমার রুচি ও রুটিন থেকে বাদ যেত না।
আমার ছাত্রজীবনে যে জিনিষটার বেশী অভাব বোধ করেছি সেটা হল বই! না, না, শুধুমাত্র স্কুলের বই নয়। স্কুলের বইয়ের বাহিরেও শিক্ষার্থীদের আরো অনেক বই পড়ে মানুষ হতে হয়, সেটা শ্রেণী শিক্ষকেরা তো অহর্নিশি বলতেন। ‘গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন’ এর কথা বলে শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষাকে প্রকৃত শিক্ষা না ঠাওরাতে শিক্ষকেরা হর-হামেশা পাঠদান করতেন।
প্রত্যন্ত জনপদে বসেও সারা দুনিয়া সম্পর্কে জানার অদম্য আগ্রহের কারণে, পড়ার প্রতি আসক্তি দিনে দিনে বেড়ে উঠে। সামান্য সময় পেলে, সেটাও পড়ার পিছনে ব্যয় করতাম। পুরানো বই শেষ হলে নতুন বইয়ের জন্য ঢাকায় লিখতাম কিন্তু এতে আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকত। নতুন বন্ধু বানানো, ফ্রি বই ও ম্যাগাজিনের জন্য প্রচুর চিঠি লিখতাম। বই আসত ডাক যোগে। গড়ে প্রতিদিন কিছু না কিছু আসতই। ফলে ডাকঘর ও ডাকপিয়ন যেন আমার শিক্ষা অর্জনের সাথী হয়ে পড়েছিল। বই ভাড়া করে আনতাম, একসময় এটাও শেষ হয়ে যেত। এই অভাব রোধ করতে গ্রামীণ জনপদে যার কাছে যত পুঁথি আছে, সেগুলো পড়া হলো। বাজারে কবিতার পাণ্ডুলিপি বিক্রি হত, সে সব পড়া হতো। স্থানীয় বাজারে শতবর্ষী এক জ্যোতিষ ছিলেন, তিনি মানুষের হাত ও ভাগ্য গণনা করতেন। কলিকাতা থেকে সংগ্রহ করা এ বিষয়ের অনেক বই ছিল তার কাছে। সেদিকে লোভ পড়ল, তাই সখ্যতা গড়ে তুললাম। ধার করে বই এনে সেগুলোর পড়া গিলে নিলাম। তাবিজের বই, যাদুর বই, তন্ত্রের বই, কবিতার বই, গল্প, সাহিত্য যা পাওয়া হতো তাই মন দিয়ে পড়তাম। রবিন হুড, মাসুদ রানা, দস্যু বনহুর, দস্যু শাহবাজ, দস্যু বাহরামের চরিত্র গুলোর মাধ্যমে নিজেকে ভিন্ন কিছু ভাবতে শুরু করি। সাথে সাথে সেবা প্রকাশনীর বিদেশী বইয়ের অনুবাদ গুলোর প্রতি আকৃষ্ট হতাম। এগুলোই আমার বেশী ভাল লাগার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে।
এক রুক্ষ ভাষার মুরুব্বীর হাতে কিছু বৃহদাকার বই দেখলাম। এ ধরনের আরো বই তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে আগে থেকেও ছিল, এগুলো কাউকে ধরতে দিতেন না। রমজান মাসের মসজিদে তিনি এতেকাফে বসে কোরআন পড়ার ফাকে বইগুলো পড়তেন। এগুলো পড়ার লোভে আমিও মুরুব্বীদের সাথে এতেকাফে গেলাম এবং ইমাম গাজ্জালী (রহ) কিমিয়ায়ে সা’আদাত পড়ে, বইয়ের জগতে ভিন্নতার দেখা পেলাম। খুব কঠিন বিষয়বস্তু কিন্তু সেই রুক্ষ মুরুব্বী আমাকে বইয়ের কথাগুলো কিভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যায়, আন্তরিকতার সাথে তা বুঝিয়ে দিলেন। তখন নতুন করে বুঝলাম, বই শুধু পড়লেই হয় না, চিন্তার রাজ্যের গভীরে না গেলে কিংবা পড়ায় গভীর মনোনিবেশ না থাকলে, কোন পড়াই কারো উপকারের আসেনা। আবার লিখক শুধু লিখলেই হয়না, লেখককেও পাঠকের মন, সমাজ, কৃষ্টি, রুচি ও চিন্তাধারার প্রতি নজর রাখতে হয়; সাথে সাথে লিখার মধ্যেও বিচিত্রতার সন্নিবেশ ঘটাতে হয়।
নিভৃত পল্লীর চেরাগের ক্ষীণ আলোতে বসে, বিশ্বজগত দেখার কৌতূহলী বাসনা নিয়ে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে শিশুটি বিশ্ব-মানচিত্র সামনে নিয়ে বসত, তার কৌতূহল কোনদিন বৃথা যায় নি। সে দিনের শিশুসুলভ চিন্তা থেকেই আজকের এই ওয়েব সাইট। ছোট মানুষের কৌতূহল কোন গুরুত্বহীন বিষয় নয়। এটাও বিরাট একটা ব্যাপার। সে ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে শুরু হয়েছিল লিখার যাত্রা। শুরুতে রম্য লিখার চাদরে এসব বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল এখন বহু বিষয় যোগ হয়েছে। ‘সুখ’ নামক রচনা দিয়ে প্রথম রম্য রচনা লিখা শুরু হয়।
আলহামদুলিল্লাহ বিস্তারিত পরিসরে কোরআন পড়েছি, প্রচুর হাদিস অধ্যয়ন করেছি। ইসলামী ইতিহাসের বহু বই পড়া হয়েছে। খৃষ্টান মিশনারির মাধ্যমে ছাত্রজীবনেই ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট গুলো পড়া হয়েছে। এভাবে নানা বিষয়ের, নানা ধর্মের, ভিন্নমতের অগণিত বই পড়া হয়েছে। এখনও একজন একনিষ্ঠ ছাত্র হিসেবে বই পড়া অব্যাহত রেখেছি। এই পর্যায়ে এসে যেটা বুঝেছি তা হল, মানুষের জন্য বেশী উপকারী হল, মৌলিক গ্রন্থগুলো। আনন্দ না পাবার কারণে এগুলো সাধারণত মানুষ পড়তে চায়না। কিন্তু মানুষ হবার জন্য এগুলো বেশী জরুরী। সে সব বিষয়ের কথাগুলো কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, কিভাবে এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট করা যায়; সেটা নিয়ে ভাবতাম এবং পাঠককে আকৃষ্ট করার কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে চিন্তা করতাম। এই ওয়ের পেইজের লিখাগুলো তারই প্রতিচ্ছবি। লিখা আমার নেশা এবং তা স্কুল জীবন থেকে সক্রিয়। মূলত সব ফুলের ঘ্রাণ একই নয়, আবার ভিন্ন ফলের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ রয়েছে। আমার লিখাগুলোতে ভিন্নতা আছে আর আমি ভিন্নতা নিয়েই লিখি। এই অনুপ্রেরণা পেয়েছি শুধুমাত্র কৌতূহলী মনের কারণেই।
আমার বাবা আবদুল মান্নান মুন্সি খুবই হাসি-খুশী মনের মানুষ ছিলেন। তিনি কর্মঠ, সৎ, ধার্মিক ও হালাল জীবনের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। এক সময় চা বাগানের ম্যানেজার ছিলেন। একাকী থাকা, নির্জন পরিবেশ উপভোগ করার মত চরিত্র ছিল। সে হিসেবে পাহাড়ি জীবনের ছোঁয়া-পরশ, নির্জনতা আমাকেও প্রলুব্ধ করে। সময় পেলে তিনিও বই পড়তেন। মা ছবুরা খাতুন। আমাদের অঞ্চলের ধনী ব্যবসায়ী ও গৃহস্থের বড় কন্যা। এতকিছুকে পেরিয়ে তার জীবনে নামের প্রভাব বেশী কার্যকর ছিল। ‘ছবুরা খাতুন’ তথা ‘ধৈর্যশীলা বেগম’ নামটি তার চরিত্রের সাথে মানানসই হয়ে গিয়েছিল। তিনি ছিলেন উদার ও দানশীলা রমণী। আমাদের স্কুলের বইয়ের পড়ার সবকিছু তিনি বুঝতেন না কিন্তু আমরা যখন পড়ার টেবিলে বসতাম তিনিও সেখানে বসে থাকতেন এবং পড়া শেষ না হওয়া অবধি অপেক্ষায় থাকতেন। তিনি ছিলেন আমার বন্ধুর মত। এই ধরণের মাকে কোনদিন ফাঁকি দেওয়া যায় না। আমার কোন বোন নেই, তিন ভাইয়ের মধ্যে আমি সবার ছোট। আবার চাচাত-জেঠাত ভাইদের মধ্যেও আমার অবস্থান সর্ব কনিষ্ঠ। ফলে আমি ভাবী পেয়েছি বেশি এবং আমাকে শাসন করার মানুষের সংখ্যাও ছিল অসংখ্য তাই আমি কখনও কাউকে শাসন করার সুযোগ পাইনি।
বর্তমানে আমি প্রবাসী, ১৯৮৯ সনেই ছাত্র জীবন শেষ করেছি। পেশা হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডে কাজ করি এবং নেশা হিসেবে সময় পেলে বই পড়ি, বিদেশী বই অনুবাদ করি ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ লিখে প্রচার করি। ১৯৯০ সালেই চট্টগ্রাম ইপিজেড’এ কম্পিউটার প্রোগ্রামার সহকারী হিসেবে একটি আমেরিকান কোম্পানিতে যোগ দেই এবং ১৯৯২ সালে প্লানিং অফিসার, ১৯৯৩ সালে মার্সেন্টাইজার পদে থেকে চাকুরী ইস্তফা দিয়ে প্রবাসে পাড়ি দেই। আমার মূল কাজ হল কম্পিউটারে ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং তৈরি করা। প্রবাসে ১০ বছর ইলেকট্রিক্যাল ফিল্ডে, ১০ বছর মেকানিক্যাল ফিল্ড ও ৮ বছর পাইপিং ফিল্ডের সাথে জড়িত হবার কারণে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করি। সেটার পিছনেও কৌতূহল কার্যকর ছিল। ওসব ফিল্ডে যাদের দক্ষতা আছে তারা কো-অর্ডিনেটর হিসেবে জটিল কাজের আঞ্জাম দিতে পারে। আমিও বর্তমানে তাই করছি। যদিও এ ধরনের কাজ আমাদের দেশে এখনও দেখা যায় না।
আমার ডাকনাম টিপু। মহীশুরের সম্রাট টিপু’র এই নামটি ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্রই খুবই প্রসিদ্ধ। ফলে নামটি মুখস্থ রাখা ও উচ্চারণ করা সহজ। প্রবাসে বাঙ্গালীরা তো বটেই, ভারতীয়, পাকিস্তানী, অন্যদের মুখে শোনে শোনে আরবি ও গ্রীকেরাও ‘টিপুভাই’ বলে সম্বোধন করে থাকে। মুখস্থ রাখা ও পরিচিতির সুবিধার কথা মাথায় রেখে আমার ওয়েব সাইটটিকে www.tipuvai.com (টিপুভাই ডট কম) হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।